যমুনা নদীর বুকে দৃশ্যমান বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু। নির্মাণাধীন রেল সেতুর সবগুলো স্প্যান বসানোর কাজ শেষ করা হয়েছে। ৫০টি পিলারে ৪৯টি স্প্যান বসিয়ে ৪.৮ কিলোমিটার সেতুটির সুপার স্টাকচার এখন সম্পূর্ণ দৃশ্যমান। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির ৯৬ শতাংশ কাজ করা হয়েছে। বাকী ৪ শতাংশ কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ায় উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু হয়। তবে ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এতে উত্তরবঙ্গের মানুষের ট্রেন পরিবহন সময় অবচয় ও ভোগান্তির কারন হয়ে দাড়ায়। তাই সমস্যা সমাধানে জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ করার উদ্যেগ নেওয়া হয়।
২০১৬ সালে একনেকে অনুমোদনের পর ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয়। যার ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। পরে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনের দীর্ঘতম এই সেতু নির্মাণ ব্যয়ের ৭২ শতাংশ অর্থ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেটিভ এজেন্সি (জাইকা)। এবং নির্মাণ ব্যয়ের ২৮ শতাংশ সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে ৪.৮ কিলোমিটার রেলসেতু, ৭.৬ কিলোমিটার ডাবল এপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট নির্মাণ, ৩০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ নির্মাণ, ভায়ডাক্ট, দু’পাশে স্টেশন নির্মাণ, মাইনর ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মাণের কাজও শেষ করা হয়েছে। বাকি শুধু ফিনিশিং আর রংয়ের কাজ। ডব্লিউডিডি ১ ও ডব্লিউডি ২ দুটি প্যাকেজে জাপানি ৫টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের কর্মতৎপরতায় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে রেলওয়ে সেতুর কাজ।
রেলসেতুটি চালু হলে ১২০ কিলোমিটার বেগে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এতে ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন চলাচলে অন্তত ২ ঘন্টা সময় সাশ্রয় হবে। উত্তরবঙ্গের ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন আসবে। এছাড়াও সেতুটি সার্ক, বিমসটেক, সাসেকসহ অন্যান্য আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক এবং ট্রান্স এশিয়ায় রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হবে। তৈরি হবে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনের সুযোগও। ফলে উত্তরের জনপদের ব্যবসা বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। শক্ত হবে উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক সূচক।
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাসের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, সিরাজগঞ্জে নির্মিত রেলসেতু চালুর মাধ্যমে সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। ট্রেন পরিবহনে সময় সাশ্রয় হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন আসবে। সহজেই উত্তরাঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য রাজধানীসহ দেশজুড়ে আমদানি-রপ্তানি করা যাবে। এতে উত্তরবঙ্গের মানুষ অর্থনৈতিকভাবেও বেশ লাভবান হবে।
সিরাজগঞ্জ শহরের ব্যবসায়ী নরেশ চন্দ্র ভৌমিক জানান, যমুনার বুকে নির্মিত রেল সেতুটি চালু হলে উত্তরের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। যাত্রীরা যেমন খুব অল্প সময়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে পারবে তেমনি পণ্য পরিবহনও সুবিধা হবে।
শহরের আরেক ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান বলেন, আমাদের এই রেলসেতু চালু হলে ব্যবসায়ীরা যেমন উপকৃত হবে যাত্রীরাও উপকৃত হবে। যমুনা সেতু ফাটল থাকায় ট্রেন ধীরগতিতে যায়। চালু হলে অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে।
বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের কাজ ৯৬ শতাংশ শেষ করা হয়েছে। বাকি ৪ শতাংশ কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা হবে। এখন শুধু ফিনিশিং এবং রংয়ের কাজ বাকি আছে। কাজ শেষ করেই সরকারি সিদ্ধান্তে ডিসেম্বরের শেষ দিকে উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধন হলেই নিয়মিত ট্রেন চলাচল করবে।
আপনার মতামত লিখুন :