ঢাকা রবিবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৪

বাসাইলে সালিশি বৈঠকে হামলা, আহত ৪

বাসাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৪, ১০:০৮ পিএম

বাসাইলে সালিশি বৈঠকে হামলা, আহত ৪

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

টাঙ্গাইলের বাসাইলে চুরি সংক্রান্তের জের ধরে সালিশি বৈঠকে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত চারজন।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকেলে বাসাইল পৌরসভার ব্রাহ্মণপাড়িল এলাকার একটি খেলার মাঠে সালিশি বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে। এরআগে চোর সন্দেহে তিনজনকে পিকআপভ্যানে করে তুলে নিয়ে হিন্দি গান বাজিয়ে নাচানোর ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর জাকির হোসেন শনিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেন।

সালিশি বৈঠকে হামলায় আহতরা হলেন-বাসাইল পূর্বপাড়া এলাকার জহির খানের ছেলে ওহাব খান (৪৫) ও তার ভাই রউফ খান (৫০), ওহাব খানের স্ত্রী বিউটি বেগম (৩৫), পৌরসভার ব্রাহ্মণপাড়িল এলাকার আলী আকবরের ছেলে মজনু মিয়া (১৮)। এদের মধ্যে তিনজন বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

জানা গেছে, গত ২৩ অক্টোবর বাসাইল পৌরসভার সিংবাড়ী এলাকার রফিকুলের নির্মাণাধীন ভবন থেকে চারটি প্লেনসিট চুরি হয়। পরে সন্দেহভাজন হিসেবে ব্রাহ্মণপাড়িল এলাকার শাহীন, ফয়সাল, মজনু ও সখীপুর উপজেলার পাথার গ্রামের শরিফের নাম ওঠে আসে।

এরপর গত ৩১ অক্টোবর রাত ১০ টার দিকে একদল যুবক শাহীন, ফয়সাল ও শরিফকে একটি পিকআপভ্যানে করে তুলে নিয়ে যায়। সেখানে পিকআপভ্যানের মধ্যেই দুইজনকে গানের তালে নাচানো হয়। পরে ওইদিন রাত ১২টার দিকে তাদের তিনজনকে স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর জাকিরের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরআগে একইদিন রাতে স্থানীয় একটি বাগানে নিয়ে তাদেরকে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে চুরির সাথে স্থানীয় রিফাতের সম্পৃক্ততার বিষয়টি ওঠে আসে। এনিয়ে চুরির সাথে মোট পাঁচজনের সম্পৃৃক্ততা থাকার বিষয়টি জানা যায়। পরে বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকেলে বাসাইল পৌরসভার ব্রাহ্মণপাড়িল এলাকার একটি খেলার মাঠে সালিশি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এসময় ঘটনার সাথে জড়িত পাঁচজনের মধ্যে চারজন উপস্থিত হয়। কিন্তু রিফাত নামের ওই যুবক ঢাকায় থাকায় সে সালিশে উপস্থিত ছিল না। সালিশের শেষ পর্যায়ে মাতব্বররা সন্দেহভাজন চোরদের মধ্যে চারজনের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেন। সালিশে রিফাত উপস্থিত না থাকায় তাকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রিফাতকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করায় তার পরিবার সিদ্ধান্তটি মেনে নেয়নি।

এসময় ক্ষিপ্ত হয়ে যুব, জনি, শুভ, লিমন, সাদিক, আশিক, আকাশ, আবির, মারুফসহ আরও কয়েকজনে মিলে সালিশে সাইকেলের চেইন ও বিদ্যুতের সার্ভিস তার নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় সন্দেহভাজন চোর রিফাতের বাবা ওহাব ও তার চাচা রউফ, সন্দেহভাজন চোর মজনুকে মারধর করে। এসময় ফেরাতে গিয়ে ওহাবের স্ত্রী বিউটি বেগমসহ স্থানীয় আরও কয়েকজন আহত হয়।

স্থানীয় কাউন্সিলর জাকির হোসেনসহ গন্যমাণ্য ব্যক্তিরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে আহত অবস্থায় ওহাব, রউফ ও মজনুকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

সালিশি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় আব্দুল হক। এসময় স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর জাকির হোসেন, স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর খলিলুর রহমান, সিরাজ মাস্টার ও আজিজুলসহ গন্যমাণ্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

আহত ওহাব খান বলেন, ‘আমার ছেলে রিফাত চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল না। রিফাত প্রায় এক মাস ধরে ঢাকায় রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে তাকে জড়ানো হয়েছে। সালিশে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। কিন্তু আমার ছেলে রিফাতকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সালিশে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে অতর্কিতভাবে সাইকেলের চেইন ও বিদ্যুতের সার্ভিস তার নিয়ে কয়েকজন যুবক হামলা চালায়। বিষয়টি নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

আহত মজনু বলেন, ‘একটি বিল্ডিং থেকে আমরা কয়েকজনে মিলে চারটি প্লেনসিট চুরি করেছি। পরে ভাঙারির দোকানে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। এলাকার অন্যান্য কোনো চুরির সাথে আমরা জড়িত নয়। এলাকায় বিভিন্ন সময় চুরির ঘটনার সাথে আমাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকারের জন্য কয়েকজন ব্যক্তি চাপ প্রয়োগ করে। গত ৩১ অক্টোবর রাত ১০ টাকার দিকে তিনজনকে ধরে নিয়ে একটি পিকআপভ্যানে করে পাথরঘাটা এলাকায় নিয়ে যায়।

সেখানে পিকআপভ্যানের মধ্যে দুইজনকে গানের তালে নাচানো হয়। সালিশে আমাদের চারজনকে ২০ হাজার টাকা করে ও রিফাতকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। চারটি প্লেনসিটের জন্য এত টাকা জরিমানা করায় প্রতিবাদ করলে কয়েকজনে মিলে আমাদের ওপর হামলা চালায়।’

স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর জাকির হোসেন বলেন, ‘সালিশি বৈঠকে হামলার ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত। তাদের ওপর হামলা করা ঠিক হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সময় আমিও আঘাত পেয়েছি।’

সালিশি বৈঠক পরিচালনা করা সিরাজ মাস্টার বলেন, ‘এলাকায় চুরির ঘটনায় সালিশি বৈঠকে বসা হয়। সেখানে ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে ২০ হাজার করে ও একজনকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বিচারের শেষ পর্যায়ে এসে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।’

বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

আরবি/জেডআর

Link copied!