সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) কার্যক্রম চালছে একাধিক মামলার দাগি আসামির ব্যক্তিগত অফিসে। তিনি আবার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বরখাস্ত হওয়া কাউন্সিলর। সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে। হাসিনা সরকারের দোসর হিসেবে তার পরিচিতি ছিল শহরজুড়ে। তার নাম এস এম তৌহিদ আমিন শওকত। তার দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হলেও এমনকি পুরো সিসিক ভেঙে গেলেও তিনি রয়ে গেছেন আগের জায়গায়, ক্ষমতার কেন্দ্রে। তার ব্যক্তিগত অফিসে সিসিকের কার্যক্রম চালানোর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা অমান্য করা হচ্ছে। সিলেটে বরখাস্ত হওয়া আর কোনো কাউন্সিলর এমনটি করতে না পারলেও একাধিক মামলার দাগি আসামি হয়েও রহস্যজনক কারণে তিনি পারছেন।
এ নিয়ে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডসহ পুরো সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। তবে এই ওয়ার্ডে সিসিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গৃহায়ন অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন বিষয়টি অস্বীকার করেন। বলেন, অভিযোগটি সঠিক নয়। এই ওয়ার্ডের কার্যক্রম আমার গৃহায়ন অফিস কার্যালয় থেকেই পরিচালনা করি। এ ছাড়া এই ওয়ার্ডে একটি নতুন অফিস নেওয়া হয়েছে। নতুন অফিসে সিসিকের সব সেবা পাওয়া যাবে।
তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অস্বীকার করলেও ওয়ার্ডের বাসিন্দারা দাবি করেন, এখনো এই অফিসটি খোলা রয়েছে। তবে কেউ কেউ বলছেন, তৌহিদ নিজ থেকে সিসিকের কয়েকটি সেবা প্রাপ্তির জন্য এ অফিস থেকে সহায়তা করে থাকেন। পূর্বে কাউন্সিলর ছিলেন বলে অনেকে তার কাছে সেবা নিতে চলে আসেন।
এ নিয়ে অবশ্য ওয়ার্ডবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন, বিগত আমলে দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কার্যক্রলাপ, ভূমি দখল, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছেন এই তৌহিদ। দুইবার ভোটারবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে পাস করে কাউন্সিলর হয়েছেন। সেই তার অফিসে কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে সিসিকের কার্যক্রম? প্রশ্ন তাদের। এটি বৈষম্যবিরোধী চেতনার পরিপন্থি।
তারা জানান, স্বৈরাচারের দোসর আওয়ামী লীগ নেতা তৌহিদ এখনো অফিস পরিচালনা করছেন। নিয়মিত অফিসেও বসেন। তার অফিস থেকেই সিসিকের অনেক কাজ করিয়ে দেওয়া হয়। ওয়ার্ডের অনেকে সিসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কাছে না গিয়ে তার অফিসে এসে সিসিকের নানা সেবা নিয়ে থাকেন!
সূত্র জানায়, তৌহিদের বিরুদ্ধে থানায় অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। যার বেশির ভাগই ৫ আগস্টের পরে করা। ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে হামলা করা এবং বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে মামলাগুলো দায়ের করা হয়। গত এক দশক আওয়ামী লীগ নেতা তৌহিদ ওয়ার্ডবাসীর ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছেন। লুটপাট করে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছেন তিনি।
মিতালি এলাকার মাসুক আহমেদ বলেন, এই দুর্নীতিবাজের অফিস যদি আইন অমান্য করে সিসিককে এভাবে ব্যবহার করে, তাহলে ওয়ার্ডবাসী আন্দোলন গড়ে তুলবে। এসব বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা তৌহিদের বক্তব্য জানতে চাইলে তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
আপনার মতামত লিখুন :