ঢাকা শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫
এলাকায় খুশির আমেজ

৫৩ বছর পরে চেয়ারম্যানের নিজ উদ্যোগে কাঠের সেতু নির্মাণ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৫, ০৩:৩৯ পিএম

৫৩ বছর পরে চেয়ারম্যানের নিজ উদ্যোগে কাঠের সেতু নির্মাণ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলে ও সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়ন ও  যশোর জেলার কেশবপুর   উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন এর ২০থেকে ২৫ গ্রামের মানুষের পারাপারের জন্য কপোতাক্ষ  নদের উপর  একটি ব্রিজ এর জন্য দুই ইউনিয়নের এলাকাবাসী দীর্ঘদিন  অপেক্ষা  করে না পাওয়ার কারনে এবার  তাদের  দুঃখ লাঘবের জন্য  এলাকাবাসীর স্বার্থে ও  সামনে মধুমেলাকে কেন্দ্র করে সাধারণ লোকজনের পারাপারের  জন্য নিজ উদ্যোগে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার ১ নং ধানদিয়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন  প্রায় ৬ লক্ষ টাকা খরচ করে কপোতক্ষ নদের উপর কাঠের সাঁকো তৈরি  করে দিচ্ছেন। যা  ইতিমধ্যেই এলাকাবাসীর নজর কেড়েছেন।

উল্লেখ্য, কাঠের সাঁকোটি করার আগে এখানে  নৌকা দিয়ে পারাপার এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বাসের  সাঁকো তৈরি করে লোকজন পারাপার হচ্ছিল। মাঝখানে সেটা নদীতে শ্যাওলার ও জোয়ারের পানিতে   নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পুনরায় নৌকায় যাতায়াত শুরু করে ২ ইউনিয়নের এলাকাবাসী। যার কারনে এলাকাবাসীর ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার জন্য যাতায়াত ও মালামাল আনা নেওয়ার ব্যাপক অসুবিধায় পড়তে থাকে।এদিকে  প্রতিবছর মধুমেলা আরম্ভ হলে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের ও নদী পারাপারের  চাপ তিন গুণ বৃদ্ধি পায়।

আরো জানা যায় এ দুই উপজেলার ২০ থেকে ২৫ গ্রামের ১২ থেকে ১৫ হাজার মানুষ এই সাঁকোর  উপর দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে এরমধ্যে স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার ৩০০ থেকে সাড়ে তিনশো ছাত্রছাত্রী এর উপর দিয়ে যাতায়াত করে। 

কিন্তু একটি মাত্র নৌকা দিয়ে এতগুলো লোক নদী পারা পার হয়ে যাতায়াত করতে অসুবিধা হওয়ার কথা চিন্তা করে উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর আলম নিজো উদ্যোগী  হয়ে কাঠ দিয়ে  সাঁকোটি  তৈরি করার পরিকল্পনা  গ্রহণ করেন।

আর এই দুই উপজেলার যে গ্রামের মানুষগুলো এই সাঁকো দিয়ে বেশি যাতায়াত করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রাম হল শার্শা, সেনেরগাতি, কৃষ্ণনগর, শান্তলা, ধানদিয়া , সারুলিয়া,  ঝরগাছা, দৌলতপুর, নগরঘাটা, পাটকেলঘাটা, শাকদাহ, ভৈরব নগর, ত্রিশমাইল, সৈয়দপুর, পাঁচপাড়া, বাটোরা, গরেরডাঙ্গা, খোরদো ও কোমোরপুর।

বর্তমানে জাহাঙ্গীরের পরিচালনায় সাঁকোটি দ্রুত তৈরী করার জন্য তার ভাই সুমনের দেখভাল করার কারনে কাঠ দিয়ে সাঁকো তৈরীর কাজ  দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।সরোজমিনে দেখা যায় সাঁকোটির  কাজ  ইতিমধ্যেই কিছুটা  দৃশ্যমান  হয়েছে। সুমন বলেন সামনে মধু মেলার কারণে দ্রুত সাঁকোটির কাজ শেষ করতে হবে এজন্য জাহাঙ্গীর ভাইয়ের তরফ থেকে আমি সব সময় সাঁকোটি  দেখভাল করছি আশা রাখি এক সপ্তাহের ভিতরে সাঁকোটির কাজ শেষ করতে পারবো।

