দিনাজপুরের বীরগঞ্জে দীর্ঘদিন থেকে ৬২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান চলছে। এতে করে পাঠদানসহ শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষক না থাকায় সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। যার ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সমস্যা হচ্ছে বলে অভিভাবকদের অভিমত। একজন সহকারী শিক্ষকের যোগ্যতা ও প্রধান শিক্ষকের যোগ্যতা সমান নয়। কীভাবে সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে পারে প্রশ্ন অভিভাবক মহলের মাঝে চলছে। সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই কিছু বিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে অনিয়মের আখড়া। স্লিপের টাকা আত্মসাৎ, সময়মতো স্কুলে না আসা, শিক্ষার্থীদের ক্লাস না নেওয়া এসব অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
আরো জানা যায়, এ উপজেলায় ২৩০টি বিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ২৬ হাজার ৭শত ৯৯ জন। অন্যদিকে উপজেলায় ১হাজার ১৬২ জন সহকারী শিক্ষকের মধ্যে ১ হাজার ৫৮ জন দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপস্থিতির সংখ্যা ৫০ শতাংশ কম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নিজপাড়া গ্রাম ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। এ স্কুলে হাজিরা খাতায় রয়েছে ১২০ জন শিক্ষার্থী দেখানো হলেও প্রতিনিয়ত প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিতি থাকে। সর্ব সাফল্যে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী দেখা যায়। এদিকে পাল্টাপুর ইউনিয়নের সাদুল্যাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবসরে যান গত ২৩ মার্চ। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনে রয়েছে সহকারী শিক্ষক গজেন্দ্র নাথ।
এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজিরা খাতায় ৬৭ জন শিক্ষার্থীর নাম থাকলেও প্রতিনিয়ত ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি না থাকার কারণ হিসেবে লক্ষ্য করা যায়, ওই বিদ্যালয়গুলোতে কোনো অভিভাবক কিংবা মা সমাবেশ এবং এসএমসি মিটিংসহ কোনোটি করা হয় না। এমনকি হোমভিজিট করার নিয়ম থাকলেও সেটি করেন না তারা।
কয়েকজন অভিভাবক জানান, সহকারী শিক্ষক থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ায় বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার মান কমে যাওয়ায় আমাদের সন্তানকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছি। যে বিদ্যালয়ে লেখাপাড়া নেই সেই বিদ্যালয়ে অহেতুক আমাদের সন্তাকে রেখে লাভ কি।
বিদ্যালয়গুলোর ক্যাচমেন্ট এলাকার সচেতন মহল জানান, আসলেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বাড়ানো সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, নিয়মানুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। অনিয়মের হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফজলে এলাহী সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, উপজেলার ২৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছে ১৬৮ জন। পুরুষ ১১৪ জন, নারী ৫৪ জন। ৬২টি পদ শূন্য। সহকারী ১ হাজার ১
শত ৬২ জনের মধ্যে ১ হাজার ৫৮ জন কর্মরত রয়েছে। এর মধ্যে ১০৪ জনের পদ শূন্য রয়েছে।
এই উপজেলায় উপবৃত্তি পাচ্ছে ২২ হাজার ৫শত ৫ জন। বালক ৯ হাজার ৩শত ৪৯ জন ও বালিকা ১৩ হাজার ১শত ৫৭ জন। উপজেলার ১৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াজ ব্লক নির্মিত রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :