ঢাকা রবিবার, ০৫ জানুয়ারি, ২০২৫

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবনে অবাধে ধরা হচ্ছে কাঁকড়া

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২৫, ০৫:৫৯ পিএম

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবনে অবাধে ধরা হচ্ছে কাঁকড়া

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পহেলা জানুয়ারি হইতে কাঁকড়া আহরণ বন্ধ থাকলে ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের সুন্দরবনের নদী ও খাল গুলোতে সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে ২৫০টির মত নৌকা কাঁকড়া আহারণে লিপ্ত আছে বলে জানা গেছে। এছাড়া সাদা মাছ ও ফাঁস জালের পাস নিয়ে ৪০০ মতো নৌকা তাঁরাও কাঁকড়া আহরণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, ২৫ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা রেঞ্জার কদমতলা কৈরা ধখালি বুড়িগোয়ালিনী ও কোবাতাক স্টেশন থেকে পাস নিয়ে সুন্দরবনে কাঁকড়া আহারণ করছে তাদের কে ৩১ ডিসেম্বর পাস সমাপনের কথা থাকলেও এখনো  ফিরে আসেনি তারা। পশ্চিম সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকা পুষ্প কাটি চোরা মেঘনা মান্দার বাড়িয়া ইলশে মারি নটাবেকি দায়ের গাং কাছি  কাটা ১৮ বেকি ফিরিঙ্গিয়া খবরাখালি দোবেকি হল্দে বুনিয়া তাল পাটি চুনকুড়ি সুগদে গুবদে মালঞ্চ হাতি ভাঙ্গা চালতে বাড়িয়া উলোবাড়িয়া কলা গাছি ডিঙ্গে মারি দিপির মাদি সহ্ সুন্দরবনে বিভিন্ন খালে নদীতে কাঁকড়া আহরণ করছে বলে ফিরে আসা জেলেরা তাদের নাম না প্রকাশ করার সত্ত্বে এ তথ্য  জানান।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানার বাইরে এখুনি খোঁজ নিচ্ছি। এদিকে কাঁকড়া মজুদ ও পরিবহন নিষিদ্ধ থাকলেও সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় ১০০ মেট্রিক টন কাঁকড়া এখনো বিভিন্ন ফার্মে মজুদ রয়েছে, মজুদ থাকা স্থানগুলো আন্টি হারা, ঘড়িলাল ,যোরর্শীন পার্সেমারি, গাগড়ামারি চাঁদনী মুখা দৃষ্টি নন্দন হরিশ খালি দূর্গা পাটি বুড়িগোয়ালিনী, দাতিনাখালি, কলবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, দক্ষিণ কদমতলা, মথুরাপুর, হরিনগর, সিংহড়তলি মীরগাং কালিনছে ভেটখালি, কৈখালি । এই সমস্ত এলাকার সমগ্র মোকামে অবাধে কাঁকড়া কেনাবেচা হচ্ছে । জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। এ সময় সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বনের বিভিন্ন নদী ও খালে অবাধে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া শিকার চলছে। প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকার করায় কাঁকড়া বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তেমনি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশ। আর জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সুন্দরবনের জলভাগে ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া ও ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ আছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ৫৯ দিনের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ রাখে বন বিভাগ। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের লোনাপানিতে কাঁকড়া ডিম ছাড়ে। তবে মাঘ মাসের প্রথম অমাবস্য বা পূর্ণিমায় সুন্দরবনের শিলা কাঁকড়া সব থেকে বেশি ডিম ছেড়ে থাকে। ডিম ছাড়ার সময় নদ-নদী ও খালের কূল দিয়ে বিচরণ করে ডিমওয়ালা কাঁকড়া। এ সময় ডিমওয়ালা কাঁকড়া কিছুটা শান্ত ও স্থির থাকে। সুন্দরবন ও উপকূলসংলগ্ন নদনদী খালে বন বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ডিমওয়ালা কাঁকড়া ধরা হচ্ছে। ডিম ছাড়ার মৌসুমে অবাধে কাঁকড়া ধরায় কাঁকড়ার প্রজনন ও উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় ধারণা করছে বিশেষজ্ঞরা। ডিসেম্বর থেকে কাঁকড়ার ডিম হওয়া শুরু করে এবং জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস কাঁকড়ার ডিম ছাড়া শুরু করে। তাই প্রজনন মৌসুমে সরকারিভাবে কাঁকড়া ধরার ওপর এই দুই মাস নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তারপরও বন বিভাগের নির্দেশ অমান্য করে সুন্দরবন এলাকায় সারা বছরের মতো ব্যাপক হারে কাঁকড়া ধরা অব্যাহত রয়েছ। আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়ার দাম ও চাহিদা বেশি। এ কারণে প্রজনন মৌসুম ও পরবর্তী সময়ে কাঁকড়ার শিকার বন্ধ এবং এ মূল্যবান মৎস্য সম্পদ রক্ষায় অভয়াশ্রম ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনসহ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। শিকার নিষিদ্ধ সময়ে ডিমওয়ালা অন্যসব প্রজাতির পাশাপাশি শিলা কাঁকড়া প্রজনন মৌসুমে নির্বিচারে আহরণ করার ফলে কাঁকড়াভাণ্ডারখ্যাত সুন্দরবনে অচিরেই এ কাঁকড়ার বিলুপ্তি ঘটবে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে দ্রুত শিকার নিষিদ্ধ প্রজনন মৌসুমে সব ধরনের কাঁকড়া আহরণ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে সরকার ও বন বিভাগকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

এদিকে সাতক্ষীরা রেঞ্জের ফরেস্ট অফিসার জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, আমাদের টহল অব্যাহত আছে। যাতে কেউ এই সময় কাঁকড়া আহরণ না করতে পারে তারপরেও যদি কেউ সরকারি আইন অমান্য করে বনের ভিতরে কাঁকড়া ধরে আর আমাদের সামনে যদি কেউ পড়ে তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। 

আরবি/জেডআর

Link copied!