বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে টিসিবির পণ্য বিক্রয়ের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে একটি অনিয়মের লিখিত অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রদান করছেন এবং অর্ধ শতাধিক উপকারভোগী বিক্ষোভ করেছেন । তেল, ডাল ছাড়া শুধুমাত্র চাল বিতরণ করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার উপজেলার চন্দন বাইশা ইউনিয়নের টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হয়েছে। সেখানে ১৫০ টাকার বিনিময়ে শুধুমাত্র ৫ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। তবে অভিযোগকারীরা উল্লেখ করেছেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ডিলার পণ্য বিতরণ করার খবর কাউকে জানায়নি, না জানিয়েই তিনি পণ্য বিতরণ করেছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পণ্য বিতরণের কথা থাকলেও সেদিন যোহরের নামাজের পর থেকে আছরের নামাজের পর পর্যন্ত খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই পণ্য বিতরণ করা হয়েছে। এরপর পণ্য বিতরণ বন্ধ করা হয়েছে।
এতে এ ইউনিয়নের শতাধিক উপকারভোগী গরীব অসহায় টিসিবির পণ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। পরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে শতাধিক উপকারভোগী বিক্রয় কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ করেন। পণ্য বিতরণের দিন টিসিবির মূল ডিলার এবং তার কোনও প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন না। উপস্থিত ছিলেন না সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসারও। শুধুমাত্র খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ডিলার আব্দুল মুত্তালেব টিসিবির ৫ কেজি চাল কয়েকজন উপকারভোগীর মধ্যে বিতরণ করে বাকি ৫৫ বস্তা চাল কালোবাজারে বিক্রি করেছেন।
উপকারভোগী চন্দন বাইশা আদবাড়িয়া গ্রামের খোদেজা বেগম (৬৫) বলেন, বাজারে ৬০ টাকা কেজি চাল কিনে খেতে হয়। সেখানে টিসিবির ৩০ টাকা কেজি চাল কিনে কয়েকদিন খেয়ে পেটের খিদাটা নিবারণ করতাম। কোনদিকে কখন যে টিসিবির মাল দিয়ে গেছে, তার কোনও খবরই পেলাম না। পরে শুনলাম যুহরের নামাজের পরে থেকে দেওয়া শুরু করে আছরের নামাজের পর পর্যন্ত চাল দিয়ে শেষ করেছে। টিসিবির কমদামের তেল দিয়ে সারা মাস চলতাম, এখন শুনছি তেল ডাল আর দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে আমরা এখন কি খেয়ে বাঁচব?
অভিযুক্ত মুত্তালেব মুঠোফোনে বলেন, আমি তো টিসিবির ডিলার না। আমি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার। টিসিবির ডিলার অনেকদিন আগে আমার নিকট থেকে চালগুলো ক্রয় করেছেন। চালগুলো নষ্ট হচ্ছে তাই আমি নিজে উপস্থিত থেকে টিসিবির উপকার ভোগীদের মাঝে বিতরণ করেছি।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার বলেন, আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। আমি অনেকদূর ট্রেনিং এ এসেছি। ডিলার আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি তাকে বিতরণ করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু তার তাড়াহুড়োর জন্য আমি বিতরণের সময় সেখানে আমার প্রতিনিধি প্রেরণ করেছিলাম। আমার প্রতিনিধি বিক্রয় কাজের উদ্বোধন করে বিক্রয় পয়েন্ট থেকে চলে এসেছেন। পরে আমি খবর নিয়েছি সবগুলো চালই সেখানে বিক্রি করা হয়েছে।
চন্দন বাইশ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি চাঁন মিয়া বলেন, বঞ্চিত শতাধিক উপকারভোগী মঙ্গলবার সকালে আমার বাড়িতে টিসিবির পণ্য বিতরণের অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে আমার বাড়িতে এসেছিল। আমি তাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছি।
চন্দন বাইশা ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুন নবী হিরো বলেন, টিসিবির পণ্য বিতরণ বিষয়ে ডিলার বা তার প্রতিনিধি আমার সাথে কোনও যোগাযোগ করেননি। এমনকি তারা আমার সচিবের সাথেও যোগাযোগ করেননি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ হাতে পাওয়া গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের টিসিবির ডিলার মেসার্স শাহানারা ট্রেডার্স এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :