ঢাকা শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪

মসজিদ নির্মাণ না করেই কোটি টাকার বেশি বিল নিয়ে গেছে ঠিকাদার

মাদারীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৪, ০৭:২৯ পিএম

মসজিদ নির্মাণ না করেই কোটি টাকার বেশি বিল নিয়ে গেছে ঠিকাদার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মাদারীপুরে সদর উপজেলার মডেল মসজিদ নির্মাণ না করেই ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা বিল নিয়ে লাপাত্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নিয়ম মোতাবেক এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সদর উপজেলা মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ ৫ বছরেও শেষ হয়নি। শুধুমাত্র পাইলিং করে তাদের বিল নিয়ে গেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। জায়গা নির্ধারণ জটিলতায় মসজিদ নির্মাণ কাজ বিলম্ব হচ্ছে বলে দাবি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের। এতে স্থানীয়দের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ মুসলমানরা। যদিও বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ গণপূর্ত অধিদফতর বলছে, পূর্বের স্থানেই শীঘ্রই মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জাান গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভেতরে তিনতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের মে মাসে। এক বছরের মধ্যে নির্মাণ শেষ হবার কথা থাকলেও ২০২১ সালে শেষ হয় শুধুমাত্র পাইলিংয়ের কাজ। এরপর ঝোঁপঝাড় আর কাশবনে ছেঁয়ে গেছে প্রকল্প এলাকা। আবার কোথাও পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। অথচ, এখানেই হওয়ার কথা ছিল মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। পরে মসজিদ নির্মাণের জায়গা পরিবর্তনের জন্য ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ে চিঠি দেয় তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন। এতেই বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণ কার্যক্রম। আর এই সুযোগে গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম খানের যোগসাজশে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে সোয়া কোটি টাকারও বেশি বিল নিয়ে গেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা বলছেন, প্রকল্পের জায়গা নির্ধারণের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই পিছিয়ে আছে মডেল মসজিদ নির্মাণ কার্যক্রম। আর নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে এর কার্যক্রম শীঘ্রই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা জানায় গণপূর্ত অধিদফতর।

সূত্র মতে, ১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে মসজিদ নির্মাণের কাজটি পায় বরিশালের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স। চলতি বছর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মসজিদ নির্মাণ কাজ করবে না বলে চিঠি দিয়ে গণপূর্ত অধিদফতরকে জানিয়েও দিয়েছে। অথচ দুইধাপে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা নিয়ে গেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিনেও মডেল মসজিদ নির্মাণ না হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে দোষীদের বিচার দাবি করেছেন মুসলমানরা।

সদর উপজেলার ভেতরে অবস্থিত পুরনো মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মো. মামুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনেকদিন আগে দেখেছিলাম মসজিদের নির্মাণ কাজের সামগ্রী আনা হয়েছিল। কিন্তু এরপর কি কারণে মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে না এটা আমাদের বোধগম্য নয়। পুরাতন মসজিদটিতে এখন নামাজ পড়া কষ্ট। বেশি পুরনো হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে মুসল্লীরা সেখানেই নামাজ পড়ছেন।’ 

মুসল্লী রফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে মডেল মসজিদ উদ্ধোধন হলেও আমাদের সদর উপজেলায় দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম নেই। এতে আমরা আধুনিক মসজিদে নামাজ পড়তে পারছি না। মুসল্লীদের মতামত ছাড়া উপজেলার ভেতরে মসজিদ নির্মাণ শুরু করলেও ৫ বছরেও কাজ শেষ হয়নি। এই ঘটনায় কারা দায়ী তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিৎ।’

করিম শেখ নামে একজন বলেন, মুসল্লীদের দাবি ছিল পুরনো মসজিদটি ভেঙ্গে সেখানেই নতুন মডেল মসজিদ নির্মাণ করার। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার নিজেদের ইচ্ছামতো উপজেলার অনেক ভেতরে নিয়ে মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করে। দীর্ঘদিনেও মডেল মসজিদ নির্মাণ না হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে দোষিদের বিচার দাবী করছি।’

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাদারীপুরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিভিন্ন জেলার উপজেলাগুলোর মডেল মসজিদ নির্মাণ হয়ে উদ্বোধন হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু মাদারীপুর সদর উপজেলার মসজিদটি ৫ বছরেও নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এর প্রধান কারণ হলো, সঠিক স্থানে এটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। উপজেলার ভেতরে নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়, এতে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে মসজিদটি আসবে না, এছাড়া মুসল্লীরাও স্থানটি পছন্দ করেনি। তাই অন্যত্র মসজিদ নির্মাণের জন্য চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয় পূর্বের নির্ধারিত স্থানেই মসজিদ নির্মাণ করতে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ গণপূর্ত অধিদফতরকে বলে দিয়েছে। তাই সেখানেই মসজিদ নির্মাণ করতে হবে।’

মাদারীপুরের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার হোসেন জানান, ‘স্থান নির্ধারণ জটিলতায় মসজিদ নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ আছে। কিন্তু পূর্বের স্থানেই মসজিদ নির্মাণ শুরু করতে হবে বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন চিঠি দিয়ে গণপূর্তকে জানিয়েছে। এছাড়া আগের কাজ পাওয়া ঠিকাদারও কাজ করবে না বলেও জানিয়েছে। তাই নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে পূর্বের নির্ধারিত স্থানেই শীঘ্রই মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হবে। পূর্বের ঠিকাদার পাইলিং-এর কাজ করে তার প্রাপ্ত বিল নিয়েছে। তাদের কোন বাড়তি বিল দেয়া হয়নি।’

আরবি/জেডআর

Link copied!