মিষ্টি আঙ্গুর ফলে ভরে আছে বাগান। দেখলেই খেতে স্বাধ জাগে। চালাক শেয়ালের সেই গল্পের কথা মনে আছে! আঙ্গুর ফল টক! সেই গল্পে বিদেশী ফল আঙ্গুর, দেশে চাষ করলে হয় টক! ধরণাটা এমন ছিল। এই ধারণাকে বদলে দিতে গত ক`য়েক বছরের চেষ্টায় ৩৫ জাতের অঙ্গুর নিয়ে রিতিমত গবেষণা করেছেন নাটোর সদর উপজেলার বাগরোম গ্রামের তরুন কৃষি উদ্দোক্তা আমজাদ হোসেন। তার বাগানের রাশিয়ান মিষ্টি আঙ্গুর যিনি খাচ্ছেন, হচ্ছেন অবাক! তাক লাগানো মিষ্টি স্বাদের রাশিয়ান আঙ্গুরের ৫টি জাতে ফলন এসেছে থোকায় থোকায। খেতে মিষ্ট সুস্বাদু হওয়ায়, বানিজ্যিক চাষ শুরু করেছেন তিনি।
নাটোর শহরতলীর কান্দী ভিটুয়া এলাকায় দের বিঘা জমিতে বানিজ্যিক বাগান গড়ে তুলেছেন তিনি। এখানে পলি নেট হাউজে চাষ হচ্ছে আঙ্গুর। এর ফলে পোকার আক্রমণ নেই বাগানে। আবার তাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায় পলিনেট হাউজে। সরোজমিন ঘুরে তরুন উদ্দোক্তা আমজান হোসেনের আঙ্গুর বাগানে বসে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে ৩৫ জাতের আঙ্গুরের চারা সংগ্রহ করে, তা নার্সারিতে রোপানের পর, নিবির পরিচর্যা করেছেন তিনি।
অবশেষে ৫ জাতের অঙ্গুরের ফল মিষ্ট ও ফলনে সন্তুষ্ট, নাটোরের মাটিতে চাষ যোগ্য। গবেষনায় দেখা গেছে, প্রতি গাছে প্রথম বছরেই ১০ কেজির বেশি ফল পাওয়া যাচ্ছে। এর পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে, খেতে স্বুস্বাদু, সুমিষ্ট এসবআঙ্গুর জাত নিয়ে, বানিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু করেছেন তিনি।
দের বিঘা জমিতে তিনি নিজের পরিক্ষিত চারা রোপনের কয়েক মাসের মধ্যে টালি/মাচা পরিপূর্ণ হয়ে গেছে আঙ্গুর গাছে। রোপনের ৬ মাসের মধ্যে ফল আসতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, খুবই খুশির সংবাদ, আঙ্গুর এখন ১২ মাস পাওয়া যাবে। রাশিয়ান এই জাতগুলো ১২ মাস ফল আসছে আমাদের নাটোরে। সিজিনে প্রচুর ফল থাকে। বছরের অন্য সময় তুলনামূলক এখন কম ফল ধরেছে। তবে তা সন্তোষজনক। গুণগত মান ঠিক আছে বলে দাবি আমজাদ হোসেনের।
বাগানে ঘুরে গণমাধ্যম কর্মী খন্দকার মাহাবুব রহমান বলেন, সব সম্ভবনার দেশ বাংলাদেশ। আর নাটোরের মাটি এত উর্ব্বর যে, এই মাটিতে সবধরণের ফসল ফলে। আমজাদ সাহেবের আঙ্গুর বাগান দেখে খুবই আশা জাগছে মনে। বিদেশ নির্ভরতা কাটিয়ে এসব ফল দেশে উৎপাদন বাড়বে বলে বিশ্বাস। সাধারন মানুষ সরাসরি এর সুবিধা পাবে। আঙ্গুর চাষী আমজাদ হোসেনের সাফল্য কামনা করেন তিনি। প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলা ও স্থানীয়রা আসছে বিস্ময় নিয়ে, আঙ্গুর বাগান দেখতে।
সিরাজগঞ্জের তারাশের আরিফুল ইসলাম বাগান ঘুরে দেখে বলেন, আমজাদ ভাইয়ের বাগান দেখে প্রান জুরিয়ে গেল। বাগানে থোকা থোকা লাল টসটসে আঙ্গুর ঝুলে আছে। আমি চারা নিব। চার বিঘা জমিতে বাগান করার ইচ্ছা আছে।
বিকেলে দর্শনার্থীদের পদচারনা বাড়ে।
আব্দুল জব্বার নামে এক দর্শনার্থী বলেন, পাকা আঙ্গুর গাছ থেকে পেরে খেয়ে জানালেন তৃপ্তির কথা। মিষ্টি স্বাদ, যা বাজারের আমদানী করা আঙ্গুরের চেয়ে খেতে ভাল। তিনিও আগ্রহী তার বাড়ির পারিবারিক বাগানে আঙ্গুর চাষের।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলিমা জাহান বলেন, নাটোরে অনেক বিদেশী জাতের ফল বানিজ্যিক চাষ হচ্ছে। আঙ্গুর চাষের চেষ্টা অনেকেই করেছেন, তবে এবার সুমিষ্ট আঙ্গুরের ফলন হচ্ছে। আঙ্গুর চাষ আগামীতে সম্ভবনাময় ফসল হবে বলে মনে করছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশে উৎপাদিত সুমিষ্ট আঙ্গুর বিদেশী আমদানি নির্ভরতা কমাবে, দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনার মতামত লিখুন :