বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় অবস্থিত দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান ‘কেরু এন্ড কোম্পানী’র সুগার মিল। ব্রিটিশ নাগরিক রবাট রাসেল কেরু ১৯৩৮ সালে দর্শনায় তার নাম করনে কেরু এন্ড কোম্পানী নামে এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপন করেন। সে সময় এর অধীনে একটি চিনি কারখানা, একটি ডিষ্টিলারী ইউনিট ও একটি ওষুধ কারখানা যাত্রা শুরু করে।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার এই প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করে।
এই বৃহদায়তন শিল্প-কমপ্লেক্সটি চিনি কারখানা, ডিষ্টিলারি ওয়াটার, বাণিজ্যিক খামার ও জৈব সারকারখানার সমন্বয়ে গঠিত। এর জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৫৭২ একর। যার ২ হাজার ৪৫০ একর কৃষিজমি। এসব কৃষিজমিতে আখ চাষ করা হয়।
প্রতিষ্ঠার সময় কেরু এ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিঃ এর দৈনিক আখ মাড়াই ক্ষমতা ছিল ১০১৬ মেট্রিক টন। জাতীয়করণের পরে ১৯৭৮-৮৫ সাল এই সময়ে অস্ট্রেলীয় কারিগরি সহযোগিতায় এর দৈনিক আখ মাড়াই ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৫০ মেট্রিক টন এবং চিনি উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি অর্থবছরে ১১৫০ মেট্রিকটনে উন্নতি হয়।
২০২২-২৩ অর্থবছরে কেরু এ্যান্ড কোম্পানি ৫৭ লাখ ৭৩ হাজার প্রুফ লিটার মদ বিক্রি করে এবং আয় হয় প্রায় ৪৩৯ কোটি টাকা। এতে করে কোম্পানিটির নিট-মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৩ কোটি টাকা বেশি।
বর্তমানে কোম্পানিটির মূল পণ্য হচ্ছে আখ থেকে উৎপাদিত চিনি। তবে আখ থেকে চিনি বের করে নেওয়ার পর যে উপজাত-দ্রব্য চিটাগুড়, ব্যাগাস ও প্রেসমাড পাওয়া যায় তা থেকেও বিভিন্ন পণ্য উৎপাদিত হয়। উপজাত দ্রব্য হতে উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে উলেখযোগ্য হচ্ছে দেশি মদ, বিদেশি মদ, ভিনেগার, স্পিরিট ও জৈব সার। কোম্পানিটিতে নয়টি ব্র্যান্ডের ‘ফরেন লিকার’ বা বিদেশি মদ তৈরি হয়। ফরেন লিকারগুলো হচ্ছে ইয়েলো লেভেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইমপেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ ক্রেকাউট, সারিনা ভদকা, রোজা রাম ও ওল্ড রাম।
কেরুর উৎপাদিত ফরেন লিকার ঢাকা, চট্রগাম ও দর্শনায় কেরুর নিজস্ব বিক্রয় কেন্দ্র থেকে ১৮০, ৩৭৫ ও ৭৫০ মিঃলিঃ লিটারের বোতলে বাজারজাত করা হয়। বছরে প্রায় ৩৯ লাখ ২০ হাজার বোতল ফরেন লিকার উৎপাদিত হয় এবং বাংলা মদের বার্ষিক উৎপাদন হয় প্রায় ২৬ লাখ লিটার। যা দেশের ১৩টি বিক্রয় কেন্দ্র হতে বাজারজাত করা হয়।
এছাড়া ২০১৪ সাল থেকে কেরু কোম্পানীর নিজস্ব কৃষি খামারে ‘কেরুজ জৈব সার’ উৎপাদন শুরু হয়েছে। যার উৎপাদন ক্ষমতা ৭ হাজার মেট্রিক টন। কেরুর নিজস্ব ডিলারের মাধ্যমে প্রতি কেজি সার ১০ টাকা দরে বাজারে বিক্রয় করা হয় ।
বাংলাদেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে একমাত্র ‘কেরু এ্যান্ড কোম্পানি’কে লোকসান গুনতে হয় না। এর লাভের প্রায় সম্পূর্ণটাই আসে এখানকার ডিস্টিলারি ইউনিট থেকে। টানা পাঁচ বছর ৬০ কোটি টাকা করে লাভ করছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
আপনার মতামত লিখুন :