আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য চাঁদপুর-ঢাকা নৌপথ এই অঞ্চলের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এর কারণে বিলাসবহুল লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। স্থানীয়দের দাবীর প্রেক্ষিতে চাঁদপুর শহরের মাদ্রাসা রোড এলাকায় আধুনিক নৌ-বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।
প্রায় দেড় বছর আগে এই বন্দর নির্মাণকাজ শুরু হলেও এখন চলছে ধীরগতিতে। যার ফলে দুর্ভোগ বাড়ছে বন্দর দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের। তবে নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা জটিলতায় নির্মাণকাজ কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও দ্রুত সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২.২ একর জমিতে নির্মিত আধুনিক নৌ-বন্দর প্রকল্পের ব্যয় প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা ধরা হলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ কোটিতে। যার নির্মাণ কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘তমা কনস্ট্রাকশন’।
প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মেঘনা নদীর পাড়ে চাঁদপুর আধুনিক নৌ-বন্দর নির্মাণকাজের তোড়জোর চলছে। যেখানে ১ হাজার ৫শ’ স্কয়ার মিটার এলাকায় চারতলা বিশিষ্ট তিনটি ভবন নির্মাণসহ স্থাপন করার কথা রয়েছে পন্টুন, গ্যাংওয়ে, পার্কিং ইয়ার্ড, এক্সটার্নাল ব্রিজ। একই সাথে চলছে বন্দরে যাতায়াতের রাস্তা প্রশস্থকরণের কাজ। ভবন নির্মাণের জন্য করতে হবে ৩১০টি পাইলিং।
ইতোমধ্যে ১৫০টি পাইলিং এর আংশিক ও ৮৬টি পাইলিং এর কাজ সম্পন্ন হলেও এরই মধ্যে কেটে গেছে ১৬ মাস। অথচ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২৪ মাস। ২০২৩ সালের আগস্টে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের মে মাসে। অথচ এখনো বাকি পড়ে আছে প্রকল্পের ৮০ ভাগেরও বেশি কাজ।
এদিকে, ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সাথে যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরটি আধুনিকায়নে ২০১৬ সালে একনেক সভায় অনুমোদন পায়। এর পর থেকে উন্নত সেবার আশায় বুক বাঁধে এই বন্দর ব্যবহারকারী চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, শরীয়তপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার হাজারো যাত্রী।
লঞ্চ যাত্রী মামুন বলেন, আধুনিক নৌ টার্মিনালের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। এখনো দৃশ্যমান কোন কিছুই হয়নি। কবে এই কাজ শেষ হবে কোনো হিসেব নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালীপনায় এমন ধীরগতিতে চলছে নির্মাণ কাজ। এতে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
ফরিদগঞ্জ আসা ঢাকাগামী যাত্রী গিয়াস উদ্দিন বলেন, অস্থায়ী এই নৌ টার্মিনালে নেই কোনো বসার স্থান, নেই শৌচাগার কিংবা যাত্রী ছাউনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে যাতায়াতের সময় বিপাকে পড়তে হয়। বিশেষ করে অসুস্থ্য ও নারীদের ভোগান্তি বেশি হয়। ভেবেছিলাম দ্রুত নৌ টার্মিনালের কাজ শেষ হবে এবং আমরা নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবো। কিন্তু সেই সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। আমরা চাই, দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হোক।
বিআইডব্লিউটিএ’র জেলা বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মো. বছির আলী খান বলেন, চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট থেকে ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন ছোট-বড় অর্ধশতাধিক লঞ্চ চলাচল করে। প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করলেও বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে তা বেড়ে দাঁড়ায় কয়েক গুণ। বন্দরের কাজ শেষ না হওয়ায় যাত্রীদের পর্যাপ্ত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় সময়ই তারা আমাদের সাথে উচ্চবাচ্য করে। কিন্তু কাজের যেই গতি তাতে কবে নির্মাণ শেষ হবে বলা যাচ্ছে না। আমরা চাই কাজ দ্রুত শেষ হোক, যেন যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারি।
প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হয়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের কোনো কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও প্রকল্প পরিচালক আইয়ুব আলী বলেন, আমাদের এই কাজের জন্য মেয়াদ ছিল ২৪ মাস। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ মাস পার হলেও কাজ শেষ হয়েছে ১৬ শতাংশের মতো। পাইলিং কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় মাটির নিচে ১০ মিটার পর্যন্ত বোল্ডার রয়েছে। এসব কারণে পাইলিং কাজ শেষ করতে সমস্যায় পড়তে হয়। পরবর্তীতে বিশ্ব ব্যাংক ও বিআইডব্লিউটিএ’র ট্যাকনিকেল টিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিজেল হ্যামার দিয়ে পাইলিং এর কাজ শুরু করি।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৮৬টি পাইলিং এর কাজ পুরোপুরি ও ১৫০টি পাইলিং এর আংশিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশাকরি, নভেম্বর মাসের মধ্যে পাইলিং এর কাজ শেষ হয়ে যাবে এবং আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে ভবনের কাজ শেষ করতে পারব।
আপনার মতামত লিখুন :