ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

সোমেশ্বরী নদী থেকে কয়লা তুলে সংসার চলে ওদের

মোরশেদ আলম, দুর্গাপুর

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৪, ০৪:০৩ পিএম

সোমেশ্বরী নদী থেকে কয়লা তুলে সংসার চলে ওদের

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

দিনের আলো ফুটতেই শুরু হয় ওদের কর্মব্যস্ততা। কেউ কেউ ঠেলা জাল নিয়ে, আবার কেউবা বিশেষ একধরনের গোলাকৃতির চালুনি নিয়ে নেমে পড়েন নদীতে। দিনভর রোদে পুড়ে সন্ধ্যা অবধি চলে এই কর্মযজ্ঞ। ভাসমান কয়লা কুড়াতে নদীর পানি আর বালুচর খোঁড়াখুঁড়ি করে ঠেলাজালে তুলে ধুয়ে আলাদা করেন কয়লা। আর এসব কয়লা বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের মুখে দু-বেলা আহারের জোগান দেন এসব মানুষ।

কয়লা উত্তোলন কাজে শুধু নারীরাই নন, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সি কয়েক হাজার মানুষ নদী থেকে প্রতিদিন কয়লা তোলেন। এটি যুগ যুগ ধরে করে আসায় এক ধরনের পেশায় পরিণত হয়েছে।

এ দৃশ্য দেখা মিলে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর বুকে। রোববার (১৭ নভেম্বর) সকালে সোমেশ্বরী নদীতে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় কয়লা উত্তোলনকারী বড়ইকান্দি গ্রামের হালিমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি জানান, ভোরে খাবার খেয়ে নৌকা, জাল, বেলচা ও কোদাল নিয়ে কয়লা তুলতে নদীতে চলে আসেন। নদী থেকে কয়লা তোলার পরপরই পরিষ্কার করতে হয়। পরে প্রতি মন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে। আবার ভালোভাবে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার ও শুকিয়ে বিক্রি করলে তখন আরো ২০ টাকা বেশিতে বিক্রি করা যায়।

আমেনা খাতুন নামের আরেকজন বলেন, সারাদিন কয়লা তুলে একেকজন দিনে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। উত্তোলিত কয়লা নদীর চর থেকেই কিনে নেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

তিনি বলেন, ২০ বছরের বেশি সময় হইবো কয়লা তুলে আইতেছি, এই কয়লা তুলেই হাট-বাজার করি, পোলাপাইন লইয়া চলি। এককথায় এইডার উপর ভরসা কইরা বাঁইচা আছি।

রমজান আলী বলেন, এলাকায় তেমন কোনো কাজ-কাম নাই। আমাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র ভরসাস্থল এই সোমেশ্বরী নদী। আগে বালুর ঘাট থাকতে বালুর কাজ করছি কিন্তু এখন কয়লা তোলি।

টুকন সরকার নামের এক কয়লা ব্যবসায়ী বলেন, শ্রমিকরা সারাদিন নদীতে কয়লা তুলে নিয়ে এসে আমাদের কাছে বিক্রি করে। আমরা সবার কাছ থেকে কিনে কিনে জমিয়ে তারপর বিক্রি করি। তিনি বলেন, সারাদিন রোদ-বৃষ্টিতে কষ্ট করে এই কয়লা তুলছে তারা। আর আমাদের কাছে বিক্রি করে সবাই সংসারের খরচ জোগান দিচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সোমেশ্বরী নদী ঘেঁষা সদর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান) হাবিবুর রহমান হৃদয় বলেন, প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে পাহাড়ি ঢালের পানিতে সোমেশ্বরী নদীতে ভেসে আসা গুড়া কয়লা তুলে সংসার চালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। বর্তমানে বালু, সাদামাটি উত্তোলন বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক আর্থিক সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু কয়লা তুলে অনেকেই আর্থিক সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হচ্ছে।

সোমেশ্বরী নদী যুগের পর যুগ ধরে মানুষের জীবিকার যোগান দিয়ে আসছে। কেবল কয়লা নয় বালু, পাথরের খনিজ সম্পদে ভরপুর। তাছাড়াও পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার এই উপজেলায় ঘুরতে আসা পর্যটনদের নৌকায় করে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উপার্জন করে আসছেন অনেক মাঝি। শীতকাল আসলে বাড়তে থাকে পর্যটকের আনাগোনা। পাহাড়, নদী, কয়লা, পাথর, চিনামাটিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর নেত্রকোনার সুসঙ্গ দুর্গাপুর।

আরবি/ এইচএম

Link copied!