ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

আওয়ামী লীগের ‘হেলমেট বাহিনী’ দিয়ে পুকুর-জমি দখল বিএনপি নেতাদের

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৪, ১০:৫৬ এএম

আওয়ামী লীগের ‘হেলমেট বাহিনী’ দিয়ে পুকুর-জমি দখল বিএনপি নেতাদের

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

১৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে রাজশাহীর বাগমারায় এবার আওয়ামী লীগের ‘হেলমেট বাহিনী’র সদস্যদের দিয়ে পুকুরসহ ১৩ একর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের চার নেতাসহ পাঁচজন পুকুরসহ ওই জমি লিজ নেয়।

গত ৪ নভেম্বর জালাল উদ্দিন তার হেলমেট বাহিনী দিয়ে লিজ গ্রহীতাদের পিটিয়ে জখম করে তাড়িয়ে দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে নারীসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এ ঘটনায় থানায় উভয় পক্ষের দুইটি মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক বলে দাবি করেছেন ভূক্তভোগিরা। তাদের অভিযোগ এজাহার পাল্টিয়ে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

মামলা, জমির মালিক ও লিজ গ্রহীতাদের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কনোপাড়া গ্রামের দুলালীপাড়া আন্ধিয়ার বাগানের পুকুরসহ জমির পরিমান প্রায় ১৩ একর। এর মধ্যে গোয়ালকান্দির এনায়েতুল হক বিন্দু, নিমপাড়ার ডা. নুরুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, খলিলুর রহমান ও অনন্তপাড়ার শাহজামালের জমি রয়েছে ১২ একর। বাকি এক একর জমি অন্য তিনটি পরিবারের। জমির মালিকদের মধ্যে খলিলুর রহমান, মাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও শাহজামাল মাড়িয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও জিয়াউর রহমান তারেক রহমান প্রজন্ম দলের মাড়িয়া ইউনিয়ন শাখার সভপতি।

গত ২৫ অক্টোবর মালিকদের কাছ থেকে পুকুরসহ জমি লিজ নেন উপজেলার বড়বিহানলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মাহমুদুর রহমান মিলন, গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক কনপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা, গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুর রউফ হিটলার ও ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান মিল্টন। গত ২৫ অক্টোবর তাদের নামে লিজের চুক্তিনামা সম্পন হয়।

নিজের শর্ত অনুযায়ী গত ৪ নভেম্বর গোলাম মোস্তফা, আব্দুর রউফ হিটলার ও তাদের আরেক পাটর্নার দুলালিপাড়ার রায়হান আলী পুকুরে যান লিজ বুঝিয়ে নিয়ে মাছ ছাড়ার জন্য। এ সময় তাদের উপর হামলা করে জালাল বাহিনী।

দুলালীপাড়া গ্রামের জালাল উদ্দিন গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর হোসেন সরকারের হেলমেট বাহিনীর প্রধান হিসেবে পরিচিত। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলায় অংশ নেয় জালালসহ তার হেলমেট বাহিনী। জালালের হেলমেট বাহিনীতে রয়েছে, দুলালিপাড়া গ্রামের আজাদ, রাজু, পাভেল, রনি, সবুজ, কনপাড়া গ্রামের জিহাদী, জামালপুর গ্রামের রাব্বানী। আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচনসহ বিভিন্ন অপকর্ম ও দখল বাজিতে এই হেলমেট বাহিনী কাজে লাগাতো।

এছাড়াও গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিপক্ষে ভবনীগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাদের তান্ডবে অংশ নেয় এই হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জালালসহ তারা আবার স্থানীয় বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার বাহিনী হিসেবে কাজ শুরু করে এবং এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বেশকিছু পুকুর দখল ও মাছ লুটে অংশ নেয়।

লিজ গ্রহীতা গোলাম মোস্তফা বলেন, ৪ নভেস্বর বিকেলে আমরা লিজ নেওয়া পুকুর ও জমি পরিদর্শন করে কবে কিভাবে মাছ ছাড়বো সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলাম। এ সময় জালাল উদ্দিন এসে আমাদের কাছে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে এই পুকুরে মাছ চাষ করতে দেওয়া হবে বলে জানায়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যন্ত তার হেলমেট বাহিনী এসে আমাদের উপর হামলা করে। তারা আমাদের পিটিয়ে জখম করে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন এসে আমাকেসহ পাঁচজনকে উদ্ধার করে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় আমি ওই দিনই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। এ অবস্থায় পরের দিন আমি অভিযোগ নিয়ে সেনাবানিহীর কাছে যায়। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা বাগমারা থানার ওসিকে ফোন দেওয়ার পর আমার মামলা নেয়ার জন্য ৬ নভেম্বর সকালে থানায় ডাকেন। সারাদিন থানায় বসিয়ে রেখে রাত ৯টার দিকে আমার অভিযোগ এহাজার হিসেবে রেকর্ড করে। তবে আমি যে অভিযোগ লিখে নিয়ে গিয়েছিলাম সেটি পরিবর্তন করে ওসির সাজানো এজাহারে আমাকে সাক্ষর করতে বাধ্য করে। এছাড়াও আমার মামলা রেকর্ডের তিন ঘন্টা আগে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা রেকর্ড করেন।

জমির মালিক এনায়েতুল হক বিন্দুর জামাতা এসএম সাকিল আলম বলেন, জখন যে ক্ষমতায় আসে সে দলের নেতারা আমাদের জমি দখলে নেয়ার চেষ্টা করে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হই আবার যারা লিজ নেয় তারাও ক্ষতিগ্রস্থ হন।

তিনি বলেন, ক্ষমতার পালা বদলে আমাদের জমির উপর কিছু বিএনপি নেতাদের চোখ পড়েছে। তারা আমাদের লিজ দেওয়া পুকুর ও জমি দখলের চেষ্টা করছে। বিশেষ করে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব কামাল হোসেন, গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ২ নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি বকুল সরদার মেম্বার এবং ইউনিয়ন বিএনপি সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুনছুর রহমান তাদের বাহিনী দিয়ে আমাদের পুকুর ও জমি দখলের চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে না। এখনো যদি এ রকম হয় তা হলে আমরা কোথায় যাব। আমরা এর একটি সমাধান চাই।

গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা বকুল সরদার বলেন, দুলালিপাড়ার ওই পুকুর ও জমির লিজ বা দখলের চেষ্টার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। ওই ঘটনার সঙ্গে আমার কোন সংপৃক্ততাও নেই। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। তবে কেউ যদি আমাকে ডাকে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার কাছে যাওয়া আমার কর্তৃব্য। সে কারণেই জালালের সঙ্গে থানায় গিয়েছিলাম।

মামলার এজাহার পরিবর্তন করার কথা অস্বীকার করে বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, উভয় পক্ষ আহত হয়েছে। যাদের অভিযোগ আগে পেয়েছি তাদেরটি আগে এহাজার হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। উভয় পক্ষের আসামীদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!