ফারুক মিয়া (৩১)। শিশুকালে মা মারা যায়, কিশোর কালে বাবা। এরপর থেকেই আশপাশের মানুষের সহযোগীতায় বেড়ে উঠা। জীবন বাঁচাতে জীবিকার যোগানে দেন চায়ের দোকান। এভাবেই চলতে থাকে তার জীবন। কিন্তু এবার সরকারি অফিসের গাছের ডাল ভেঙে মাথায় পড়ে জীবন সংকটাপন্ন তার। এখন হাসপাতালে শুয়ে কাতরাচ্ছে আর বাঁচার আকুতি।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর শহরের চকলেঙ্গুরা এলাকার মৃত আব্দুল গণির ছেলে ফারুক। আপনজন বলতে কেউ নাই। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে নিজ চায়ের দোকানের পাশেই ভূমি অফিসের মরা গাছের ডাল ভেঙে মাথায় পড়ে আঘাত প্রাপ্ত হয়। ওই আঘাতের পরপর প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা নিলেও দুই হাত-দুই পা এখন অচলের পথে। তার চিকিৎসার জন্য আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা প্রয়োজন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুর্গাপুর পৌর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের একটি মরা গাছের ডাল ভেঙে পড়ে ফারুকের উপর। তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। তখন স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম, বুলবুল ও রাকিব তাকে ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। জানতে পারেন মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছে ফারুক। এসময় চিকিৎসরা জানায় অপারেশনসহ দ্রুত চিকিৎসা করাতে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার প্রয়োজন। পরে সেখান থেকে পুনরায় দুর্গাপুর ফিরিয়ে এনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।
এদিকে, ফারুকের চিকিৎসার জন্য বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে টাকা সংগ্রহে নেমেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এরপর দুপুরের দিকে উপজেলা প্রশাসন ছুটে আসেন হাসপাতালে এবং সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ছেলেটির আপনজন কেউ নেই। দূর্ঘটনার পর থেকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসার সব ধরনের চেষ্টা করছি। কিন্তু তার চিকিৎসার জন্য প্রায় তিন লাখ টাকা প্রয়োজন এই মুহুর্তে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেত্রকোনা জেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক রাতুল খান রুদ্র বলেন, সকালে ফারুক ভাইয়ের খারাপ অবস্থার কথা শুনে আমরা এগিয়ে এসেছি তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। আমরা টাকা সংগ্রহে কাজ করছি। কিন্তু সবার এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. তানজিরুল ইসলাম রায়হান বলেন, মাথার উপরে ডাল পড়ার কারণে ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত সবটুকু জায়গাই অচলের মতো অবস্থায় আছে। প্রাথমিকভাবে আমরা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছি কিন্তু একটা অপারেশন লাগবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর বলেন, আহত ফারুকের চিকিৎসার বিষয়ে সরকারিভাবে সহযোগিতার কার্যক্রম চলমান আছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে সার্বক্ষণিক আমরা যোগাযোগ রাখছি। যেহেতু তার আপনজন বলতে কেউ নেই এবং তার চিকিৎসা ব্যয়বহুল তাই সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
আপনার মতামত লিখুন :