বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ছেলে নিম্ন বংশ নম:শূদ্র সম্প্রদায়ের মেয়েকে বিয়ে করায় মৃত মায়ের সৎকারে বাধা ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোকজনের।
২৪ ঘন্টায়ও মৃত. মায়ের দাহ সম্পন্ন করা হয়নি। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের বাকাল গ্রামের ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের দুলাল চক্রবর্তীর ছেলে সাগর চক্রবর্তী বিগত ১০ বছর পূর্বে প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে বিয়ে করেন একই উপজেলা কোদালধোয়া গ্রামের বিমল হালদারের নম:শুদ্র সম্প্রদায়ের মেয়ে টুম্পা হালদারকে।
সনাতন ধর্মীয় কথিত উচ্চ বংশ ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ছেলে হয়ে একই ধর্মের নিম্ন বংশ নম:শূদ্র সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে বিয়ে করায় বিপত্তি বাঁধে গ্রামের ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোকজনসহ জ্ঞাতি কাকা ও জ্যাঠাদের পরিবারের লোকজনের সাথে। এ কারনে বিগত ১০ বছর ধরে সমাজচ্যুত করে রাখা হয় দুলাল চক্রবর্তীর পরিবারকে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুর ২ টার দিকে ওই ব্রাহ্মণ ছেলে সাগর চক্রবর্তীর মা অলোকা চক্রবর্তী মারা যায়। ব্রাহ্মণ ছেলে হয়ে নম:শূদ্রের মেয়ে বিয়ে করার কারনে তার মায়ের মরদেহের অন্তষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে এগিয়ে আসতে নারাজ ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোকজন ও কাকা জ্যাঠা পরিবাররা।
এ ঘটনা জানতে পেয়ে নম:শুদ্র সম্প্রদায়ের লোকজন মরদেহের অন্তুষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে এগিয়ে আসলেও তাদের অনুমতি দেয়নি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোকজন।
এভাবেই বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টা থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত মায়ের মরদেহ নিয়ে ঘরের মেঝেতে বসে আহাজারি করছে মৃতের আত্মীয়-স্বজনরা।
এ ব্যাপারে মেয়ে দীপাঞ্জলী চক্রবতী, পনার্ চক্রবর্তী ও ছেলে সাগর চক্রবতী বলেন, আমার মায়ের মৃত্যুর পর বাড়ির প্রতিটি ঘরে গিয়ে মায়ের মৃত সংবাদ জানিয়েছি। বাড়ির দুই একজন দেখতে আসলেও চলে যাওয়ার পর আর কেউ আসেনি।
এলাকাবাসী অশোক বল্লভ, আকাশ রায় সাংবাদিকদের বজানান, বর্তমান যুগে বর্ণাপ্রথা একটি কুসংস্কার হলেও সাগরের মায়ের মৃত্যর সংবাদ শুনে তার মরদেহ সৎকারের জন্য এগিয়ে আসলেও নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় আমাদের মরদেহের অন্তুষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনুমতি দেয়নি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোকজন।
এব্যাপারে ব্রাহ্মণ পংকজ চক্রবর্তীর স্ত্রী শুক্লা চক্রবর্তী বলেন, ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ছেলে হয়ে একই ধর্মের নিম্ন বংশ নম:শূদ্র সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে বিয়ে করায় ধর্মীয় রীতিনীতির কারনে আমাদের কেউ সৎকারে যায়নি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের কোন পুরোহীত কথা বলতে রাজি না থাকায় কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় সমিতির সভাপতি পরিমল চক্রবর্তী দেশের বাইরে থাকায় তার ছেলে মুঠোফোনে জানায় ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ছেলে হয়ে একই ধর্মের নিম্ন বংশ নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে বিয়ে করায় ধর্মীয় রীতিনীতির কারনে আমরা মৃতদেহ সৎকারে যাইনি।
এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া থানার ওসি মো.অলিউল ইসলাম বলেন, এধরনের কোন ঘটনা আমাকে কেউ জানায়নি। জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতো।
আপনার মতামত লিখুন :