বিভিন্ন সেক্টরে পরিবর্তন শুরু হলেও বাংলাদেশ রেলওয়েতে কালো বিড়াল কিছুতেই যেন কমছেনা। স্টুয়ার্ড বা এটেনডেন্টদের দুর্নীতি বা দৌরাত্ব কিছুতেই কমছেনা দেশের রাষ্ট্রায়াত্ব যাত্রী পরিবহনের এই সেবা খাতে। যাত্রীদের ব্যাগ, মালামাল উঠানামা, নির্ধারিত সিট খোঁজে দেয়াসহ যাত্রী সেবায় কাজ করার কথা থাকলেও করছেন উল্টো দুর্নীতি। এসব এটেনডেন্টদের ঘুষ বা টাকা দিয়ে যেকোন গন্তব্যে যাওয়া যায় সে জন্য অনেকেই আবার টিকিট কাটছেন না। এতে করে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার অথচ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন বিভিন্ন ট্রেনের এসব এটেনডেন্টরা।
তাছাড়া জনবল সংকটে টিকিট চেকার গাড়িতে না ওঠলেই কালো ব্লেজার পড়ে হাতে খাতা-কলম নিয়ে টিটি (Travelling Ticket Examiner বা ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক)-এর ভাব নিয়ে হয়রানি শুরু করেন যাত্রীদের। যাত্রীদেরকে পুলিশ, জরিমানার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেন টাকা। টাকা না দিলে আবার বগি থেকে বের করে দেওয়া, হয়রানি করা, কটু কথা বলতেও দেখা যায় তাদের।
২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম অভিমুখী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনে দেখা মেলে এমন একজন নকল টিটি। তার নাম মোহন (ভাষ্যমতে)। বাড়ি টাঙ্গাইলে। রেলে চাকরি করেন ১৪তম গ্রেডে। তিনি দাবি করেন, টিটি ১৩তম গ্রেড মাত্র। আর এক গ্রেড প্রমোশন পেলে তিনিও টিটি হবেন। যাত্রীদের ভয় দেখিয়ে, টিকিট চেক করছেন, না পেলে তাদের কাছ থেকে টাকা উঠাচ্ছেন কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্ষমা চেয়ে প্রতিবেদককে জড়িয়ে ধরা চেষ্টা করেন। হাত জোর করে মিনতি করেন ভিডিও না করার জন্য। তিনি বলেন, সরকার তাকে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা বেতন দেয়, সুতরাং তাঁর এসব (দুর্নীতি) না করলেও চলে।
দেখা যায়, অভিযুক্ত মোহন বগির অধিকাংশ যাত্রীর টিকিট চেক করছেন, টিকিট না পেলে ভাড়া আদায় করছেন, বেশী টাকা দিলে আসনবিহীন যাত্রীকে অন্য বগিতে গিয়ে সিটে বসিয়ে দিচ্ছেন।
ট্রেনটির নিয়মিত এক যাত্রী জানান, মোহন প্রতিদিনই এমন কাজ করেন। তিনি প্রচুর টাকা আদায় করেন বিনা রশিদে। কেউ প্রতিবাদ করলে পুলিশ ও ক্ষেত্র বিশেষে আসল টিটি এনে বেশী টাকা জড়িমানা আদায় করেন। সহজ সরল হলেতো রেহাই নেই।
একই চিত্র দেখা যায়, নোয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা উপকূল একপ্রেস ট্রেনেও। এই ট্রেনের খাবার বিক্রেতারাও করেন সিট বানিজ্য। এটেনডেন্টরা জড়িত নানা অপকর্মে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুমিল্লা থেকে আসনবিহীন টিকেট নিয়ে এসি বগিতে স্বস্ত্রীক ওঠা এক লোক ট্রেনে ওঠা মাত্রই কোথায় যাবেন, কত নাম্বার সিট, টিকিট আছে কিনা প্রশ্ন শুরু করেন।
ওই যাত্রী জানান, তিনি সিটসহ টিকিট না পেয়ে আসনবিহীন টিকিট কেনেছেন, বগিতে প্রচুর সিট খালি সেজন্য বসেছেন। কেন বসেছেন ওঠে যেতে হবে, আসনবিহীন টিকিট এসিতে এলাও না। লোকটি বুজাচ্ছেন সিট খালি যাচ্ছে, তাছাড়া সিট পেলে তিনি অবশ্যই আসনবিহীন টিকিট নিতেন না। এটেনডেন্ট রবিউল ইসলামের সাথে এসময় যোগ দেন আরেকজন এটেনডেন্ট। কমপ্লিট স্যুট পড়া ওই ভদ্রলোক অনেকটা বিড়ম্বনায় পড়ে যান তাদের ওই ব্যবহার ও কটুবাক্যে। কিছুক্ষণ পড়েই দেখা যায়, দুই এটেনডেন্ট সিটে বসে রাজসিক আয়েশি ঘুম দিয়েছেন।
মোশারফ হোসেন নামের একজন যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, এটেনডেন্টরা অনেক বেপরোয়া ও সঙ্গবদ্ধ। সুযোগ পেলেই যাত্রীদের হয়রানি করেন। টাকা দিলেই চলে। না দিলেই যত বিপত্তি। বাসের কনডাক্টরের মতো টাকা তুলেন এটেনডেন্টরা, এটেনডেন্টদের কাছ থেকে আবার টাকা আদায় করেন টিটিরা। তিনি আরো বলেন, কিছু টিটি আবার টাকা আদায় করে রশিদ দেন না। সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হাতিয়ে নিচ্ছেন এই দুর্নীতিবাজ চক্রটি।
আরেকজন নারী যাত্রী অভিযোগ করেন, এসব এটেনডেন্ট মহিলা যাত্রীদের হয়রানি করেন বেশী। কোন কারনে টিকিট না পেয়ে বা সময়ের অভাবে টিকিট না কাটলেই তাদের হাত থেকে রেহাই মেলে না, লজ্জায় তাদেরকে টাকা দিতে হয়।
জানা যায়, লাকসাম আখাউড়া রেলরুটে কয়েকটি ট্রেনে নিয়মিত টিকিট পরীক্ষা করেন টিটি। তবে চট্টলা বা অন্য কিছু ট্রেনে টিটি না উঠলেই এটেনডেন্টরা টিটি এর ভাব নিয়ে টিকিট চেক করার নামে যাত্রীদের বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নেন টাকা।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের পদটি গত দুই মাস ধরে খালি পড়ে আছে। আগের স্টেশন মাস্টার মো. সাহাবুদ্দিন চট্টগ্রাম বদলী হওয়ার পর স্টেশন মাস্টার ছাড়াই চলছে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্টেশন।
আপনার মতামত লিখুন :