ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আগস্ট মাসের টিসিবির পণ্য এখনও আটকা গুদামে

বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪, ০৩:৫০ পিএম

আগস্ট মাসের টিসিবির পণ্য এখনও আটকা গুদামে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সেপ্টেম্বরে এসেও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবির) আগস্ট মাসের পণ্য বিতরণ হয়নি। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে খাদ্যগুদামে এক মাস ধরে পণ্য পড়ে থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রায় ১২ হাজার সুবিধাভোগী। পাশের উপজেলাগুলোতে বিতরণ হলেও বালিয়াডাঙ্গীতে পণ্য বিতরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

টিসিবির কয়েকজন ডিলারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিরাপত্তার অভাবে পণ্য বিতরণ করার সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা। এর আগে পণ্য বিতরণে যাঁদের সহযোগিতা নিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই এখন এলাকাছাড়া। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, আগামী সপ্তাহ থেকে টিসিবির পণ্য বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনা মহামারির পর ২০২২ সালে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় টিসিবির পণ্য প্রথম বিতরণ শুরু হয়। ওই সময় কর্মরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেনের সঙ্গে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা বড় পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মতিউর রহমান মতির সখ্য থাকায় টিসিবির সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি। টিসিবির ডিলার না হয়েও এলাকায় ‘টিসিবি মতি’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর।

মতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন টিসিবির স্থানীয় ডিলার বিশ্বনাথ সাহা। বাইরে থেকে আসা ডিলারদের সঙ্গে চুক্তি এবং অর্ধেক মালামাল বিক্রি করে ভাগ-বাঁটোয়ারা করতেন বিশ্বনাথ।

গত তিন বছরে টিসিবির মালামাল বিতরণে অনিয়মের সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ডিলারদের রদবদল করে মালামাল বিতরণ শুরু করে প্রশাসন। এরপর বাইরে থেকে আসা ডিলারদের ম্যানেজ করে ফেলেন মতিউর ও স্থানীয় ডিলার বিশ্বনাথ সাহা। তাঁদের ক্ষমতা আর সিন্ডিকেটের দাপটে অসহায় হয়ে পড়ে প্রশাসন।

বালিয়াডাঙ্গীতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিসিবির এক ডিলার বলেন, ‘উপজেলার বাইরে পণ্য বিতরণের শিডিউল হলে আমরা তাঁদের (মতি ও বিশ্বনাথ) মাধ্যমে সবকিছু বিতরণ করে নিতাম। আমরা তাঁদের টিসিবির পণ্য বিতরণ করে দিতাম। ইউনিয়ন পরিষদে মালামাল বিতরণের দিন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ম্যানেজ করাই স্থানীয় ডিলার ও সিন্ডিকেটের মূল কাজ।’

ভানোর ইউনিয়নের টিসিবির পণ্য পাওয়া কয়েকজন বলেন, আমাদের ইউনিয়নে টিসিবি‍‍`র পণ্য দিত ৫০০-৭০০ প্যাকেজ। আমাদের তালিকায় নাম থাকলেও শুধু ৩-৪ বার পেয়েছি। বাকি সময় টিসিবির মাল আনতে আসলে বলতো মাল আর নাই।

আমজানখোর ইউনিয়নের টিসিবির সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেড় হাজারের বেশি সুবিধাভোগী ইউনিয়নটিতে।টিসিবির পণ্য বিতরণ করতে ডিলার পণ্য নিয়ে আসা হতো বিকেলে। সন্ধ্যার পর বিতরণ শেষ করে চলে যেতেন। এতে সর্বোচ্চ ৫০০-৭০০ সুবিধাভোগী পণ্য নেওয়ার সুযোগ পেতেন। বাকিটা ভাগ-বাঁটোয়ারা করতেন জনপ্রতিনিধি ও সিন্ডিকেট। পণ্য বিতরণের আগের দিন মাইকিং করার নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ সময় মাইকিং করা হতো না।

আগস্ট মাসের বরাদ্দের টিসিবির পণ্য গুদামে এলেও বিতরণ না করার বিষয়ে কয়েকজন ডিলার জানান, মালামাল বিতরণ করতে সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা। দীর্ঘদিন ধরে যাঁদের সহযোগিতায় পণ্য বিতরণ করে আসছেন, ৫ আগস্টের পর তাঁরা সবাই পলাতক।

গত (৩০ শে জুলাই) ডিলার একরামুল হকের গুদাম ঘরে প্রায় ৫০০ লিটারের উপরের তেল, ৫০০ কেজির উপরে চাল ও সাড়ে ৩০০ কেজির উপরে মশুর ডাল উদ্ধার করে। অপরাধী তাঁর অপরাধ শিকার করায় তাঁকে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৮৮ ধারায় ১ মাসের সাজা দেয় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভূমি কর্মকর্তা আরাফাত হোসাইন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির ডিলার বিশ্বনাথ সাহা কথা বলতে রাজি হননি। অন্যদিকে চাঁদাবাজি ও জমি দখলের মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি সদস্য মতিউর রহমান মতি পলাতক রয়েছেন।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, ‘আগামী রোববার থেকে গুদামে থাকা আগস্ট মাসের টিসিবির মালামাল বিতরণ করার কথা ভাবছি আমরা। এখন থেকে পণ্য বিতরণে কোনো অনিয়ম হবে না।’

আরবি/জেডআর

Link copied!