ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

তালায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারনে বোরো আবাদ অনিশ্চিত

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৬:৫৬ পিএম

তালায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারনে বোরো আবাদ অনিশ্চিত

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চলতি বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও অপরিকল্পিত মৎস্য ঘেরের বেড়ীবাঁধ দেয়ায় এবং নদী খাল খননে অনিয়ম দূর্নীতির কারনে যথাসময়ে পানি নিষ্কাষন না হওয়ায় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় এখনও স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রুপ নিয়েছে। এর ফলে আসন্ন বোরো চাষ আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তালা উপজেলার ধনদিয়া, নগরঘাটা, সরুলিয়া, কুমিরা, তেঁতুলিয়া, খেশরা, ইসলামকাটি, তালা,খলিষখালী ইউনিয়সহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে বোরো চাষাবাদ নিয়ে অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে হাজার হাজার কৃষক। বীজতলা প্রস্তুস করতে না পারায় হতাশার কথা জানান কৃষকরা। তবে দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেল ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল আমিন। তারা বিভিন্ন নদ-নদী ও খালের অবৈধ নেটপাটা অপসারণ ও স্কেভেটর মেশিনের সাহায্যে খাল পানি প্রবাহের প্রতিবদ্ধকতা অপসারনে করতে কাজ করছেন। এ সময় নদী ও খালের পানি প্রবাহ নিরবচ্ছিন্ন করার লক্ষ্য নদী খাল অববাহিকার লোকজন নিয়ে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা গেছে, তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া, ইসলামকাটি, নগরঘাটা, কুমিরা, সরুলিয়া ও খলিশখালি ইউনিয়নের দেড় শতাধিক গ্রামের বিলে অতিবৃষ্টিতে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।এর ফলে লক্ষাধিক মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। তলিয়ে যায় মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। এখনো ৫-৭ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। এবার ইরিবোরো মৌসুমে কৃষকের ধান চাষের অনিশ্চিয়তা দেখা দেওয়ায় উপজেলা প্রশাসন পানি নিষ্কাষনে বিশেষ  উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।

গত এক সপ্তাহে উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের শুভাষিনী, শিরাশুনি থেকে নওয়াপাড়া ও তালা ইউনিয়নের জিয়ালা-নলতা পর্যন্ত খালে থাকা অবৈধ নেটপাটা অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়া গত শনিবার খলিষখালী ইউনিয়নের দলুয়া ও শালিখা নদীতেও একইভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় স্থানীয় ভুক্তভোগী সাধারন মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে উপজেলা প্রশাসনের কাজে সহযোগিতা করেন।  এ উপলক্ষে দলুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ মো: রাসেল। এসময় নগরঘাটা, সরুলিয়া, খলিশখালি ও মাগুরা ইউনিয়নের নদী সংলগ্ন ওয়ার্ডের ভুক্তভোগী জনসাধারণের সমন্বয়ে ৪টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নদীর পানি প্রবাহ নিরবিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে এই কমিটিগুলো কাজ করবে। এসময় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

চোমরখালী গ্রামের কৃষক মোন্তাজ মোড়ল জানান, অতিবৃষ্টিতে এলাকায় এবার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য ঘের, ফসলি জমি, সবজির ক্ষেত এখনও পানির নিচে তলিয়ে আছে। কবে পানি কমবে আর আমরা বোরো ধান ও তরিতরকারী চাষ করতে পারব জানিনা। আমাদের চিন্তার অন্তনেই।

তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিসদেও চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, গত তিন মাস ধরে তার ইউনিয়নের অধিকাশং গ্রাম পানিতে তলিয়ে আছে। মহস্য ঘের, কৃষি জমিতে লাগানো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে ইউনিয়নে শিরাশুনি সুভাষিনী, লাউতাড়া, হাসবাস, মদনপুর এলকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রুপ নিয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তালা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও এক্সিকউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল আমিন বলেন, এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে উপজেলার প্রত্যন্ত নিন্মাঞ্চলগুলো দীর্ঘস্থায়ী জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার নদ-নদী ও খালে অবৈধভাবে নেটপাটা দিয়ে পানি প্রবাহে বিঘœ সৃষ্টি করেছে এক শ্রেণীর মানুষ।

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেল বলেন, এলাকার দুষ্ট প্রকৃৃতির কিছু মানুষের কারণে উপজেলা ব্যাপী মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েছে। বর্ষাকাল শেষ হয়ে শীত চলে আসছে। অথচ এখনও হাজার হাজার মানুষ পানির নিচে বসবাস করছে। তাদের আকুতির কথা বিবেচনায় নিয়ে পানিনিষ্কাষনে রাতদিন এক করে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন এমন দাবি তার।

আরবি/জেডআর

Link copied!