ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়সহ ২৯৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শহরের ঘোষপাড়া এলাকার বাপ্পী নামে একজন মৃত ব্যক্তিকে মামলায় জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। বুধবার রাতে পৌর শহরের ঘোষপাড়া এলাকার নারায়ন চন্দ্রের ছেলে সত্যজিৎ কুমার কুণ্ডু (৫৪) ঠাকুরগাঁও সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। সত্যজিৎ কুমার কুণ্ডু কেন্দ্রীয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
মামলার এজাহারে ২৯৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৫০০ জনকে আসামী করে ১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৪২৭/৪৩৫/৪৩৬/১১৪/৩৪ ধারায় ও ১৯০৩ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি দায়ের করা হয় বলে নিশ্চিত করেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুর রহমান।
মামলার আসামিরা হলেন-জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি দৌপ্রদী দেবী আগরওয়ালা, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ আপেল, পৌরসভার সাবেক মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সন্তোষ কুমার আগরওয়ালা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রিপন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও প্রিয় গ্রুপের চেয়ারম্যান বাবলুর রহমান, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত সমীর, সদর উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাহমিনা আকতার মোল্লা, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হক, রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্থ সারথি সেন, জেলা আওয়ামীলীগের মহিলা সম্পাদিকা আয়েশা সিদ্দিকা তুলি, ছাত্রলীগের (নিষিদ্ধ সংগঠন) নেত্রী লাবণ্য সরকার দিয়া, পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর দোলন কুমার মজুমদার, সিএম আইয়ুব বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক দিপেন্দ্রনাথ ঝা ও সাবেক ক্রিয়া অফিসার আবু মহিউদ্দীন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন-কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের (নিষিদ্ধ) সহ-সভাপতি সানোয়ার পারভেজ পুলক, রয়েল বড়ুয়া, আক্তারুল ইসলাম, আজাহারুল ইসলাম, মারজিনা আক্তার ঋতু, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ, পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জামিরুল ইসলাম, প্রবীর গুপ্ত বুয়া, ন্যাংড়া সোহেল, ন্যাংড়া সাদ্দাম, জাকারিয়া প্রমানিক,শামিনুর রহমান চৌঃ জয়, জুম্মান, সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নুর ইসলাম তালাশ, কোয়ালিটি ফ্যাশনের লাভলু, আকচা ইউনিয়নের দেবীগঞ্জ বাজারের গনেশ ঘোষ, গোবিন্দ ঘোষ, সুমন ঘোষ, জয়দেব চন্দ্র রায়, জ্যোৎস্না রানী ও ব্যবসায়ী জয় মহন্ত ও রিংকু গুহ ঠাকুরতা।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, উল্লেখিত ২৯৪ জন আসামীসহ অজ্ঞাতনামা ৫০০ আসামি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচীতে ধারালো ছুরি, শর্টগান, লোহার রড, চাপাতি, হকিষ্টিক, চাইনিজ কুড়াল, বাঁশের লাঠি সহ মারাত্মাক অস্ত্রসস্ত্রে সু-সজ্জিত হয়ে সত্যজিৎ কুমার কুণ্ডুসহ তাঁর লোকজনের উপর হামলা করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে ও ধাওয়া দিতে থাকে। আসামীদের সঙ্গে থাকা পিস্তলের ছোড়া গুলিতে উপস্থিত ছাত্র-জনতার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লেগে গুরুতর আহত হন। আসামীদের তাণ্ডবে সেই সময় মামলার বাদী শহরের ট্রাফিক মোড় থেকে দৌড়ে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
এ সময় আসামিরাও বিএনপি অফিসের চারপাশে অবস্থান নেন। তারা ককটেল ককটেল বিস্ফোরণ করলে বিএনপির এই নেতা প্রাণ রক্ষার্থে পার্টি অফিসে প্রবেশ করলে আসামিরা প্লাস্টিকের বোতলের প্রেট্রোল দিয়ে পার্টি অফিসে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এতে অফিসের আলমারিতে রক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রসহ অফিস বিল্ডিং এর অবকাঠামে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এতে পার্টি অফিসের ৫টি ল্যাপ্টপ, ২টি টিভি, ১টি ফ্রিজ, একাধিক চেয়ার-টেবিল ও ৩টি এসি আঙার হয়ে যায়। আনুমানিক ১ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে এবং সাক্ষীদের শারিরীক অবস্থা বেগতিক হলে ঠাকুরগাঁও-২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। অসুস্থ থাকায় ও সাক্ষীদের কাছ থেকে আসামীদের নাম সংগ্রহ করে এজাহার দায়েরে বিলম্ব হয়েছে।
এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুর রহমান বলেন, সত্যজিৎ কুমার কুণ্ডু নামে ব্যক্তি ২৯৪ জনের নাম উল্লেখ্য করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এজাহারে উল্লেখিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আসামীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :