নির্মাণ চলাকালেই রাজশাহীর ‘বঙ্গবন্ধু স্কয়ার’ ভবনের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। নগরের তালাইমারি মোড়ের এই ভবনের নাম হবে ‘রাজশাহী আরডিএ কমপ্লেক্স’। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার চেতনা সমুন্নত রাখতে ২০১৭ সালে আরডিএ প্রকল্পটি গ্রহণ করেছিল।
এরপর থেকে ঢিমেতালেই প্রকল্পের কাজ চলেছে। এ ছাড়া এ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান দুর্নীতির মামলায় কারাগারে গেলে কাজে আরও ধীরগতি আসে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভবনের নাম পরিবর্তনের কথা ভাবছে আরডিএ। অনুমতি চেয়ে শিগগিরই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
আরডিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হায়াত মো. রহমতুল্লাহ বলেন, ‘আমরা নবনির্মিত ভবনটির নাম পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাচ্ছি। কারণ এটি আর শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ করা হবে না। আশা করছি, মন্ত্রণালয় নতুন নামের অনুমোদন দেবে। এরপর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে আমরা ভবনটি সাংস্কৃতিক কাজে ব্যবহার করব।’
২০১৭ সালে আরডিএ তালাইমারি মোড়ে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কয়ার’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করে, যার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয় ৫৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে সমুন্নত রাখা এবং শহরের সৌন্দর্য বাড়ানো।
ওই সময় বলা হয়, ১ দশমিক ৪২ একর জমির ওপর বঙ্গবন্ধু স্কয়ারটির বেজমেন্টের মধ্যে গাড়ি পার্কিং, আর্ট গ্যালারি ও জলধারা বেষ্টিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরি করা হবে। এ ছাড়া ৬ হাজার ৩৩২ দশমিক ৭১ বর্গমিটার গ্রাউন্ড ফ্লোর হবে, যেখানে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, লাইটিং, ডিজিটাল স্ক্রিনযুক্ত স্থায়ী আর্ট গ্যালারি ও মিউজিয়াম থাকবে।
১ হাজার ৫৭৬ দশমিক ৮৬ বর্গমিটার ফার্স্ট ফ্লোরের মধ্যে আধুনিক রেস্তোরাঁ, দৃষ্টিনন্দন ল্যান্ডস্কেপ, উন্মুক্ত স্থানে বসা এবং সুস্থধারার বিনোদনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা রাখার কথা জানানো হয়। এ ছাড়া অত্যাধুনিক তিনটি লিফট, জেনারেটর, সোলার প্যানেল ও ইলেকট্রিসিটি সরবরাহের জন্য সাব-স্টেশন স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২৫১ মিটার রাস্তারও উন্নয়ন করা হবে। তা ছাড়া স্কয়ারের ইন্টেরিয়র ও ল্যান্ডস্কেপিং কাজ হবে।
কাজ শুরুর পর ২০২২ সালে প্রকল্পের ব্যয় দ্বিগুণ হয়। কারণ পরামর্শক সংস্থাটি নির্মাণের মাঝপথে ভবনের নকশায় পরিবর্তন এনেছিল। তখন ব্যয় বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১২৫ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ বাতিল করে।
এরপর শুধু ৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ হাজার ৫১৮ দশমিক ৮ বর্গমিটার জমিতে নির্মিত ভবনটি ছয় মাস ধরে অকেজো পড়ে আছে। এ অবস্থায় নাম পরিবর্তনের কথা ভাবছে আরডিএ।
সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হায়াত মো. রহমতুল্লাহ বলেন, ভবনটিতে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ বা মুক্তমঞ্চ, আর্ট গ্যালারি, একটি ক্যাফেটেরিয়া ও একটি সম্মেলন কক্ষ থাকবে। ভবনটি আরডিএর পক্ষ থেকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
আপনার মতামত লিখুন :