দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আলোচিত সেই প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরীর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবেনা সে জন্য ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কারন দর্শানোর জবাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছে করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
গত ৬ জানুয়ারী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরী স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর জবাব চেয়ে এক নোটিশ দেওয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরীকে।
নিহার রঞ্জন বারুরী কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরী স্বাক্ষরিত এই পত্রে বলা হয়, গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলাধীন পিঞ্জুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরী কতৃক বিদ্যালয়ের টিনসেড ঘর এবং বিদ্যালয়ের জায়গায় অবস্থিত ঝড়ে পড়া গাছ কাটা ও নিলামে বিক্রির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য পরিপত্র অনুসরণ করা হয়নি এবং উভয় ক্ষেত্রে বিদ্যমান পিপিআর অনুসৃত হয়নি। যা এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর উপানুচ্ছেদ ১৮.১ (খ) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
উক্ত উপানুচ্ছেদ অনুযায়ী নিহার রঞ্জন বারুরীর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সে জন্য ৭ দিনের মধ্যে তাকে জবাব দেওয়ার জন্য ওই পত্রে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কোটালীপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিক নুর আলম জানান, পিঞ্জুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরীর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উল্লেখ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট লিখিতভাবে অভিযোগ করেন বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান তালুকদার চঞ্চল। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়টি সরজমিনে পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। পরবর্তীতে কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে সাপেক্ষে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ নিয়োগ দেওয়া হয়। এই তদন্ত প্রতিবেদনে তার নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি উঠে আসে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরীর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তার জবাব দেওয়ার জন্য কারন দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।
পিঞ্জুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান তালুকদার চঞ্চল বলেন, প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরী বিদ্যালয়টির পুরাতন একটি পাকা টিনসেড ঘর, দুটি টিনসেড ঘর, ১ টি টিনসেড মসজিদ ও কয়েকটি গাছ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
এছাড়াও তিনি বিভিন্নভাবে নানা অনিময় ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে আমরা প্রমান পেয়েছি। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট লিখিতভাবে অভিযোগ জানাই।
তিনি আরো বলেন, নিহার রঞ্জন বারুরী একজন অযোগ্য প্রধান শিক্ষক। তিনি একটি প্রকাশনী থেকে কমিশন পেয়ে বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে গাইড বই তুলে দেন। এই প্রকাশনীর দেওয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। অনেক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। আবার সেই ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা দিন দিন মেধা শূণ্য হয়ে পড়ছে। তাছাড়া তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষকদের বহির্গমন ছুটি দিয়েছেন। যাহা সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত। এই অযোগ্য দূর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবি করছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক অভিভাবক বলেন, নিহার রঞ্জন বারুরী একজন অযোগ্য প্রধান শিক্ষক। তিনি এর আগে ধারাবাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। আমার মনে হয় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোন ক্লাসের কোন বিষয়ে তাকে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে দিলে তিনি পড়াতে পারবে না। এই অযোগ্য প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়টিতে কি ভাবে নিয়োগ পেয়েছেন তাহা আমাদের বোধগম্য নয়। তাই আমরা এলাকাবাসী এই অযোগ্য প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চাই।
তিনি আরো বলেন, আমরা এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে দুর্নীতিবাজ এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বিদ্যালয়টিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট দাবী জানাই।
এ ব্যপারে কথা বলার জন্য গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) পিঞ্জুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরীকে পাওয়া যায় নাই। তার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
আপনার মতামত লিখুন :