ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

রায়গঞ্জে কালক্রমে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশ-বেত শিল্প

রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪, ০৯:৩৩ পিএম

রায়গঞ্জে কালক্রমে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশ-বেত শিল্প

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গা থানার ঘুরকা ইউনিয়নের গ্রাম, পাড়া, মহল্লা  থেকে প্লাস্টিকের ভিড়ে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প।

এক সময়ে গ্রামীণ জনপদের মানুষেরা বাঁশ ও বেত দিয়ে গৃহস্থালি ও ব্যবসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জিনিস পত্র তৈরী করতো। আর এসব আসবাব পত্রের কদর ছিল ভালো। আগে গ্রামের ঘরে ঘরে এই শিল্পের দেখা মিললেও এখন সেখানে জায়গা করে নিয়েছে প্লাস্টিক পন্য।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,  গ্রামীণ  জনপদে বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি হতো গৃহস্থালী ও সৌখিন পণ্য সামগ্রী।আর বাসা-বাড়ীতে ব্যবহার করা হতো বাঁশ ও বেতের তৈরি আসবাবপত্র। বাড়ির কাছের ঝাড় থেকে তরতাজা বাঁশ ও বেত কেটে গৃহিণীরা তৈরি করতেন হরেক রকম পণ্য। এসব বিক্রি করেই চলতো তাদের সাংসারিক  জীবনযাপন।

এখনো গ্রামীন উৎসব বাজার ও মেলাগুলোতে বাঁশ ও বেতজাত শিল্পীদের তৈরি চাটাই, খালুই, টোনা, টুপড়ি, টোপা, কুলা, দাড়িপাল্লা, পলো, মোড়া, খাদী, ঝাড়নী, চালন, চেয়ার, ঝাঁকা, চোখে পড়ে। এখন এসব পন্য পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। যতই দিন যাচ্ছে ততই কমে যাচ্ছে এই হস্তশিল্পের চাহিদা।

তাছাড়াও এখন দুষ্প্রাপ্যতা হয়ে পড়েছে এই শিল্পের মুল্যবৃদ্ধি কাঁচামাল বাঁশ ও বেতের। অন্যদিকে মেলামাইন, সিলভার প্লাস্টিক জাতীয় হালকা সামগ্রিক নাগরিক জীবনে গ্রামীন হস্তশিল্পের পণ্যকে হটিয়ে দিয়েছে।আগে বাঁশ ও বেত শিল্পের কাজ দেখা গেলেও এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। প্রতি নিয়ত জিনিস পত্রের মুল্য যেভাবে বাড়ছে সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না এই শিল্পের পণ্যের দাম।যার কারণে সংসার জীবন টিকে থাকতে কারিগররা হিমশিম খাচ্ছেন।

উপজেলার ঘুড়কা তরুনী দাস পাড়া গ্রামের বাঁশ শিল্প কারিগর অমলচন্দ্র দাস জানান, আগে এ গ্রামে ১৪০টা পরিবার এ কাজে নিয়োজিত ছিল। এখন হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার এ পেশার সাথে আছে। একটি বাঁশ ৩৫০ থেকে ৪শ টাকায় কিনতে হয়। ডালি প্রতিটির খরচ ১৫০টাকা আর বিক্রি ২শ টাকা। বড় খাঁচি প্রতিটির খরচ ৬শ টাকা, বিক্রি ৭শ টাকা। কুলা প্রতিটির খরচ ১শ টাকা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০টাকা। আমরা বিভিন্ন হাট বাজারে ফেরি করে এ পণ্য বিক্রি করি। আগের মতো আর লাভ হয় না। এই বাঁশ শিল্প টিকে রাখতে বিভিন্ন এনজিও, সমিতি থেকে বেশী লাভ দিয়ে টাকা নিয়ে কোনো রকম টিকে আছি। আমাদেরকে সরকারী যদি অল্প লাভে ঋণ দেয় তাহলে এই শিল্পকে টিকে রাখা সম্ভব হবে।

চন্দ্রী তরুনী দাস জানান, হাতে গোনা কিছু সংখ্যক পরিবার বেত শিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছে। অনেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্য কাজে গেলেও আমরা বাপ-দাদার এই পেশা ছাড়তে পারিনা। আমরা গ্রামগঞ্জে ঘোরাফেরা করে এই পণ্য বিক্রি করি। কিছু সৌখিন মানুষ এখনো এই পণ্য ক্রয়করেন। সারা দিনে যা বিক্রি হয় সেটা দিয়ে সংসারের জন্য বাজার করে নিয়ে যাই। বেতের দাম বেশী হওয়ায়, বেতের পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় একদিকে সংকটে পড়েছে কারিগড়রা অপরদিকে মানুষ হারাতে বসেছে প্রাচীন ঐতিহ্য।

এ বিষয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইলিয়াস হাসান জানান, বাঁশ ও বেতশিল্পের উপর নির্ভরশীল বেকার যুবকদের প্রশিক্ষনসহ এককালীন অনুদান প্রদান করা হয়েছিলো। বর্তমান প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে পরবর্তীতে নতুন প্রকল্প এলে তাদের নতুন করে সহায়তা দেয়া হবে। 

আরবি/জেডআর

Link copied!