ভোলা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে ৪টি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও অসহায় গরীব রোগীরা পাচ্ছেনা অ্যাম্বুলেন্স সেবা। রোগীদের বাড়তি ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে ঢাকায়। হাসপাতালে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, নেতাকর্মীরা মিলে হাসপাতালকে অ্যাম্বুলেন্স এর ব্যবসা কেন্দ্র বানিয়ে ফেলেছে। প্রতিদিন হাসপাতাল ভবনের সামনে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫টি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স রাখা থাকে।
হাসপাতাল এখন অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজ খানায় পরিণত হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় চলছে এসব নৈরাজ্য। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা রোগীদের সেবার চেয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসায় বেশি মনোযোগী। প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের সাথে হাত মিলিয়ে সদর হাসপাতালের চালকরা সিন্ডিকেট তৈরি করে অ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্যে একক আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। সদর হাসপাতালে আশা রোগীরা চালক এবং তাদের পরিচালিত দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে এ্যাম্বুলেন্স বের হলেই চালকদের সিন্ডিকেট সদস্যদের দিতে হয় গাড়ি প্রতি মোটা অংকের টাকা। রোগীদের সেবার নামে চলছে নৈরাজ্য। সরকারি ৪টি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও বেশিরভাগ হাসপাতালের অফিশিয়াল কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। রোগীদের সেবায় লাগে না কোন কাজে। ডাক্তার কর্মকর্তা-কর্মচারী চালক এদের নামে-বেনামে স্ত্রী আত্মীয়-স্বজনদের নাম করে হাসপাতালের আশেপাশে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে ক্লিনিক। কিছু অসাধু ডাক্তার হাসপাতালে আসা রোগীদের তড়িঘড়ি করে সেবা দিয়ে, ক্লিনিকে গিয়ে বাণিজ্যিকভাবে রোগী দেখায় থাকে ব্যস্ত। হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের সূযোগে কিছু অসাধু চক্র সিন্ডিকেট তৈরি করে হাসপাতালকে বানিয়ে ফেলেছে ব্যবসা কেন্দ্র। কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী হাসপাতালকে ব্যবহার করে তারা গড়ে তুলেছে এই শহরে বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি অট্টালিকা। তাদের ছেলে মেয়ে ঢাকায় রেখে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারে পড়াচ্ছেন। ডাক্তার দালালরা সিন্ডিকেট তৈরি করে রোগীদের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ক্লিনিকে। চালকরা হাসপাতালের রোগীদের সেবায় ২৪ ঘন্টা থাকার কথা থাকলেও তাদেরকে রোগীরা প্রয়োজনীয় সময় পায়না।
বোরহানউদ্দিন থেকে আসা এক রোগীর অভিভাবক এডভোকেট মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস গণমাধ্যমকে জানান, গত ২২ নভেম্বর বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার কেরামতগঞ্জ এলাকায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত আমার আত্মীয় দূরন্তকে নিয়ে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলে ডাক্তার রোগীকে দ্রুত ঢাকা নেওয়ার পরামর্শ দেন। তখন ওই মুহূর্তে ঢাকা নিতে এ্যাম্বুলেন্স লাগবে। একথা বলতেই ওই দিন সন্ধ্যায় আশেপাশে থাকা দালাল সদর হাসপাতালে গেটের সামনে ব্যক্তিগত এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাজির হন। সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত ভাড়া চাইছেন ১৮ হাজার টাকা। তিনি ওই ভাড়া দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বোরহানউদ্দিন উপজেলা থেকে ১২ হাজার টাকায় এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেন। এ সময় এ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট চক্রের এক সদস্য পথিমধ্যে বাংলাবাজার এলাকায় বাধা দেয়। বিষয়টি রোগীর অভিভাবক ভোলা সদর মডেল থানার ওসিকে জানালে ওসি আবু সাহাদাৎ মো. হাচনাইন পারভেজ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলা সদর মডেল থানার ওসি আবু সাহাদাৎ মো. হাচনাইন পারভেজ বলেন, রোগীর অভিভাবক আমাকে জানানোর পর আমি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এদিকে এ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম বন্ধে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ভোলার জেলা প্রশাসক বরাবর ও পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন রোগীর অভিভাবক এডভোকেট মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস।
এ বিষয়ে ভোলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, লিখিত আবেদন পেয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে ভোলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু আহাম্মদ শাফিকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে, সিভিল সার্জন ডা. মনিরুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমি এর আগে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক থাকাকালীন সকল বেসরকারি এ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়েছিলাম। এখন আবার সেগুলো অবস্থান করে নৈরাজ্য করছে।
হাসপাতালের বেসরকারি এ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি মিলন বলেন, ভোলা থেকে ঢাকায় আমরা ১৮ হাজার টাকাই নেই। তবে, সিন্ডিকেটের সাথে আমি জড়িত নই।
আপনার মতামত লিখুন :