ঢাকা বুধবার, ০১ জানুয়ারি, ২০২৫

চট্টগ্রামে দর্শক শূন্য বিপিএল মিউজিক কনসার্ট

জালালউদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪, ০৭:০৯ পিএম

চট্টগ্রামে দর্শক শূন্য বিপিএল মিউজিক কনসার্ট

রূপালী বাংলাদেশ

সারিসারি সাজানো নানা রঙের প্লাস্টিকের চেয়ার। ঝলমলে আলোর ফোয়ারা। মঞ্চে বাজছে মিউজিক ইনস্ট্রোমেন্ট। তালে তালে গাইছেন শিল্পিরাও। যার জন্য মাঠজুড়ে এতো আয়োজন সে মাঠ কিংবা গ্যালারির কোথাও ছিলো না আশানুরূপ দর্শক। লাল-নীল,সাদা-কালো চেয়ারগুলো শূন্য। শূন্য সুবিস্তীর্ণ গ্যালারিও।

দর্শক শূন্য মাঠে তারুণ্যের মিউজিক ফেস্ট বিপিএলের অব্যবস্থানার বাস্তব চিত্র বলেই মনে করছেন মাঠে আগত দর্শকরা। একই সাথে টিকেটের চড়ামূল্য এমএ আজিজ স্টেডিয়ামকে দর্শক শূন্য করেছে বলেও অভিযোগ মাঠে আগত অতিথিদের। দর্শক শূন্য মাঠে পারফরমেন্স করতে গিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন মঞ্চে গান করা শিল্পীরা। জনৈক শিল্পী গান গাইতে গিয়ে দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, মাঠ ঠাণ্ডা আপনারও ঠাণ্ডা।

শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ‘তারুণ্যের উৎসব’ নামে কনসার্টে বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এমন চিত্রই দেখা গেছে।

মাঠে আগত ফজলুল করিম নামে এক দর্শক এই প্রতিবেদককে জানান, এই ধরণের প্রোগ্রামগুলোতে সাধারণত অল্প বয়সি ছেলে-মেয়েরা অংশগ্রহণ করে। সে জন্যই এই আয়োজনের নাম দেওয়া হয়েছে তারুণ্যের উৎসব। কিন্তু আয়োজক কমিটি টিকেটের যে মূল্য নির্ধারণ করেছে তা অভিজাত শ্রেণির। যে কারণে দর্শকরা মাঠের বাহিরে ভীর করলেও টিকেট কেটে মাঠে ঢুকার মতো সামর্থ্য তাদের ছিলো না। তিনি আরও বলেন, এই ধরণের অনুষ্ঠানে সাধারণত টিকেটের মূল্য হওয়া উচিত ছিলো গ্যালারি ১০০ আর মাঠে ক্যাটাগরিতে ৩শ থেকে ৫শ। অথচ বিসিবি টিকেটের মূল্য নির্ধারণ করেছেন প্লাটিনাম ৪ হাজার টাকা, গোল্ড ক্যাটাগরি ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং গ্যালারির টিকিটের দাম রাখা হয় ৫০০ টাকা।

ফজলুল করিম উল্টো প্রশ্ন করে এই প্রতিবেদককে বলেন, ৪ হাজার, দেড় হাজার কিংবা ৫০০ টাকা মূল্যের টিকেট কিনে ওপেন কনসার্ট দেখার মতো সামর্থ কজন তরুণের আছে?

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, এই ধরণের বড় আয়োজনের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের ক্রিড়া সংগঠকদের যুক্ত করা উচিত। যা বিসিবি করেনি। তিনি আরও বলেন, প্রোগ্রামের আগে কোনো ধরণের প্রচারণা ছিল না। যে কারণে দর্শক খরাতে ভুগতে হয়েছে। 

মাঠে দর্শক কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন মিউজিক ফেস্টে আগত অতিথি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই ধরণের অনুষ্ঠান ‘ওপেন ফর অল’ হলে ভালো। দর্শকদের হতাশ না হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ৭ ফেব্রুয়ারি সিটি কর্পোরেশন সি-বিচে একটা কনসার্ট আয়োজন করবে। সেটা সবার জন্য উন্মুক্ত।

শুধু দর্শক টানাতেই সীমাবদ্ধ ছিলো না আয়োজক কমিটির অব্যবস্থাপনার চিত্র। সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে বিসিবির চরম অব্যবস্থাপনার চিত্র ছিলো মাঠ জুড়ে। তিনভাগে বিভিক্ত করে দেওয়া হয়েছিল সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার। সেজন্য মাঠেও সমালোচিত হয়েছিলেন কমিটি।

সরেজমিন দেখা গেছে, দুপুর আড়াইটায় গেট খুললেও বিকাল ৪টার পর থেকেই হাতো গোনার মতো কিছু দশর্ককে মাঠে ঢুকতে দেখা গেছে। বিকাল ৫টায় গেট বন্ধ করার কথা থাকলেও আশানুরূপ দর্শক না থাকায় সন্ধ্যার পরও গেট খোলা রাখেন আয়োজকরা।

কনসার্টে গান পরিবেশন করেন সঙ্গীতশিল্পী হাবিব ওয়াহিদ, ফুয়াদ অ্যান্ড ফ্রেন্ডস, মুজা, সঞ্জয় ও এভয়েডরাফা। মূলত রাত ৮টা থেকেই শুরু হয় গানের অনুষ্ঠান।

বিপিএলের প্রচারের লক্ষ্যে ঢাকা ও সিলেটে এমন কনসার্ট আয়োজন তুলনামূলক সফল হলেও চট্টগ্রামের কনসার্টটি সেভাবে দর্শক টানতে পারেনি। শেষ মুহূর্তে প্রবেশ উন্মুক্ত না করলে হয়তো হাতেগোনা দর্শক দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হতো বিসিবির আয়োজক কমিটিকে।

আরবি/এস

Link copied!