অবশেষে বাস্তবায়িত হল বহুল কাঙ্ক্ষিত চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি-হাটহাজারী সীমান্ত নাজিরহাট বাজার সংলগ্ন হালদার উপর ব্রীজ নির্মাণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, শতবর্ষী হালদা পুরাতন সেতুটির স্থলে বেইলি ব্রিজের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতিমধ্যে প্রায় দৃশ্যমান হয়েছে নতুন নির্মিত বেইলি ব্রিজটির। পাঁয়ে হেঁটে মানুষ চলাচল করছে। উৎসুক জনতা ব্রীজটি দেখতে আসছে।
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে গাড়িসহ যাতায়াতের জন্য চালু করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে সেতুটির টিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেলিম এন্ড ব্রাদার্স। শতবর্ষী পুরাতন হালদা সেতুটি ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে এ সেতুটি প্রথম নির্মাণ করা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী এ সেতুটি বোমা বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয়। মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে ছিল প্রায় দুই যুগ। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ব্রীজটির উপর দিয়ে চলাচল করে।
স্থানীয়রা জানান, একসময় চট্টগ্রাম শহর থেকে নাজিরহাট হয়ে খাগড়াছড়ি পৌঁছার অন্যতম মাধ্যম ছিল সেতুটি। এখানে নতুন একটি সেতু নির্মাণে গেল দুই দশক ধরে অনেক চেষ্টা তদবির করার পর সর্বশেষ এখানে বেইলি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০ ফুট প্রস্থ ও ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের বেইলী ব্রিজ নির্মাণের বরাদ্দ হয়।
গত ২০২৪ সালের ১৬ মে উদ্বোধনের পর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ ৭ মাস পর বেইলি ব্রিজ নির্মাণের মধ্য দিয়ে এবার সত্যিই আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে সেতুটি।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, এক সময় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের সব যানবাহন পুরাতন হালদা সেতু দিয়ে চলাচল করত। তবে এর পৌনে এক কিলোমিটার দূরে ১৯৮৯ সালে নতুন হালদা সেতু তৈরি হওয়ায় ভারী যানবাহন ওই সেতু দিয়ে চলাচল করে। বেইলি ব্রিজ নির্মাণের পর হাটহাজারী উপজেলা ও ফটিকছড়ি এলাকার মানুষ এই সেতু দিয়ে নাজিরহাট বাজারে আসবে। ১৯৯৪ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রায় ১৫ বছর আগে স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে সর্বশেষ এটি মেরামত করা হয়। এরপর ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি ভেঙে বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এদিকে বেইলি ব্রিজটি নির্মিত হওয়ায় হাটহাজারী এবং ফটিকছড়ি অঞ্চলের মানুষেরা দীর্ঘ এক দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। তারা জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রায় দুই যুগ আগে সেতুটি চলাচলে অযোগ্য হিসেবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে দেয়। এখানে বিকল্প সেতু না থাকায় দুই উপজেলার মানুষকে এতদিন শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়েছে। তাছাড়া নদীর পানির প্রবল তোড়ে সেতুটির মাঝখানে দেবে যায় অনেক বছর আগে। এরপরও অতি ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়েছে। এখন এসব দুর্ভোগ লাগব হতে যাচ্ছে। দুই উপজেলার মানুষের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং ব্যবসায়ীক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে। সেতুটি নির্মাণের ফলে নাজিরহাট পৌরসভা, ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেজ নাজিরহাট কলেজ, নাজিরহাট জেএম আহমদিয়া কামিল মাদ্রাসা, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা, নাজিরহাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, নাজিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ছাড়াও নাজিরহাট বাজারে আসা যাওয়া করতে পারবে হাজারো মানুষ।
নাজিরহাট কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, পুরাতন সেতুটি দিয়ে শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হালদা নদী পারাপার হত। পরবর্তী নৌকা দিয়ে পার হয় সবাই। আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে শংকায় থাকতাম। ব্রিজের কাজ শেষের দিকে হওয়ায় আমরা শঙ্কামুক্ত হচ্ছি।
ব্রীজটি দিয়ে চলাচলকারী সোহেল রানা বলেন, বাজারে আসার জন্য অনেক পথ ঘুরে আসত হত এখন সময়টা কমবে। সহজে বাজারে আসা যাবে।
নাজিরহাট বাজারের সভাপতি নাছির উদ্দীন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগ থেকে মুক্ত হতে যাচ্ছে দুই অঞ্চলের মানুষ। এ বেইলী ব্রিজের মধ্য দিয়ে উত্তর চট্টলার বাণিজ্যিক শহর নাজিরহাটের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাড়ার পাশাপাশি বাড়বে ফটিকছড়ি হাটহাজারীর বাসিন্দাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক।
ঠিকাদার মোহাম্মদ আবুল বশর বলেন, গত বছরের ১৬ মে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ফটিকছড়িতে বন্যা এবং অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে নির্মাণে এত দেরি হল। তা না হলে তিন-চার মাসে কাজ সম্পন্ন করা যেত। ইতিহাস খচিত এ ব্রিজের কাজ শেষ করতে পেরে নিজেকেও গর্বিত মনে হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :