শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রাব্বি আহমেদ, মেহেরপুর

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ০৬:৪৩ পিএম

গাংনী সীমান্ত দিয়ে দেদার পাচার হচ্ছে মাদক

রাব্বি আহমেদ, মেহেরপুর

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ০৬:৪৩ পিএম

গাংনী সীমান্ত দিয়ে দেদার পাচার হচ্ছে মাদক

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুর। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকেই সীমান্তে বেড়েছে মাদক কেনাবেচা। প্রায় প্রতিদিনই মেহেরপুরে গাংনী সড়ক দিয়ে পারাপার হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মাদক।

মাঝে মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় চালান র‍্যাব ও যৌথবাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও এটি বৃহৎ চালানের ক্ষুদ্র একটা অংশ বলে দাবি করছেন সচেতন মহল। গেল দেড় মাসে যৌথবাহিনী, বিজিবি র‍্যাব ও পুলিশের হাতে আটক হয় ১৮ জন পাচারকারী। এ সময় উদ্ধার হয় ১৯২ বোতল ফেনসিডিল, ৯৩ কেজি গাঁজা ও মাদক বিক্রির ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সীমান্ত গলিয়ে কিভাবে মাদক পাচার হয়ে আসছে সেটি এখন বেশ আলোচনায়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে-মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদকের সাথে কোনো আপোস নেই।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, মেহেরপুরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার হচ্ছে। তবে গাংনী এলাকায় পাচার হচ্ছে বেশি। বিশেষ করে গাঁজা ও ফেনসিডিল পাচার হচ্ছে দেদারছে। নারী পুরুষ যেন কোমর বেঁধে নেমেছে পাচার কাজে। ৭ নভেম্বর যৌথবাহিনী গাংনীর ভোমরদহ ও ভাটপাড়া কলোনিতে পৃথক অভিযানে দুই নারীসহ চার মাদক পাচারকারীকে আটক যৌথবাহিনী। উদ্ধার করা হয় ২২ কেজি গাঁজা, ১৭ বোতল ফেনসিডিল। জব্দ করা হয় মাদক বিক্রির ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। আটককৃতরা হচ্ছে- কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার ভাগজোত গ্রামের তিলকজান ও মুন্সীগঞ্জ গ্রামের কহিনুর বেগম এবং ভ্যান চালক ইন্তাদুল ও জয়নাল আবেদীন।

একইদিন সন্ধ্যা রাতে গাংনী উপজেলার বামন্দী বাজার থেকে মিলন সাহা নামের একজনকে ৪ কেজি গাঁজাসহ আটক করেছে বামন্দী ক্যাম্প পুলিশ। ৫ নভেম্বর গাংনীর তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে তৌফিক মোল্লা (২৭) নামের এক মাদক পাচারকারীকে আটক করেছে র‍্যাব। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দুই কেজি ৭০০ গ্রাম গাঁজা। ১ নভেম্বর গাড়াবাড়িয়া থেকে ৫ কেজি গাঁজাসহ শামীম ওরফে রাজু ও মোমিনুলকে আটক করেছে গাংনী থানা পুলিশ। ৩১ অক্টোবর কুয়াকাটাগামী যাত্রিবাহি বাসে অভিযান চালিয়ে ৪০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে যৌথবাহিনী।

২৬ অক্টোবর সকালে গাংনী র‍্যাব ক্যাম্পের একটি টিম বালিয়াঘাট থেকে এখলাচ মিয়াকে ৩৫ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে। ১৯ অক্টোবর মুজিবনগরে বল্লভপুরে ১১ কেজি গাঁজাসহ দিপককে আটক করেছে বিজিবি। ১৮ অক্টোবর কাছুলি থেকে ২ কেজি গাঁজাসহ লিখন নামের এক পাচারকারীকে আটক করেছে পুলিশ। ১৩ অক্টোবর গাংনী শহর থেকে ২ কেজি গাজাসহ ইন্তাজুল ও আনোয়ার আটক করেছে র‍্যাব। ৮ অক্টোবর সাহারবাটি বাজার থেকে র‍্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ৫ কেজি গাজাসহ শরিফুল নামের এক পাচারকারীকে আটক করে।

