ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বিএনপির সভাপতির অত্যাচারে অতিষ্ঠ দুর্গম চরের মানুষ

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪, ০৮:৩৫ পিএম

বিএনপির সভাপতির অত্যাচারে অতিষ্ঠ দুর্গম চরের মানুষ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হান্নান মৃধা ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হামলা, লুটপাট ও সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই শুরু হয় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হান্নান বাহিনীর তান্ডব। উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের বসন্তপুর, জালালদি ও এনায়েতপুর গ্রামের মানুষের উপর নিজস্ব লোক দ্বারা বিভিন্ন বাড়িতে ভাঙচুর, মারধর ও অত্যাচার করে এলাকায় রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা করছেন হান্নান বাহিনী । উক্ত বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সামসুউদ্দিন,৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর ও মোহাম্মদ আলী সহ একাধিক লোক দিয়ে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করছেন তারা। চাঁদা না দিলেই বাড়িঘর ভাঙচুর, মারধর, লুটপাট করছেন বাহিনীর সদস্যরা। জীবনের নিরাপত্তা না পেয়ে ঘরবাড়ি রেখে পালাতে শুরু করেছেন চরের বাসিন্দারা। এছাড়াও আরো জানা যায়, ৭ সেপ্টেবর হামলার শিকার হয়ে ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এনায়েত ফকির ও জালালদি গ্রামের বাসিন্দা কালুর গর্ভবতী ছেলের বৌ সহ সপরিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সাহেব আলী বলেন, গত ৬ আগস্ট হান্নান মৃধার নেতৃত্বে সাবেক মেম্বার শামসুদ্দিন সহ ১০-১৫ জন আমার বাড়িতে এসে ও চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে।

সাহেব আলীর মেজো ছেলের বউ কাজলী আক্তার বলেন, আমার গলায় ছ্যান ধরে গলার চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং আলমারি খুলে নগদ ৫০ হাজার টাকা লুট ও বাড়িঘর ভাংচুর করে চলে যায়।

সাহেব আলীর ছেলে জানান, আমার বাড়ি ভাংচুরের পর বিষয়টি ফেসবুকে তুলে ধরার পর আমাকে প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়া হয়। আমার বাড়ির আশে পাশে হান্নান মৃধার লোকজন আনাগোনা করে বাহিরে পেলেই আমাকে মেরে ফেলবে।

আজিমনগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার মান্নান জমাদ্দার বলেন, আমি ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ফলে ওরা আমার পিছু লাগে। আমার বাড়ি এসে ভাংচুর চালায় আমার ব্যহৃত মোটরসাইকেল টা ও ভেঙ্গে ফেলে এবং আলমারি থেকে ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়। আমার ছেলের গায়ে একটা বাড়ি লাগে পরে কোনরকমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যায়। বিএনপি নেতা হান্নান মৃধার নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়েছে।

এনায়েতপুর বাজারের ব্যবসায়ী আতিয়ার বলেন, গত ৭ আগষ্ট জাহাঙ্গীর মেম্বার, মোহাম্মদ আলী সহ ১০-১৫ জন আমার দোকান ভাংচুর করে এবং আমার বড় ভাইয়ের ১ লক্ষ টাকা মূল্যের নৌকা ভেঙে খালে ফেলে দেয় । আমার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে না দিলে এলাকায় ব্যাবসা করতে দিবে না এবং এলাকা থেকে বের করে দিবে।

এনায়েতপুর বাজারের মতিয়ার রহমান বলেন, আমি ৭-৮ বছর যাবত কলারবাগান করি। আমি নতুন একটা নৌকা বানিয়েছি হান্নান মৃধার লোক জাহাঙ্গীর মেম্বার,মোহাম্মদ আলী ও রাজ্জাক আমার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। না দিলে হাসতে হাসতে মাথায় কোপ দেয়। আমাকে অনেক মারছে।

তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক মেম্বার শামসুদ্দিন, জাহাঙ্গীর মেম্বার ও মোহাম্মদ আলী বলেন, তাদের বাড়িতে কিছু পোলাপান অর্থাৎ ছাত্ররা হামলা করেছে। তারা দীর্ঘ ১৫ বছর আমাদের অত্যাচার করেছে। আমাদের নামের অভিযোগ গুলো মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এগুলো আমরা করিনি।

উক্ত অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করে হরিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হান্নান মৃধা বলেন, জাহাঙ্গীর, শামসুদ্দিন মেম্বার ও মোহাম্মদ আলী আমার লোক। তবে আপনি যে অভিযোগের বিষয়গুলো বলছেন এইগুলো মিথ্যা।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ্ কবির, বিষয়গুলো আমার জানা ছিলো না, আপনার মাধ্যমে জানলাম। যদি এরকম চাঁদাবাজি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।

আরবি/জেডআর

Link copied!