নাটোরের লালপুরে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। বিষয়গুলো তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা, পুলিশ প্রধান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তা আবেদ আলী নাটোরের লালপুর উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়নের গোধড়া গ্রামের মৃত শাহাদত আলী মোল্লার ছেলে। তিনি ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক হিসেবে ২০২২ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন।
বিভিন্ন দপ্তরে এলাকাবাসীর পাঠানো আবেদনগুলোতে বলা হয়, স্থানীয় রাজাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক আবেদ আলী শিক্ষকতা শুরুর কয়েকদিন পর পুলিশের সার্জেন্ট হিসেবে যোগদান করেন।
তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের সুপারিশে তিনি ঢাকা মহানগরে বদলি হন। সেখান থেকেই তিনি অবৈধ টাকা উপার্জন শুরু করেন। নাটোর ১ আসনের সাবেক প্রায় প্রতিটি সংসদ সদ্যসের সঙ্গেই তিনি নিজের সুবিধার জন্য সখ্যতা গড়ে তোলেন। এই সখ্যতাকে পুঁজি করে চালিয়ে যান অবৈধ উপার্জন,এছাড়া বনপাড়ার বাবু সত্যেন নামের এক আওয়ামীলীগের নেতা তার বাল্য বন্ধু হবার সুবাদে সকল ধরনের অর্থনৈতিক কারবার সত্যেন কে দিয়ে ছায়ার মতো সেরে নিতেন আবেদ আলী। এলাকার গোধড়া মৌজায় নিজের নামে এবং স্ত্রী সন্তানদের নামে ৫ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন আঠারো বিঘা জমি। স্থানীয় কদিমচিলান, ধলা, দাইড়পাড়া, গুনাইহাটি, মানিকপুর, ধানইদহ ও চাঁদপুর মৌজায় কিনেছেন প্রায় ৫০বিঘা জমি। বনপাড়া শহরের মিশন স্কুলের পাশে ৫কাঠার প্লট, বনপাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পূর্ব পাশে তিন বিঘা জমি, হিরামন সিনেমা হলের পাশে আফতাবের বাড়ি সংলগ্ন ১০ কাঠার প্লট, মেহেগনী বাগান, মহিষভাঙ্গা মৌজায় জনৈক অশিত পালের দেড় বিঘা জমি কিনেছে। সরকারকে কর ফাঁকি দিতে এসব প্রতিটি জমি খুবই কমদাম দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করেছেন।
পৈত্রিক বাড়ি ছাড়াও বনপাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পিছনে দুটি ও হিরামন সিনেমা হলের পাশে আফতাবের বাড়ি সংলগ্ন একটিসহ তার মোট ৫টি বাড়ি ও ঢাকার মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাট রয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
এলাকায় নিজের অবস্থান মজবুত করতে যেকোন মসজিদ মাদ্রাসায় দানের পাশাপাশি তিনি যে কোনো নির্বাচন আসলে এলাকার প্রভাবশালী প্রার্থীদের পোস্টার ছাপিয়ে দেওয়াসহ নানাভাবে অর্থ সহযোগীতা করে আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।
প্রধান উপদেষ্টা, পুলিশ প্রধান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগকারীরা আবেদ আলী ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্য এবং স্বজনদের সব ব্যাংক হিসাব অনুসন্ধানের পাশাপাশি তার সব আয়ের বৈধতা যাচাই করে তাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
এসব বিষয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বললে তারাও এই পুলিশ কর্মকর্তার বিপুল সম্পদ ও বাড়ি গাড়ি থাকার অভিযোগ করেন। এসব সম্পদের তথ্য নিতে গেলে সাবেক পুলিশ পরিদর্শকের পুত্র তানভির আহাম্মেদ অন্তর রূপালী বাংলাদেশ প্রতিবেদককে গুম হত্যার হুমকি প্রদান করেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আবেদ আলী দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ প্রতিবেদককে বলেছেন, তার এত বাড়ি, জমি ও সহায় সম্পদ থাকার যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। সারাজীবন চাকরির বেতনের টাকায় তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে ৫-৭ বিঘা জমি কিনেছেন। শান্তিরক্ষা মিশন থেকে অর্জন করা টাকায় বাড়ি করেছেন। পৈত্রিক সূত্রে কয়েক বিঘা জমি পেয়েছেন। নিজের জমি বিক্রি করে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাসের জন্য একটি ঠিকানা গড়ে তুলেছেন মাত্র।
আপনার মতামত লিখুন :