ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

শাহজাদপুরে রোপা আমনের বাম্পার ফলন

মাসুদ মোশাররফ, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৪, ০৩:৪৪ পিএম

শাহজাদপুরে রোপা আমনের বাম্পার ফলন

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

টলমলে শিশিরভেজা মৃদু বাতাস যেন টেনে নিয়ে আসে হেমন্তকে। হালকা শীত, মিহি কুয়াশা, ওপরে ঝকঝকে বিশাল নীলাকাশ আর চারদিকে পাকা, আধাপাকা সোনালি ধানখেত; এ যেন আবহমান বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ রূপ। হেমন্তের এমন রূপসৌন্দর্য আর ঐশ্বর্যের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে ধান। চৈত্র-বৈশাখ মাসে যে বীজ বপন করা হয়, সেগুলোই অগ্রহায়ণে এসে পেকে যায়। ধু ধু বিশাল মাঠের চারদিকে শুধু ধান আর ধান। এমন সৌন্দর্যমণ্ডিত সোনারাঙা ধান দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় কৃষকদের। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্যের সাথে আলিঙ্গন করে বাংলার বউ-ঝিরাও ব্যস্ত হয়ে পড়ে সোনার ফসল ঘরে তুলতে। ঠিক এই সময়টায় দেখা যায় বাংলার প্রকৃত গ্রামীণ দৃশ্য। চারপাশে পাকা ধানের মুম গন্ধে মন ভরে যায়।

আবহমান বাংলার এমন সৌন্দর্যে ইরি-বোরোর আবাদ এবং অনিয়ন্ত্রিত বন্যার প্রভাবে কিছুটা ভাটা পড়লেও নতুন করে আবারও প্রাণ সঞ্চার হয়েছে আধুনিক পদ্ধতিতে আবাদের সুবাদে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ২৯০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে রোপা আমন। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে ঝকঝকে শিশির মেখে মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালী ধান। প্রাণ জুড়ানো আবহাওয়ায় মনের সুখে গান গেয়ে ধান কাটতে শুরু করেছে কৃষক। বসে নেই বাড়ির বউ-ঝিরাও। পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে সোনার ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সবাই। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং বাজারে ধানের ভালো দাম থাকায় দারুণ খুশি স্থানীয় কৃষকরা। শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের বেতকান্দি মাঠ পরিদর্শনের সময় কথা হয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মানিক হোসেন এবং মো. কামরুজ্জামানের সাথে।

তারা জানান, চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম, রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণও কম হয়। এছাড়া মাত্র সাড়ে তিন মাসেই এ ফসল কৃষক ঘরে তুলতে পারে। এতে যেমন খরচ কম হয় তেমনি অল্প সময়ে বেশী লাভজনক হওয়ায় এবং রোপা আমন ধানের খর গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারায় রোপা আমন চাষে ব্যাপক আগ্রহ বেড়েছে। এ অঞ্চলের কৃষকেরা রোপা
আমন জাতের ব্রি-ধান ৩৯, ৪৯, ৭১,৭৫, ৮৭ চাষ করেছে। এ জাতের রোপা আমন ধান বিঘাপ্রতি গড়ে ১৮ মণ ফলন হয়। এতে বিঘাপ্রতি ইউরিয়া ২০ কেজি, টিএসপি ১৩ কেজি, পটাস ১০ কেজি, জিপসার ৮ কেজি, জিংক মাত্র দেড় কেজি ব্যবহার করতে হয়।

এছাড়া মাত্র সাড়ে তিন মাসেই এ ফসল কৃষক ঘরে তুলতে পারে এবং ধান কাটার পরেই সরিষা চাষাবাদ করতে পারে।

উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের কৃষক সাইফুল, আলতাব, রওশন, মজিবর জানান, আগে বর্ষাকালে এ সমস্ত জমি পতিত থাকতো। এখন কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে রোপা আমন
চাষ করে বাম্পার ফলন হয়েছে। অসময়ে নতুন ধান পাওয়ায় একদিকে যেমন অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছলতা আসছে অপরদিকে নতুন ধানের পিঠাপুলি তৈরি করে জামাই খাওয়ানোরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সত্যি বলতে আগেকার দিনের নবান্ন উৎসব নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে এই ধান চাষ করে।

শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নাহিদুল ইসলাম বলেন, অল্প দিনে রোপা আমন ধান ঘরে উঠার ফলে কৃষকরা সহজেই সরিষা চাষে যেতে পারবে। কৃষকদের মাঝে

বিনামূল্যে আধুনিক জাতের রোপা আমন ধান এবং সার বিতরণ করা হয়েছে। সেইসাথে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে রোপা আমন চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। আগামীতে এ উপজেলায় রোপা আমন ধানের আবাদ আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।

আরবি/জেডআর

Link copied!