মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফ আসার পথে নাফ নদীর মোহনায় পণ্যবাহী দুটি কার্গো ট্রলার আটকে রেখেছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। ট্রলার দুটি ইয়াঙ্গুন থেকে নাফ নদী হয়ে টেকনাফের স্থল বন্দরে আসার কথা।
সুত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ১৬ জানুয়ারি আটক করার পর এখনও ট্রলার দুটি ছাড়েনি তারা। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার নাফ নদের জলসীমা নাইক্ষ্যংদিয়ায় তল্লাশির কথা বলে পণ্যবাহী নৌযান দুটি আটকে দেয় আরাকান আর্মি।
গত ৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নেয় দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। সর্বশেষ ৫ নম্বর সীমান্ত ব্যাটালিয়নটিও দখলে নেয় তারা। এরপর থেকে কোনও পণ্যবাহী জাহাজ মিয়ানমার থেকে টেকনাফে আসেনি। সর্বশেষ ইয়াঙ্গুন থেকে গত ৩ ডিসেম্বর টেকনাফে পণ্যবাহী জাহাজ এসেছিল।
এসব তথ্য জানিয়েছেন টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পণ্যবাহী তিনটি কার্গো টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার কথা ছিল আজ। কিন্তু নাফ নদের মোহনায় তল্লাশির কথা বলে দুটি কার্গো আটকে দেয় আরাকান আর্মি। ফলে পেছনে থাকা একটি কার্গো সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়ে নোঙর করেছে। বাকি দুটির এখন পর্যন্ত কোনও খবর পাইনি। তবে আরাকান আর্মি শুক্রবার সকালে সেগুলো ছেড়ে দিতে পারে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের প্রভাবে টেকনাফ স্থলবন্দর প্রায় অচল।মিয়ানমার থেকে কোন ধরনের মালামাল না আসায় সকল ব্যবসায়ী ও কর্মচারী বেকার অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন বলে জানান বন্দর ব্যবসায়ীরা। সর্বশেষ ১ মাসেরও বেশি সময়ের পর ইয়াঙ্গুন থেকে পণ্যবাহী তিনটি কার্গো টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে নাফ নদের মোহনায় সেদেশের জলসীমার নাইক্ষ্যংদিয়ায় তল্লাশির কথা বলে দুটি কার্গো আটকে দেয় আরাকান আর্মি। এই খবরে অন্য কার্গোটি সেন্টমার্টিন দ্বীপে নৌঙর করে। আটকে রাখা দুটি কার্গোতে ৩০ হাজারের বেশি বস্তা পণ্য রয়েছে। এর মধ্যে আচার, শুঁটকি ও সুপারিসহ বিভিন্ন মালামাল আছে। এগুলোর আমদানিকারক শওকত আলী, ওফর ফারুক, মো. আয়াছ, এম এ হাসেম, মো. ওমর ওয়াহিদসহ কয়েকজন।
মূলত আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্যবাহী নৌযান আসা বন্ধ রয়েছে বলেও একাধিক ব্যবসায়ী জানান।
তারা বলছেন, প্রায় দেড় মাস পর ইয়াঙ্গুন থেকে আমরা কয়েকজন পণ্য আমদানি করেছি। সেগুলো আসার পথে আটকে দিয়েছে আরাকান আর্মি। এখনও পণ্যবাহী কার্গো দুটি তাদের হেফাজতে। সেখানে আচার, শুঁটকি ও সুপারিসহ বিভিন্ন পণ্যের ৩০ হাজার বস্তা আছে।
তারা আরও বলেন, গত কয়েক মাস ধরে বন্দরের ব্যবসায় ধস নেমেছে। এতে সরকারও রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারের উচিত সীমান্ত বাণিজ্য সচল করতে মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলে টেকসই সমাধানের পথ বের করা। না হলে ব্যবসায়ীরা টেকনাফ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
টেকনাফ স্থলবন্দর সিএন্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে পণ্যবাহী বা কার্গো ট্রলার ও জাহাজ চলাচল করতে পারছে না। এতে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। মিয়ানমারের মংডুর সঙ্গে আমদানি ও রফতানি-দুটিই বন্ধ। তবে মাঝেমধ্যে আকিয়াব ও ইয়াঙ্গুন থেকে থেমে থেমে পণ্য আমদানি অল্প পরিসরে হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন আমদানি-রফতানিকারকরা।
সবশেষ মিয়ানমার থেকে তিনটি পণ্যবাহী কার্গো বোট টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার কথা ছিল আজ। কিন্তু নাফ নদের মাঝপথে কার্গো বোটগুলো তল্লাশির কথা বলে আটকে দেয় আরাকান আর্মি। এখনও বোটগুলোর খবর পাইনি আমরা।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে মিয়ানমারের জলসীমায় পণ্যবাহী কার্গো বোটে তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে কেউ এখনও আমাদের কিছুই জানায়নি। তা ছাড়া এটি আমাদের জলসীমানার বাইরে। এ বিষয়ে নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :