চাঁপাইনবাবগঞ্জের চৌকা সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যেই সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরের সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে সাইদুল ইসলাম (৩০) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
আজ বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার গামারিতলা সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সাইদুল ইসলাম উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের গামারি তলা গ্রামের জয়নুল আবেদীনের ছেলে।
সীমান্ত দিয়ে পণ্য প্রবেশের সময় ওই যুবক গুলিবিদ্ধ হন বলে জানান বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, সাইদুল ইসলাম জিরো গামারিতলা সীমান্তের জিরো পয়েন্ট এলাকায় ভারত থেকে চিনি আনতে চেষ্টা করছিলেন। এ সময় বিএসএফ তাদের দিকে গুলি চালায় এবং সাইদুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। বুকে ও পেটের ডান দিকে গুলির চিহ্ন রয়েছে।
আহত অবস্থায় তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে জরুরি বিভাগের ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে ওসি জানান।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শফিকুল ইসলাম জানান, সাইদুল ইসলামের শরীরে দুটি বুলেটের আঘাত ছিল। তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। বিএসএফের গুলির ফলে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তের ওপারে ভারতের সুখদেবপুর এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শুরু করায় স্থানীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (৫ জানুয়ারি) থেকে এ পরিস্থিতি চলছিল, তবে বুধবার (৮ জানুয়ারি) বেলা আড়াইটার দিকে চৌকা সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, বিএসএফ তাদের আগাম সম্মতি বা সমঝোতা ছাড়াই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল, যা এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করে। পতাকা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএসএফের ১৩৯ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, কোনো ধরনের সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ স্থগিত থাকবে।
গত ৫ জানুয়ারি, ভারতীয় সীমান্তের পিলার ১৭৭/২-এস থেকে আনুমানিক ১০০ গজ ভেতরে বিএসএফ তাদের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের জন্য মাটি খনন শুরু করে। খবর পেয়ে বিজিবির চৌকা সীমান্ত টহল দল সেখানে গিয়ে পতাকা বৈঠক শুরু করে এবং কাজে বাধা দেয়। তবে, বিএসএফ স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে কাজ পুনরায় শুরু করে।
পরিস্থিতি তীব্র হওয়ায়, ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও রাজশাহীর সেক্টর কমান্ডার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। পরে বিএসএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পতাকা বৈঠক আয়োজন করা হয়। বৈঠকের ফলস্বরূপ, বিএসএফ অতিরিক্ত জনবল ও বেসামরিক লোকজন সরিয়ে দিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে, সীমান্ত এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে, তবে বিজিবি সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
চৌকা সীমান্তের বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রুহুল আমীন ও স্থানীয়রা জানান, কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর সীমান্তের মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। তারা ভারতবিরোধী স্লোগান দিতে শুরু করেন, যা দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি করে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থানীয় প্রশাসন ও সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে সমঝোতার জন্য পতাকা বৈঠক অব্যাহত রাখা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :