বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সুজন মৃধা, কলাপাড়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৭:০০ পিএম

চর বিজয় লাল কাঁকড়া আর অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্য

সুজন মৃধা, কলাপাড়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৭:০০ পিএম

চর বিজয় লাল কাঁকড়া আর অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্য

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সাগরকণ্যা কুয়াকাটার অদূরে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা চর বিজয় যেন অতিথি পাখি ও লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ। ভ্রমন পিপাসু সব ধরনের পর্যটকদের মন কারবে কুয়াকাটার চর বিজয় গেলে। এ যেন প্রকৃতির অপরূপ লীলা খেলা। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অতিথি পাখি, লাল কাঁকড়া ও জেলেদের মাছ ধরা দৃশ্য উপভোগ করা যায়। চর বিজয় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে পূর্ব দক্ষিণ কোনে ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। স্থানীয় জেলের কাছে এই চরটি হাইরের চর নামে পরিচিত। চরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার। ২০১৭ সালে সরকারি ভাবে স্থানীয় জেলা প্রশাসক চরটির সরকারি মালিকানা ঘোষণা করার পাশাপাশি চরটি রক্ষার ও উন্নয়নের কাজ করার নির্দেশনা দেয়। বছরের বর্ষা মৌসুমে চরটি পুরোপুরি পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং শীত মৌসুমের আগমনে সমুদ্রের পানি কমতে থাকার সাথে সাথে বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে চরটি দেখা মিলে।

স্থানীয় জেলেদের কাছে পরিচিত হাইরের চর নামে ২০১৭ সালে সমুদ্র ভ্রমণরত কয়েক জন পর্যটক ও সাথে থাকা গাইডদের নজরে চরটি আসলে তারা এই চরে নামেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ নিয়ে একাধিক রিপোর্ট প্রচারিত হয়। এ চর বিজয় ভ্রমণে গেলে দূর থেকে লাল কাঁকড়া দেখে মনে হবে লাল গালিচা বিছানো। পাশাপাশি দেখা মিলবে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির একের পর এক ঝাঁক। অতিথি পাখি আর লাল কাঁকড়ার বিচরণ দেখে মনে হবে পুরো চরের মালিকানা যেন লাল কাঁকড়া আর অতিথি পাখিদের। চর বিজয় থেকে তাকালে দ্বীপটির চার দিকে অসংখ্য জেলেদের মাছ শিকারের ছোট বড় নৌকা এবং ট্রলারের দৃশ্য দেখা মিলবে।

জেলে শহিদুল ইসলাম মাঝি জানান, চর বিজয় শীত মৌসুমে প্রচুর পরিমানে লাল কাঁকড়া এবং অতিথি পাখি দেখা যায়। পাখি গুলো মানুষ দেখলে আকাশে উড়ে চরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গিয়ে বসে। আমরা যখন এই চরের কাছে মাছ ধরার জন্য নৌকা নিয়ে যাই তখন পাখি আর লাল কাকড়া দেখতে পাই। কাঁকড়া মূলত ছোট গুরা মাছ খায় তাই এরা চরের পানির কিনারেই বেশির ভাগ থাকে। এক একটি চক দেখে মনে হয় কয়েক লাখ কাঁকড়া থাকে। কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটক পাভেল আহমেদ বলেন, চর বিজয় আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। চারিদিকে পানি, মাঝখানে ছোট্ট একটি দ্বীপ এর এ তুলনা অতুলনীয়। চর বিজয় ভালো লাগার বিষয় হলো হাজার হাজার অতিথি পাখি ও যাকে যাকে লাল কাঁকড়া । ফাইবার বোর্ড ভাড়া করে চর বিজয়ে ঘুরে এসেছি।

ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) এর সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, চর বিজয় আমাদের দেশের সম্পদ এই দ্বীপের চার পাশের সমুদ্রের বিশাল জলরাশি এখানে রয়েছে লাল কাঁকড়া এবং অতিথি পাখি যেগুলো পর্যটকদের কাছে সবথেকে বেশি আকর্ষনীয়। এখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের সৌন্দর্যে আনন্দিত হবে যে কোন পর্যটক। বিশাল আকৃতির এই চরের সাথে স্থানীয় জেলেদের জীবন জীবিকার একটি বড় অংশ মিশে আছে। কুয়াকাটা থেকে দক্ষিণ পূর্ব কোনে চরটির অবস্থান কুয়াকাটার যত গুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে তার মধ্যে চর বিজয় অন্যতম। একদিকে একজন পর্যটক সমুদ্র পথে নৌ-ভ্রমনের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে অন্য দিকে গভীর সমুদ্রে জেগে ওঠা চর এর মনোরম দৃশ্য দেখতে পাবে। পাশাপাশি অপরূপ সৌন্দর্যের লাল কাঁকড়া এবং অতিথি পাখির রাজ্যের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা তাদের মুগ্ধ করবে।

