বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে জিয়া মন্ডল প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে অন্যের মতৃ গরু নিয়ে এসে নিজ ঝুপড়ি ঘরে আগুন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ৩ নভেম্বর দিবাগত রাতে উপজেলার বোহাইল ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড শংকরপুর চর এলাকার মৃত বাদশা মন্ডলের ছেলে জিয়া মন্ডলের বাড়িতে। জাহেরুল মন্ডল গংদের বিরুদ্ধে জিয়া মন্ডল থানায় একটি অভিযোগ করেন।
এলাকাবাসী জানান, উপজেলার বোহাইল ইউনিয়নের শংকরপুর ৩নং ওয়ার্ডের সাত্তার আকন্দের ছেলে সামিউল আকন্দের গাভী গরু মারা গেলে মোকামতলা তাদের জমির পাশের একটি ঝাউ গাছের মধ্যে ডোবার উপরে ঘোড়ার গাড়ী যোগে ফেলে দিয়ে যায়। পরের দিন তারা জমিতে কাজ করতে আসলে মৃত গরুটির আর কোন চিহ্ন খুঁজে পাননি ।পরে বিষয়টি স্থানীয় গ্রাম বাসীদের মাঝে ছড়িয়ে পরে। অপরদিকে গত ৩/১১/২৪ইং তারিখ রবিবার রাতে জিয়া মন্ডলের সদ্য তোলা একটি ঝুঁপড়ি (ছাপড়া) ঘরে আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পরে। সেখানে স্থানীয়রা যাওয়ার পর একটি গাভীসহ একটি ঝুঁপড়ি ঘড় পুড়া দেখতে পান। এলাকাবাসী আগুনে পোড়া গাভীটির শিং এবং সামিউল আকন্দের মৃত গাভীর শিং একই রকম হওয়ায় নানা রকম আলোচনা সমলোচনা সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসীর ধারণা জিয়া মন্ডল জমি নিয়ে বিরোধের জেরের কারনে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে রাতের অন্ধকারে মরা গাভী গরু নিজ বাড়িতে নিয়ে এসে কয়েকটি টিন দিয়ে একটি ছাপড়া ঘর তুলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটান। এলাকাবাসী আরো জানান, জিয়া মন্ডল বোহাইল ইউনিয়ন আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের ৪নং ওয়ার্ডের সভাপতি। সেসময় কারো সাহস ছিলনা তার বিরুদ্ধে কথা বলার।
এ ব্যাপারে বোহাইল ইউনিয়নের শংকরপুর ৩ নং ওয়ার্ডের ছাত্তার আকন্দের ছেলে মৃত গরুর মালিক সামিউল আকন্দ ও তার ভাই জহুরুল আকন্দ বলেন, গরুটি মারা গেলে আমার বড় ও ছোট ভাইদের সহযোগিতায় ঘোড়া গাড়ি দিয়ে মোকামতলা আমাদের জমির পাশে ঝাউ গাছের শুকনো ডোবার মধ্যে ফেলে দেই।পরেরদিন জমিতে গিয়ে দেখি ফেলে দেয়ার স্থানের গরুটির কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মৃত গরুটি কেবা কাহারা ঘোড়া গারি যোগে গরুটি নিয়ে গেছে । সেখানে ঘোড়া গাড়ির চাকার চিহ্ন পাওয়া যায়। মৃত গরুটি যদি কেউ না গিয়ে থাকতো তাহলে শিয়াল, কুকুরে খেতো। গরুটির অবশ্যই হার এবং অন্যান্য অংশ থাকতো। কিন্তু এখানে কিচ্ছুই নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সংকরপুর গ্রামের সামিউলের মৃত গরু তার জমির পাশে ডোবার উপরে ফেলে আসার স্থানে কোন মৃত গরুর কোন অংশ পাওয়া যায়নি। অপর দিকে সংকরপুর গ্রামের জিয়া মন্ডলের বাড়িতে গাভীর রাতে ছাপড়া ঘরে অগ্নিকাণ্ডে একটি গাভি মারা যায়। ঝুপড়ি ঘরের কোনার মেঝেতে জীবিত ঘাস পাওয়া যায়। মেঝের কোন অংশে গরুর গোবর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় মোবারক প্রামাণিক বলেন, জমিজমা সংক্রান্তির বিরোধীর জেরে আগের মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে এবং আমাদের ফাঁসানোর জন্য অন্যের ফেলে দেয়া মরা গরু জিয়া মন্ডল রাতের অন্ধকারে তার নিজ বাড়িতে নিয়ে এসে কয়েকটি টিন ও বাঁশ দিয়ে ছাপড়া ঘর তৈরি করে তার মধ্যে মরা গরু রেখে আগুন লাগায়। ঘটনাটি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনের কাছে বিনীত ভাবে অনুরোধ করছি।
এ ব্যাপারে জিয়া মন্ডলের স্ত্রী আরজিনা বলেন, অনুমানিক রাত দুইটা থেকে আড়াই টায় জাগনা পেয়ে দেখি আগুন জলতিছে চিল্লাচিল্লি করে এলাকাবাসীকে ডাকি। গরু বাছুর ছুটে বের হয়ে গেছে । ৪টি গরু ছুটে গেলেও পরে দেখি একটা গাভি গরু পুরে মারা গেছে। এতে আমার ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মত ক্ষতি হয়েছে।
জিয়া মন্ডলের সাথে এব্যাপারে কথা বললে, তিনি উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, প্রয়োজন হলে প্রশাসন মরা গরু তুলে ডিএনএ পরীক্ষা করবে। বেটা হচ্ছে জেলখানায় আমি হয়েছিল দুর্বল। পার্শ্ববর্তী বসতিরা আগুন লাগার এবং আগুন নেভাতে কেউ চেষ্টা করেছিলো কিনা এবিষয়ে কেউ কথা বলতে চাননি ।
বোহাইল ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার রেজাউল করিম বলেন, এখানে তাদের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ আছে দীর্ঘদিন ধরে। সে একটা মৃত গরু নিয়ে তার ঘরের মধ্যে দিয়ে তার ঘর জ্বালায়ে দিয়ে এই সাধারণ মানুষকে অত্যাচার করার কোন মানে হয় না। এটা সমাজের ঘৃন্নিত অপরাধ। এ অপরাধীকে দমন করার জন্য প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠু প্রতিকার চাই।
এ ব্যাপারে সারিয়াকান্দি থানা অফিসার ইনচার্জ জামিরুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনার স্থলে একজন অফিসারকে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :