ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শরৎচন্দ্রের গল্পের কাশিপুর জমিদার বাড়ির বেহাল দশা

মো. মিঠুন মাহমুদ, জীবননগর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪, ০৪:২৫ পিএম

শরৎচন্দ্রের গল্পের কাশিপুর জমিদার বাড়ির বেহাল দশা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের পথে ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার কে.ডি.কে ইউনিয়নের মহেশ গল্পের কাশিপুর জমিদার বাড়ি। বাড়িটির স্থাপত্য কাঠামোসহ মূল্যবান বিভিন্ন জিনিসপত্র সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিতো এই জমিদার বাড়িটি। দশনার্থীদের  সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে কাশিপুর জমিদার বাড়িটিকে ঘিরে গড়ে উঠত একটি পর্যটন কেন্দ্র।

দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্জলের জেলা চুয়াডাঙ্গা এ জেলার ছোট একটি সীমান্ত ঘেষা জীবননগর উপজেলা এ উপজেলাটি ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভা নিয়ে গঠিন।জীবননগর উপজেলা শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে কাশীপুর গ্রামে অবস্থিত এই জমিদার বাড়ি। এই জমিদার বাড়িটি বিশেষভাবে পরিচিত জনপ্রিয় লেখক, ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত স্থান হিসেবে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মামাবাড়ি বেড়াতে এসে পুকুর পাড়ে বসে রচনা করেন তার জনপ্রিয় ছোট গল্প ‘মহেশ’।

স্থানীয়রা জানান, ১৮৬১ সালে জীবননগর উপজেলার কেডিকে ইউনিয়নে কাশিপুর গ্রামে জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। এ বাড়িতে থাকতেন তৎকালিন অত্যাচারী জমিদার বিনয় কুমার মজুমদার। এলাকা  জুড়ে ছিল তার জমিদারিত্ব ও শাসন। দেশ বিভাগের আগে এটি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার অন্তর্গত ছিল।

বর্তমানে বসবাসরত বাসিন্দা হাবিল ও কাবিলদের  পূর্বপুরুষদের সাথে ভারতে ১২০০ বিঘা জমি বিনিময় করে পরিবার নিয়ে চলে যান বিনয় কুমার মজুমদার। বর্তমানে জমিদার বাড়িটি থাকলেও সেটি অবহেলা আর সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

জমিদার চলে গেলেও এখন রয়েছে তাদের ব্যবহারিত তৎকালিন সময়কার, খাট-পালঙ্ক, সোফা, টেবিল, গোলাঘর, কুয়া, ডাইনিং টেবিলসহ মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলনের বিশেষ মোটর,তাদের ব্যাবহারিত বাতরুম। বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে রয়েছে একটি বটগাছ ও কৃষ্ণচুড়া গাছ, বিশাল বড় প্রাচির, সামনে ভৈরব নদী। বাড়িটি দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে ছুটে আসেন দশনাথীরা।

কাশিপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুস সাত্তার জানান, কাশিপুর জমিদার বাড়িটি অনেক পুরাতন একটি বাড়ি এই বাড়ির  মালিক ছিলেন জমিদার বিনয় কুমার মজুমদার তিনি ছিলেন খুবই অত্যাচারী। তিনি সাধারন প্রজাদের উপর নানা ভাবে জুলুম-নির্যাতন করতেন ।অত্যাচারী জমিদারের কারনে  নিরীহ প্রজারা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে দিন যাপন করতেন। বর্তমানে মহেশ গল্পের কাশিপুর জমিদার বাড়িটি সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের পথে। এটি সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকবার বিভিন্ন দপ্তরের কমকতারা পরিদশন করেছে কিন্তু এটি সংস্কারের আলোর মুখ দেখেনি।জমিদার বাড়িটি সংরক্ষণ করা  হলে এটি একটি  ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে।

জীবননগর সরকারি থানা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক আ.খ.ম সালাউদ্দিন জানান, অত্যাচারী জমিদার বিনয় কুমার চট্টোপাধ্যায়ের ভাগ্নে ছিলেন কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্রপাধ্যায়। তিনি একসময় মামাবাড়ি কাশিপুর গ্রামে জমিদার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। সে সময় শরৎচন্দ্র চট্রপাধ্যায় মামা অত্যাচারী জমিদার বিনয় কুমার মজুমদার প্রজাদের উপর জুলুম-অত্যাচারের বিষয়টি নেজ যোগে দেখতে পেরে মর্মহত হন। মামার এ অত্যাচার  নিয়ে বৈরব নদীর পাড়ে বসে ছোটগল্প মহেশ রচনা করেন। গল্পে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দরিদ্র কৃষক গফুর, পালিত গরু মহেশ ও ছোট মেয়ে আমেনার করুণ দৃশ্য  তুলে ধরেন।

বর্তমানে কাশিপুর জমিদার বাড়িতে বসবাস করা স্কুল শিক্ষক হাবিল ও কাবিল বলেন, কাশিপুর জমিদার বাড়িতে থাকা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ, তারপরও আমরা এখানে বসবাস করছি। এখানে শরৎচন্দ্র চট্রপাধ্যায় অনেক সময় কাটিয়েছেন। তাঁর মামা জমিদার বিনয় কুমার চট্টোপাধ্যায় সাধারণ প্রজাদের ওপর যে নির্মম নির্যাতন করতেন, তেমন একটি ঘটনা নিয়ে তিনি গল্প লিখেছিলেন। মহেশ গল্পটি ছোট হলেও এটি বেশ জনপ্রিয়। আর এই গল্পের জন্য দেশ-বিদেশের মানুষ চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের নাম জানেন। তৎকালীন সময়ে জমিদারদের ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র এই বাড়িতে এখনও  আছে,এবং কিছু জিনিসপত্র নষ্ঠ হয়ে গেছে তারপরও সেগুলো আমরা সংরক্ষন করে রাখার জন্য চেষ্ঠা করে যাচ্ছি।

ঝিনাইদহ থেকে জমিদার বাড়ি দেখতে আসা কলেজছাত্র আতিকুর রহমান বলেন, আমার বাড়ি পাশ্ববতী জেলায় হলেও আমি এলাকায় প্রথম আসলাম শুধু মাত্র ‘শরৎচন্দ্র চট্রপাধ্যায়ের লেখা মহেশ গল্পের মাধ্যমে কাশিপুর জমিদার বাড়ির কথা জানতে পেরে। অনেকদিনের আশা ছিল জমিদার বাড়িটি দেখার। আজ এখানে এসে ভালো লাগছে। তবে, বাড়িটি অবহেলা আর অযত্নে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে যার  ফলে জমিদার বাড়িটি তার সৌন্দর্য্য হারিয়ে যাচ্ছে। এটা যদি সরকারিভাবে সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে নতুন প্রজন্ম এই জমিদার বাড়ি সম্পকে জানতে পারবে।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা মমতাজ বলেন, জীবননগর উপজেলার কাশিপুর গ্রামে কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্রপাধ্যায়ের মামার জমিদার বাড়ি আছে। এই বাড়িতে বসেই তিনি ছোটগল্প মহেশ রচনা করেন। দেশত্যাগের পর তিনার মামা অত্যাচারী জমিদার বিনয় কুমার মজুমদারের জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হয়। প্রজারা স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে শুরু করেন। জমিদার বাড়িটি আমি সরেজমিনে পরিদশন করেছি । বাড়িটি  সংরক্ষণ করে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা উদ্ধতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি । নিদেশ পেলেই আমরা কাযক্রম শুরু করবো।

আরবি/জেডআর

Link copied!