ঢাকা শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

বাঙালি নদীর গ্রাসে ঘরবাড়ি-ফসলি জমি নদীগর্ভে

সুমন কুমার সাহা, সারিয়াকান্দি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৪, ১১:৫৯ এএম

বাঙালি নদীর গ্রাসে ঘরবাড়ি-ফসলি জমি নদীগর্ভে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বাঙালি নদীর ভাঙন প্রকট আকার ধারন করেছে। উপজেলার বাঙালি নদীর ৮ টি স্থানের মধ্যে ৩ টি পয়েন্টে তীব্র ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার রাত ৩টা থেকে উপজেলা কর্ণিবাড়ি ইউনিয়নের দেবডাঙ্গা গ্রামের ঈদগাহ মাঠে উত্তর পাসে বাঙালি নদীর তীরে সংরক্ষণ কাজের সিসি ব্লকের ২০ মিটার নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে নদীর তীরে অবস্থিত ১৫০ টি পরিবার নদী ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছেন।

সদর ইউনিয়নের চান্দিনা নোয়াপাড়া ১ কিলোমিটার নদী ভাঙনে ৫‍‍`শ বিঘা ফসলি জমি ইতিমধ্যে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

গত ২ অক্টোবর থেকে কুতুবপুর ইউনিয়নের চরমাছির পাড়া গ্রামে বাঙ্গালী নদীর ১ কিলোমিটার ভাঙনে ঘর-বাড়ী, ফসলি জমি, গাছপালা নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পরেছে, চরমাছির পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ,মাদ্রাসা, কৃষি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। 

উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের মাছিরপাড়া গ্রামের ৩শ মিটার বাঙালি নদীর ভাঙনে ফসলি জমি ভেঙেছে এবং পারতিত পরল গ্রামের বিশাল এলাকাজুড়ে ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।

এই বন্যায় বাঙালি নদী তীরবর্তী এলাকার কৃষকদের গাইনজে ধান, মাসকালাই, মরিচসহ তরিতরকারি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় বাঙালি গত মঙ্গলবার বাঙালি নারীর পানির সমতল ছিল ১৩.৯৫ সেন্টিমিটার। বুধবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত ১৩.৯০ সেন্টিমিটার। পানি কমলেও দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
অপরদিকে যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় উচ্চতা ছিল ১৪.১৩ মিটার। বুধবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত ১৪.২০ মিটার। ২৪ ঘন্টা যমুনার পানি বেরেছে ৭ মিটার ।

দেবডাঙ্গা গ্রামের মাহফুজা বেগম বলেন, আমার কোন জায়গা নেই। বাচ্চাদের ওয়ার্ল্ড ভিশনে ভর্তি করেছিলাম । সেখান থেকে কাজল প্রকল্পের আওতায় ২ শতাংশ জায়গা পাইছি। আমার স্বামী নাই ছেলেও নাই। এখন এই জায়গা যদি ভেঙে যায়। কলার ভুরা ছাড়া উপায় নাই নদীতে ভেসে যেতে হবে। তাই সরকারের কাছে দাবি  নদী ভাঙন ঠেকাতে অতি তাড়াতাড়ি কাজ করে দেন।

একই গ্রামের রজিনা বেগম জানান, গত সোমবার রাত ৩টা থেকে শোশো শব্দে শুনতে পাই। বাড়ির বাইরে এসে তিনি দেখেন তার বাড়ির একাংশ বাঙালি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তীর সংরক্ষণ কাজের ব্লকগুলো ধ্বসে গেছে। তার পুরো বাড়ি যেকোনও সময় বাঙালি নদীর গর্ভে বিলীন হতে পারে। রজিনা বেগম গত ২০১৩ সাল পর্যন্ত গার্মেন্টসের চাকুরি করতেন। ২০০৬ সালে আনোয়ার হোসেনের সাথে তার বিয়ে হয়েছে। তার স্বামী আনোয়ার হোসেন যমুনা নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ৭ বার ভিটেমাটি হারিয়েছেন। সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ভিশনের কাজল প্রকল্পের আওতায় ২ শতাংশ জমি প্রাপ্ত হয়ে তিনি দেবডাঙ্গা গ্রামের বাঙালি নদীর তীরে বসবাস শুরু করেছেন। তার শেষ সম্বলটুকুও বাঙালি নদীতে বিলীন হতে চলেছে। এ শেষ সম্বলটুকু যদি নদীতে ভেঙে যায় তাহলে আমরা কোথায় যাব?

কুতুবপুর ইউনিয়নের চরমাছির পাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত মানিক বলেন, আমরা কৃষি আবাদ করি গত কয়েকদিন হলে বাঙ্গালি নদী ভাঙনে ফসলি জমি, বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে এখন আমরা কিভাবে আবাদ করবো, কিভাবে চলবো আমাদের দাবি এ নদীর ভাঙ্গন থেকে আমাদের রক্ষার ব্যবস্থা চাই।

বাইলে সাকিদার বলেন, তিন দিনের মধ্য আমার বাড়ি থেকে সবুরে বাড়ি পর্যন্ত ভেঙ্গে জোড়ে চলে গেছে। আমি বিভিন্ন জায়গায় ফোন করেছি অনেকে আসে খালি ভিডিও, ছবি তুলে নিয়ে যায়। কোথায় যে থাকে কিজে করে কোন কাজ হয়না। তারা খালি বলে কাজ হবে হবে বোলে আমার ঘরটাই নদীতে তলে গেলো। ঘর  জোরে নিয়ে এসে থুয়েছি।  ক্ষতিগ্রস্তই হয়ে গেলাম। সরকারের কাছে দাবি আমাদের শেষ সম্বল রক্ষার্থে এই নদীর কাজটা অতি দ্রুত করার জন্য অনুরোধ করছি।

বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করে ভাঙন কবলিত এলাকা রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!