মহিপুর বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ বছরে চর বিজয় বনায়নের জন্য ঝাউগাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে প্রাথমিক পর্যায়। গাছের চারা গুলো যদি বেঁচে থাকে তাহলে আমাদের বনবিভাগের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে আরো গাাছ লাগানো হবে। আমাদের বনবিভাগের পক্ষ থেকে পর্যটকদের কাছে অনুরোধ  তারা যেন লাল কাঁকড়া অতিথি পাখি সহ এখানকার জীববৈচিত্র্যের কোন ক্ষতি না করে। বনবিভাগের পাশাপাশি তারাও যেন জীববৈচিত্র্য রক্ষা সচেতন হয়।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের পুলিশ সুপার, মো.আবুল কালাম আজাদ বলেন, কুয়াকাটার অন্যতম আকর্ষনীয় স্থান চার বিজয়। গভীর সমুদ্রের জেগে ওঠা চর এখানে রয়েছে লাল কাঁকড়ার আর অতিথি পাখির সৌন্দর্য যেকোনো পর্যটক এমন দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হবে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ফাইভার বোট এবং স্পিড বোট এর মাধ্যমে এখানে যে সমস্ত পর্যটকরা ভ্রমণে যায় এবং যে সমস্ত বোট মালিক চালক রয়েছে তাদেরকে আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা দেয়া আছে, প্রত্যেক পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্য অবশ্যই প্রতিটি বোটে ধারন ক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত যাত্রী না ওঠানো এবং লাইফ জ্যাকেট থাকতে হবে, দক্ষ চালক, প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন চালিত তেল, মবিল, যন্ত্রপাতি বোর্ডে রাখতে হবে যাতে করে চর বিজয় আসা যাওয়ার মাঝে কোন ধরনের বিড়ম্বনা পোহাতে না হয় পর্যটকদের।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. রবিউল ইসলাম বলেন, কুয়াকাটার চর বিজয় পর্যটকদের কাছে একটি অন্যতম আর্কষনীয় দর্শনীয় স্থান। এখানে সমুদ্র পথে নৌ ভ্রমণের একটা বিশাল সুযোগ রয়েছে। এই চরের বিশেষ আর্কষণ হাজার হাজার অতিথি পাখি এবং লাল কাঁকড়া যেগুলো লোকালয় সচারাচর দেখা মিলে না। বিশেষ করে শীত মৌসুমে প্রচুর পরিমানে অতিথি পাখি আসে এই চরে। পাখি গুলো সাধারণত সামুদ্রিক মাছ খেয়ে থাকে। এখানে যে সমস্ত পর্যটকরা ভ্রমণে আসে তাদের কথা চিন্তা করে উপজেলা প্রশাসন এর পক্ষ থেকে অস্থায়ী ২টি টয়লেট এবং একটি যাত্রী ছাউনি তৈরী করার পরিকল্পনা রয়েছে যাতে করে পর্যটকরা এটি ব্যবহার করতে পারে এবং যাত্রী ছাউনির নিচে বিশ্রাম নিতে পারে।

তিনি আরো বলেন, কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটকরা যখন চর বিজয়ের উদ্দেশ্যে ভ্রমণে যাবে তখন সাথে করে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পানি,শুকনা খাবার সাথে নিয়ে যায়। চর বিজয়ের লাল কাঁকড়া এবং অতিথি পাখি থেকে সবাই যাতে দূরত্ব বজায় রেখে এবং উচ্চস্বরে কোন ধরনের সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার না করা হয় যেটি প্রাকৃতিক সম্পদ লাল কাঁকড়ার ও অতিথি পাখির উপর প্রভাব পরে। চর বিজয়ের জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশ রক্ষায় পর্যটক সহ স্থানীয় যারাই ঐখানে ভ্রমণে যাবে তাদের ব্যবহৃত খাবারের ব্যাগ, চিপসের প্যাকেট কিনবা খাবার পানির বোতল যেনো ঐখানে না ফেলে সেদিকে সবার খোয়াল রাখতে হবে। চর বিজয়ের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় অতিথি পাখি আর লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচার সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন ও বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি কাজ করে যাচ্ছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!