নদী ভাঙা মানুষ জমিজমা নেই। চাল না পেলে কি খেয়ে বাঁচবো আমরা। আমাদের চাল অন্যদের কেনো দিবে। জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় সুলভ মুল্যে চাল না পেয়ে অভিযোগ করে এসব কথা বলেন ভুক্তভোগীরা। এ ঘটনার বিচার দাবি জানান তারা।
গত তিনদিনে সরজমিনে উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের পিংনা বাজারে চাল বিতরণ করার সময় বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সুবিধাভোগী প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তির সুলভ মুল্যের কার্ড আটকে রাখা হয়েছে। এতে করে চাল নিতে না পেয়ে তারা ফিরে গেছেন।
খাদ্য অফিস ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার পিংনা ইউনিয়নে চার জন ডিলারের মাধ্যমে ২ হাজার ৪৭ জন সুবিধাভোগীদের ১৫ টাকা ধরে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণে বরাদ্দ দেয় কর্তৃপক্ষ। গত সেপ্টেম্বর মাসে চাল বিতরণের সময় সুবিধাভোগীদের নিকট থেকে সুলভ মুল্যের কার্ডগুলো জমা নেয় ডিলাররা। এরপর অক্টোবর মাসের চাল চলতি সপ্তাহে বিতরণে মাইকিং করে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ভুক্তভোগীরা অনলাইনে সুলভ মুল্যের কার্ডের কপি সংগ্রহ করে চাল উঠাতে ডিলারের দোকানে যায়। এসময় তাদের চাল অন্যরা টিপসই দিয়ে তুলে নিয়ে গেছে বলে তাদের জানিয়ে দেয় ডিলাররা। চাল নিতে না পেয়ে হতাশ হয়ে প্রায় অর্ধ- শতাধিক সুবিধাভোগী ফিরে যায়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চাল উঠানোর কার্ডগুলো জমা নেয় ডিলাররা। এখন চাল তুলতে আসলে অনলাইনের কপি নিয়ে আসতে বলে। অনলাইনের কপি নিয়ে গত তিনদিন ধরে ঘুরছি ডিলারের কাছে। দেয় দিচ্ছি বলে ঘুরাতে থাকে আমাদের। বুধবার ফের ডিলারের কাছে গেলে আমাদের চাল অন্যরা তুলে নিয়ে গেছে বলে দোকান থেকে সরিয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে ডিলার তোতা মিয়া বলেন, গত মাসে আমাদের চারজন ডিলারকে ডেকে চাল বিতরণের কার্ডগুলো জমা নিতে বলে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নাজমুল হক নাজু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদসহ অন্য নেতারা। তাদের কথা মতো সুবিধাভোগীদের কার্ডগুলো সংগ্রহ করে নেতাদের কাছে জমা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে নাজমুল হকসহ অন্যরা কার্ডগুলো ফেরত দিলেও আব্দুর রশিদ ১৯০ টি কার্ড তার কাছে রেখে অন্য ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করে। চাল বিতরণ শুরু করলে কৌশলে ঐ ১৯০ ব্যক্তি শুরুতেই চাল তুলে নেয়। এরপর প্রকৃত কার্ডধারীরা বাদ পড়ে। কার্ডগুলো ফিরিয়ে দিলে এ সমস্যায় পড়তে হতোনা। এতে আমাদের ডিলারদের কোনো দোষ নেই বলে তিনি জানান।
ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি তো ডিলার না। সুবিধাভোগীদের কার্ড আমি জমা নেবো কেনো। আমি কোনো কার্ড বিতরণ করি নাই। আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নাজমুল হক নাজু বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের কিছু কার্ড আমার কাছে ছিলো। চাউল বিতরণের পূর্বেই কার্ডগুলো ডিলারদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বুলবুল আহাম্মদ বলেন-কার্ড জমা নিতে অফিস থেকে কোনো নির্দেশনা ছিলোনা। স্থানীয় একটি মিটিংযের কারনে গত মাসের চাল বিতরণে কিছুটা দেরিতে শুরু হয়। তবে প্রকৃত কার্ড ধারিদের মধ্যে চাল বিতরণ করে না থাকলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, কার্ড থাকার পরেও চাল পাইনি এমন কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :