বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪, ০৩:৪৩ পিএম

বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষে ব্যস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষকরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪, ০৩:৪৩ পিএম

বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষে ব্যস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষকরা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

অধিক লাভের আশায় শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে সীমান্তবর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষকদের । এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় উঁচু জমি ও বর্ষার পানি চলে যাওয়াতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে। শুধু নিজেদের চাহিদাই নয়, বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। শীতের শুরুতে জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলায় সবজি চারা রোপণ থেকে শুরু করে এখনো ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও কৃষানীরা। এ সকল সবজি রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন জাতের সবজি পাঠাবে এ জেলার কৃষকরা।

জেলা শহরের পার্শ্ববর্তী বিজয়নগর উপজেলার মনিপুর, লক্ষীমোড়া, পত্তন, পাহাড়পুর এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,বর্ষার পানি চলে যাওয়াতে নিচু জমি  গুলোতে সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। পানি শুকিয়ে যাওয়া জমি গুলো হাল চাষ করে রোপণ করেছে, মিষ্টি কোমড়া, মরিচ, ডশা, খিড়া, টমেটো, আলু, ফুলকপি, মুলা, বাঁধাকপি, লালশাক, লাউ, শিম, করলাসহ নানান ধরনের সবজি।

এবছর জেলায় টমেটোর আবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলা শহরের রামরাইল এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে শীতকালীন সবজি টমেটোর ব্যাপক আবাদ করা হয়েছে জেলা জুরে প্রায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। টমেটোর পাশাপাশি জেলায়  বেগুনের চাষ হয়েছে ৬২৫ ও শিম ৪৪৫, লাউ ৪২০, মুলা ৪৫০, ফুলকপি ৪০০, বাঁধাকপি ৩১০, লালশাক ২৫০, পালংশাক ১৭৫, ডাটা, ৩০৯, শসা ১১৩, মিষ্টি কুমড়া ৩১০, উচ্ছে ৫০, করলা ২৫, এবং অন্যান্য সবজি ৯৬ হেক্টর জমিসহ মোট ৪৭৫০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ করা হয়েছে।

কৃষক মজিদ মিয়া বলেন, মনিপুর, পত্তন  এলাকায় তিতাস নদীর  বর্ষার পানি শুকিয়ে যাওয়াতে সবজি চাষে মনোযোগ দিয়েছে। বেশির ভাগ জমিতে মিষ্টি কুমড়া ও খিড়া, শসা, শাক ও ফুলকপি, বাঁধাকপি,মুলা চাষ করা হয়েছে। পানি  শুকিয়ে যাওয়া জমিতে সবজি চাষে ঝুঁকছেন তারা। অল্প সময়ে কম খরচে অধিক মুনাফা লাভের জন্য টমেটো, ফুলকপি ও বাঁধাকপির জুরি নেই।পানি জমে না এমন উঁচু জমি কপি চাষের জন্য উপযুক্ত।এই এলাকার সবজি সারা দেশে রপ্তানি করা হয়। তাই যে কোনো সবজি  ফসল আগাম চাষ হলে বাজারে চাহিদা বেশি থাকে। তাই মুনাফাও অনেক বেশি হয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আগাম সবজি চাষে বেশ আলোড়ন তুলেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া  সদর উপজেলার রামরাইল এলাকার টমেটো চাষ ও বিজয়নগর পাহাড়পুর এলাকার মাতব মিয়ার মরিচ চাষে।

কৃষক মাতব মিয়া রূপালী বাংলাদেশকে জানান, এবছর  তিনি ৫১২ শতাংশ জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মরিচ। তিনি এবছর মরিচ চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ বছর মরিচের চাষ ও ফলন ভাল হবে বলে জানান ৩০ লক্ষ টাকার  মরিচ বিক্রির আশা করছি। এবছর বিজয়নগর উপজেলায় সেরা কৃষকের পুরুষ্কার পেয়েছেন জেলা থেকে।

এ শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজি চাষে ব্যাস্ত কৃষক কৃষানিরা। ক্ষেত থেকে সরাসরি ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের পাইকাররা ট্রাকে ভড়ে সবজি ক্রয় করে নিয়ে যান।কামরুল ইসলাম  ও সায়েব আলী রূপালী বাংলাদেশকে  বলেন, সবজির কদর সারাদেশেই রয়েছে। তবে তা আগাম চাষ করতে পারলে আরও বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। সবজি ক্ষেতে পোকামাকড় আক্রমণ করবেই। সেজন্য কীটনাশক ব্যবহার না করেই আধুনিক বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করা সম্ভব।  

সবজি ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার অনেকটাই কম থাকায় সবজি গুনগত মানে সেরা হওয়ায় চাহিদাও অনেক বেশি বলে জানা তারা।

শীতকালীন সবজি ইতিমধ্যে বাজারে তুলেছেন তারা ফুলকপি ও বাঁধাকপি, মুলা খিরা, ডাটা, পালংশাক, লালশাক, শিম এর ভালো দাম পেয়ে খুশি তারা।  প্রতিটি বাঁধাকপি, ফুলকপি চারার পেছনে তাদের খরচ হয়েছে প্রায় ৮ থেকে দশ টাকা। বর্তমান বাজার মুল্যে পাইকারি প্রতিটি কপি ক্ষেতেই বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা মূল্যে।

মনিপুর পত্তন এলাকার কৃষক আবু সুফি জানান, বর্ষার পানি জমি থেকে শুকিয়ে যাওয়াতে সবজি চারা রোপণের জন্য আগে জমি তৈরি করে কিছু দিন রাখা  হয়। এতে কুমড়ার  চারা রোগ-বালাই প্রতিরোধের ক্ষমতা সঞ্চয় করে এবং গাছগুলো সবল হয়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেন তারা। তবে এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় তাদের নিজের চারাগুলো নষ্ট হয়নি। ফলে উৎপাদন খরচ কিছুটা কম হওয়ার আশাবাদী তারা।

জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সবজি চাষ হচ্ছে। সবজি চাষের ব্যাপকতার জন্য সদর উপজেলার রামরাইল, সুহিলপুর, বিহাইর, বিজয়নগর উপজেলার মনিপুর, পত্তন, চম্পকনগর, বড়পুকুরপাড়, পাহাড়পুর, পাইকপাড়া, সরাইল উপজেলাসহ, নবীনগর, নাসিরনগর, আশুগঞ্জ, বাঞ্চারামপুর, আখাউড়া, কসবায় ও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের সবজি। শীতের শুরু থেকেই রাজধানীর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে এ সবজি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসূত্রে জানা যায়, চলতি বছর সবজি চাষের আবাদ ৫৯৫০ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে চলতি সপ্তাহে প্রায় ৪৭৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ অর্জন হয়েছে। এবছর জেলায় সবজি ১৭৬৫২৫ মেট্রিকটন উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, কৃষি বিভাগের লোকজনের নিয়মিত মনিটরিংয়ে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বাড়ায় কৃষকদের মুনাফাও বেড়েছে কয়েকগুণ।

চাষিরা এখন বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে বলেও জানান তিনি।


 

আরবি/জেডআর

Link copied!