চাচা-চাচিকে পিতা-মাতা সাজিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি পান কামাল হোসেন। অভিযুক্ত কামাল হোসেন বর্তমানে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ বাদী হয়ে মামলা করেন সংস্থাটির উপ-সহকারী পরিচালক মো. মনজুরুল ইসলাম মিন্টু।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং চাকরি লাভসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেতে জন্মদাতা পিতা মো. আবুল কাশেম ও গর্ভধারিণী মা মোছা. হাবীয়া খাতুনের পরিবর্তে আপন চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান হাবীব এবং চাচি মোছা. সানোয়ারা খাতুনকে পিতা-মাতা সাজান। এর মাধ্যমে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে চরম প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি নেন। আসামির বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪২০/ ৪৬৭/ ৪৬৮/ ৪৭১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়, মো. কামাল হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সিরাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি এবং ফিলিপনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নকালে পিতার নাম হিসেবে তার প্রকৃত জন্মদাতা মো. আবুল কাশেমের নাম ব্যবহার করেন। তবে পরবর্তী সময়ে একই স্কুলে ৯ম শ্রেণিতে তিনি তার আপন চাচা মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান হাবীব এবং চাচি সানোয়ারা খাতুনকে পিতা-মাতা সাজিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। এরপর এসএসসি, এইচএসসিসহ বিভিন্ন উচ্চতর ডিগ্রি পরীক্ষায় চাচা-চাচির নামই পিতা-মাতার নাম হিসেবে ব্যবহার করেন। এছাড়া প্রতারণার মাধ্যমে মো. কামাল হোসেন তার জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রকৃত পিতা-মাতার পরিবর্তে চাচা-চাচির নামই ব্যবহার করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, মো. কামাল হোসেনের জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে পিতা-মাতার নামের জায়গায় চাচা-চাচির নাম উল্লেখ রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং চাকরি লাভসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগের উদ্দেশ্যে তিনি আপন চাচা-চাচিকে পিতা-মাতা সাজিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে চরম প্রতারণা করেছেন। তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি নেন।
এ বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারী (বৃহস্পতিবার) এই বিষয়ে দৌলতপুরে সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে কুষ্টিয়ার সাংবাদিকরা বাঁধার মুখে পড়েন এবং তাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। ঐ হামলার শিকার হয় তিন সাংবাদিক। আহতরা হলেন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর কুষ্টিয়ার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার শরীফ উদ্দিন বিশ্বাস (৪৪), ক্যামেরাপার্সন এস আই সুমন (৩৮) ও তাদের সহযোগি আহসান হাবিব বিদ্যুৎ (২৬) গুরুতর আহত হন।
একই দিন রাতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানায় আহত সাংবাদিকদের পক্ষে সাংবাদিক শরীফ বিশ্বাস বাদী হয়ে হামলায় জড়িত ৫ জনের নাম উল্লেখসহ ৮/১০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন যার নং-৩০। মামলা দায়ের পর দৌলতপুর পুলিশ সিরাজনগর গ্রামে অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহার নামীয় দুই আসামী আহসানুল্লাহ লালুর ছেলে শিপন (৩৬) ও মোসতাকের ছেলে মো. মঞ্জু (৩৫) কে গ্রেফতার করে।
হামলার শিকার সাংবাদিক আহসান হাবিব বিদ্যুৎ বলেন, তার অপকর্ম ঢাকতে তিনি এলাকায় পেটুয়া বাহিনী পুষে রাখেন। সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের উপরেও হামলা করে। অবশেষ দুদকে মামলা হওয়া আমরা ন্যায় বিচার পাব বলে আশা করি।
চ্যানেল টোয়েন্টিফোর কুষ্টিয়ার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার শরীফ উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, তিনি যেভাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটার অপব্যবহার করেছেন তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। আমি ও আমার সহকর্মিরা সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছিলাম। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই জালিয়াতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ায় সবার পক্ষ থেকে আমি কৃতজ্ঞ। আশা করি দুদক’র অনুসন্ধানে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে এবং আমরা ন্যায় বিচার পাবো।
আপনার মতামত লিখুন :