ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

কুসিকের প্রধান নির্বাহী অবরুদ্ধ, কক্ষে তালা দিয়ে বিক্ষোভ

কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৪, ০৬:০২ পিএম

কুসিকের প্রধান নির্বাহী অবরুদ্ধ, কক্ষে তালা দিয়ে বিক্ষোভ

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

বেতন বৃদ্ধি, চাকরি স্থায়ীকরণ, উৎসব ভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, কোনো কর্মী মারা গেলে নূন্যতম পাঁচ লাখ টাকা প্রদানসহ বিভিন্ন দাবিতে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের (কুসিক) মাস্টার রোল (এমআর) কর্মচারীরা আন্দোলন শুরু করেছে।

দাবি আদায়ের জন্য তারা কাজ ফেলে ‍সিটি করপোরেশনের প্রধান র্নিবাহী (যুগ্ম সচিব) মো. ছামছুল আলমকে অবরুদ্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা প্রধান নির্বাহীর কক্ষে তালাসহ নগর ভবনের প্রবেশ ও বাহিরের পথে তালা ঝুলিয়ে ভূয়া ভূয়া স্লোগান দিতে থাকেন।

বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুর থেকে আন্দোলনরত কর্মীরা এক জোট হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক সাইফ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন না।

এদিকে, সিটি কর্পোরেশনের অফিস সহকারী মাহাবুবুর রহমান নামের এক কর্মীকে লাঞ্চিত করেছে আন্দোলনকারীরা। মাহাবুবুর রহমান প্রধান নির্বাহীর কক্ষে দায়িত্ব পালন করেন। আন্দোলনকারীরা কক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে বাঁধা দেন মাহাবুব, এতে উত্তেজিত কর্মীরা তাকে লাঞ্চিত করেন।

আন্দোলনরত কর্মীরা জানান, দৈনিক ৩৫০ টাকা হাজিরা ভিত্তিতে তারা দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে এই টাকা দিয়ে কিছুই করতে পারেন না তারা। তাছাড়া মাসের ৩০ দিন তাদের কাজ থাকে নাম, সেক্ষেত্রে মাসিক বেতন আরো কম হয়। অনেকে ছয় হাজার টাকা বেতন পান। এসব টাকায় তাদের সংসার চলেনা।

পরিচ্ছন্নতাকর্মী মান্নান মিয়া বলেন, তিনি কুমিল্লা নগরীর চার নম্বর ওয়ার্ড কাপ্তান বাজার এলাকায় কাজ করেন। সকাল ছয়টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চার ঘন্টা ডিউটি করেন। পুরো মাস কাজ করে তিনি ৬ হাজার তিনশ টাকা বেতন পান।

ময়লার গাড়িচালক মো. হানিফ মিয়া বলেন, কোন বোনাস নাই, দৈনিক ৩৫০ টাকা মজুরীতে ১০ হাজার পাঁচশ টাকা হারে বেতন পাই। আবার যেদিন কাজ নাই, সেদিনের বেতন নাই। কোন ছুটি নাই, ভাতা নাই। দীর্ঘদিন কাজ করছি, চাকরি স্থায়ীকরণ নাই।

ঝাড়ুদার ফাতেমা বেগম জানান, তিনিও সাড়ে ছয় হাজার টাকা বেতন পান, এ টাকায় তার সংসার চলে না।

জানা যায়, তিন বছর আগে মাস্টাররোল কর্মচারীদের বেতন দৈনিক ৩০০ টাকা হাজিরাভিত্তিক ছিল। সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু শেষ কর্মদিবসে তাদের দাবীর প্রেক্ষিতে ৫০ টাকা বাড়িয়ে সাড়ে তিনশ করে যান। এরপর থেকে তারা বেতন বাড়ানোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন। বর্তমান প্রধান নির্বাহী যোগদান করার পর তারা বিভিন্ন সময়ে অসংখ্যবার দাবি আদায়ের জন্য আবেদন করেছেন। প্রধান নির্বাহী তাদের আশ্বাস দিলেও কোনো দাবি পূরণ করতে পারেননি।

তারা বলছেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাদের, সেজন্য আন্দোলন শুরু করেছেন। দাবি মানা না হলে, কর্মবিরতি চলবে। আন্দোলন আরো কঠোর হবে, পুরো সিটিকর্পোশন কার্যালয় অচল করে দেয়া হবে। বিকেল চারটা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।

এদিকে, পরিস্থিতি শান্ত করতে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম শুরুতেই কাজ করতে দেখা যায়। তবে অবস্থা বেগতিক হলে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। 

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী (যুগ্ম-সচিব) মো. ছামছুল আলম বলেন, তাদের দাবি অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। বেতন বৃদ্ধি নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশাসক মহোদয়ের সাথে আলোচনাও হয়েছে। আমি চাইলেও একার পক্ষে বেতন বাড়ানো সম্ভব না। যেহেতু আর্থিক বিষয় তাই আইন অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আগামী মাসিক মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আজ তাদেরকে আন্দোলন স্থগিত করে কাজে ফিরে যেতে অনুরোধ করেছি। তারা না মেনে বিক্ষোভ করছে, যা দু:খজনক।

আরবি/ এইচএম

Link copied!