ঢাকা বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

বিএনপি নেতাকে টপকাতে বিউটির বিতর্কের বাঁশি

বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৪, ০৬:৫৯ পিএম

বিএনপি নেতাকে টপকাতে বিউটির বিতর্কের বাঁশি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পথের কাটায় পরিনত হয়েছিলেন বগুড়ার শিবগঞ্জ বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম। দেড় ডজন গায়েবী মামলায় কারাবন্দি ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে থাকতেন ঘরছাড়া। তিনি বগুড়া জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

অভিযোগ উঠেছে, শেখ হাসিনার পতনের পরই বিএনপির সেই নেতাকে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে মামলা করে বিতর্কের বাঁশি বাজানো হয়। এতে মদদ দেন বিএনপির বহিস্কৃত নেত্রী বিউটি বেগম। নেপথ্যে হেভিওয়েট কোনো নেতাও থাকতে পারেন বলে ধারণা করছেন দলটির কর্মীরা। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবচেয়ে দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে থাকা বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির বর্জন করা আওয়ামী লীগ ঘরনার সংসদ নির্বাচনে ড্যামি প্রার্থী ছিলেন বিউটি বেগম। দলের সুদিনের সম্ভাবনায় অনেকে খোলস পরিবর্তন করে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের পথের কাটা মীর শাহে আলম। দলের পদ থেকে সরাতে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হচ্ছে।

দলীয় সুত্র জানায়, বিএনপির বিগত দিনের আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় নেতৃত্ব দিয়েছেন মীর শাহে আলম। তার বিরুদ্ধে নাশকতার ১৭টি গায়েবী মামলা দেয় আওয়ামী লীগ। ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ কারাবন্দি হওয়ার ঘটনাটি বেশ আলোচিত ছিল। তিনি দীর্ঘদিন মামলা-হামলা ও নির্যাতনের মুখে ফেরারি জীবন কাটিয়েছেন। 

সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রদল নেতাদের ওপর হামলা মামলার আসামি আশরাফুল আলম বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। এতে শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলমকে আসামি করে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দেওয়া হয়। বিচারক সেই মামলা খারিজ করে দেওয়ার পর মামলার বাদী আশরাফুলকে ঘিরে নানা প্রশ্ন নেতাকর্মীদের। 

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ড. আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা এখনও সক্রিয়। বিএনপি নেতাকে স্বৈরাচারের দোসর ট্যাগ দেওয়া মামলাটি তার প্রমাণ। মীর শাহে আলমকে বিতর্কিত করতে বিগত দিনে কাটছাঁট অডিও প্রচার করতেন আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীরা।

সুত্র জানায়, বগুড়া শহর ছাত্রদল নেতাদের উপর ককটেল হামলার অভিযোগে গত ২০ সেপ্টেম্বর বগুড়া সদর থানায় আশরাফুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তিনি নাগরিক ঐক্যে পদ বাগিয়ে নিতে সভা-সমাবেশে ছুটছেন। আশরাফুল শিবগঞ্জ মোকামতলার ভাগকোলা এলাকার বাসিন্দা। কিছুদিন আগেও জাতীয় পার্টির সাবেক এমপির ঘনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। একসময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-ইনু) সক্রিয় কর্মী হঠাৎই বগুড়া-২ আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপির কর্মী বনে যান। আওয়ামী লীগ ও জাপা এমপির প্রভাব বিস্তার করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোকামতলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক নির্বাচিত হয়েছিলেন। আশরাফুল বর্তমানে বিএনপির বহিস্কৃত নেত্রী বিউটি বেগমের অনুসারী বলে অভিযোগ করা হয়।

প্রায় দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ খবরে দীর্ঘদিন মামলা-হামলা ও নির্যাতনের মুখে ফেরারি জীবন কাটানো নেতাদের বিতর্কিত করতে চলছে অপপ্রচার। এমনকি দলের পদ থেকে সরানোর জন্য স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, মীর শাহে আলমকে টপকিয়ে বিএনপির দখল নিতে নানা অপতৎপরতায় মদদ দিচ্ছেন দলটির বহিস্কৃত নেত্রী। আওয়ামী লীগ ঘরনার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড্যামি প্রার্থী ছিলেন বিউটি বেগম। তিনি বগুড়া জেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০১৪ সালে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মীর শাহে আলমের জনপ্রিয়তা ও কাঁধে ভর দিয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হলে বিউটি বেগমকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাকে আর দলে ফেরানো হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, বিউটি বেগম আওয়ামী লীগের ড্যামি প্রার্থী হয়ে বিএনপির শাহে আলমকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছিলেন। বিএনপির সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে নেওয়ার কৌশল হিসেবে ২০১৮ সালের একটি অডিও কাটছাঁট করে প্রচার করেও বর্থ হন বিউটি। শেখ হাসিনার পতনের পর মীর শাহে আলমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ তোলা হয়। এসব ঘটনার প্রতিবাদে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিউটি বেগম দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে মামলায় মদদ দেওয়া এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ভিত্তিহীন। অন্যদিকে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দেওয়া মামলার বাদী আশরাফুল আলমের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বগুড়া জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম বলেন, ২০১৩ সাল থেকে তার বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা দিয়েছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ। তাদের সুবিধাভোগীরা বিগত দিনের মতো এখনো ষড়যন্ত্র করছে। 

আরবি/জেডআর

Link copied!