প্রতক্ষদর্শী মোহাম্মদ সেলিম শেখ বলেন, আগামী ২৪ জানুয়ারি থেকে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিন উপলক্ষে সাত দিনের মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরা থেকে সড়ক পথে দ্রুত মধুমেলায় যাওয়ার জন্য এ সাকোর উপর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০হাজার মানুষ যাতায়াত করবে। পুরানো সাঁকোটি ভেঙ্গে পুনরায় একটি নতুন সাঁকো তৈরি করে দেওয়াই স্থানীয় লোকজন ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরকে সাধুবাদ জানাই।

এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমি পরপর তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি জনগণের ভালোবাসার কারণে। শুধু সাঁকো না মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য এরকম কাজ আমি অনেক করে থাকি। সম্প্রতি নিজে উদ্যোগে ও গ্রামবাসীর সহযোগিতায় প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে আরো একটি রাস্তা সংস্কার করে দিয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমি নির্বাচিত হয়েছি শুধুমাত্র সৎ ও নিষ্ঠার সাথে আমি আমার দায়িত্ব পালন করি বলে। এই অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করলে তাদের ভোগান্তি আর থাকবে না।

এলাকাবাসী  জানায়, দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের কেশবপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সাগরদাঁড়িতে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহ ব্যাপী মধুমেলা শুরু হবে আগামী ২৪ জানুয়ারি। যার কারনে সাঁকোটির কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে আমরা সবাই খুশি।

জানা যায়, এবারের মধুমেলায় বিভিন্ন বিনোদনমূলক আয়োজনে প্রতিদিন থাকবে মধুমঞ্চে দেশ বরেণ্য লেখক ও কবি সাহিত্যকদের উপস্থিতিতে আলোচনা, বিভিন্ন প্রদর্শণী যার মধ্যে সার্কাস, যাদু প্রদর্শনী, মৃত্যুকূপ, শিশু বিনোদন এবং কুটির শিল্প প্রদর্শনী উল্লেখযোগ্য। ইতিমধ্যে সপ্তাহ ব্যপী মধুমেলা সুন্দরভাবে উদযাপনের জন্য মেলা মাঠের ইজারাদার আকরাম হোসেনের কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেছে।মঙ্গলবার সকালে সাগরদাঁড়ি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত আম্রকানন। মধুমঞ্চের ও মেলার মাঠ পরিদর্শনকালে দেখাগেছে, মেলার মাঠ ইজারাদার ও সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকরাম হোসেন তার সহযোগীদের সাথে নিয়ে মেলার মাঠ ও বিভিন্ন প্যান্ডেল তৈরির কাজে খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন,  সাগরদাঁড়ির মধুমেলা আমাদের উপজেলাবাসীর গর্বের । এবারের মধুমেলা অতিতের সকল প্রকার অশ্লীলতা পরিহার করে সুন্দরভাবে মেলা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেনের সার্বক্ষণিক পরামর্শে ও দিক নির্দেশনায় মধুমেলাকে সুন্দর ও স্বার্থক করতে সবকিছু করা হচ্ছে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে মধুমেলা অনুষ্ঠিত হবে। এবিষয়ে তিনি এলাকার সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। আর  এ মেলায় সড়কপথে দ্রুত যাওয়ার জন্য নদী পারাপারের জন্য  এই সাঁকোটি ২ ইউনিয়নসহ মেলাই আগত দর্শনার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ  বড় ভূমিকা রাখবে।

এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন আরো বলেন, আমরা মেলার পরে দ্রুত উদ্যোগ নেব এখানে একটি  ব্রিজ করার জন্য। 

অপরদিকে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ রাসেল বলেন, মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের উপরে এ উপজেলার এলাকাবাসীর কথা মাথায় রেখে একটি ব্রিজ যাহাতে এই জায়গায় দ্রুত করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!