৩ অক্টোবর সদর উপজেলার কলোনীপাড়া থেকে ৪ কেজি গাজাসহ র‍্যাবের হাতে আটক হয় লালচাদ। ২৭ সেপ্টেম্বর ৩৬ কেজি গাঁজাসহ রাকিব নামের এক পাচারকারী তার নিজবাড়ি ধলা থেকে আটক করে র‍্যাব। সীমান্তের ওপার থেকে পাচার করে আনা এ গাঁজার চালানটি পাচারের জন্য রেখেছিল রাকিব। ২০ সেপ্টেম্বর তেরাইল থেকে ১০০ বোতল ফেনসিডিলসহ এরশাদ আলী ও আবুল কালাম আজাদকে আটক করে যৌথ বাহিনী। আবুল কালাম আজাদ এলাকার চিহ্নিত মাদক পাচারকারী।

নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না এমন শর্তে একাধিক মাদক বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় নগদ টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে মাদক কিনে আনতেন। বর্তমানে স্বর্ণের বার ওপারে পাচারের বদলে এপারে আসে মাদক। মাদকের ব্যবসা হচ্ছে তিনটি ধাপে। একটি দল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মাদক নিয়ে আসে। তারা পৌঁছে দেয় এজেন্টদের কাছে। এজেন্টরা বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে খুচরা বিক্রেতাদের দিয়ে এসব মাদক বিক্রি করায়। দরিদ্র পরিবারের নারী ও শিশুদের মাদক বিক্রি, পরিবহন ও খুচরা বিক্রির কাজে ব্যবহার করছেন নেপথ্যে নায়করা। তারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে।

মাদক পাচারের ব্যাপারেও পাওয়া গেছে বিচিত্র সব তথ্য। পাচারকারীরা জানায়, সীমান্তের এপার থেকে কাঁটাতারের ওপারে স্বর্ণের বার কিংবা অন্যান্য মালামাল নিক্ষেপ করা হয়। বিনিময়ে টেপ দিয়ে মোড়ানো মাদক এপারে ফেলে দেওয়া হয়। সেগুলো সুযোগ বুঝে সংগ্রহ করে সীমান্তের কাছাকাছি কোন বাড়িতে মজুদ করা হয়। পরে পরিস্থিতি অনুযায়ি বিভিন্ন মাধ্যমে ছোট ছোট করে মাদক বড় শহরগুলোতে পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেমন বিজিবি পুলিশের নজর এড়াতে বোরকা পরিহিত নারী ও শিশুদেরকে ব্যবহার করা হয় অনেকাংশে।

এদিকে মাদকদ্রব্য সহজ লভ্যতার কারণে বেড়েছে মাদকসেবীর সংখ্যা। এদের একটা অংশ উঠতি বয়সী নারী পুরুষ। মাদক বিরোধী অভিযানে এরাই মূলত, আটক হয় বলে দাবি করা হয়েছে সচেতনমহল ও প্রশাসনের কয়েকজন। পরকীয়া প্রেম বিরহ বিচ্ছেদ, উচ্চাভিলাসী জীবন যাপনের প্রত্যয়, দেখাদেখি ও পারিবারিক নানা সমস্যার কারণে অনেকেই মাদকাসক্ত হচ্ছেন। নারীদের মাদকাসক্তের বিষয়টি সামনে আসে না কেননা, তারা অতি গোপনে বিভিন্ন চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা নেন। অনেকে লোকলজ্জার ভয়ে মুখ খোলে না।

জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শিরীন আকতার দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে জানান, মাদক নির্মূলে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হয়, মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট নেপথ্য নায়কদের আটক করা সম্ভব হয় না। এসব ঘটনায় শুধু মাদক বহনকারী ইজিবাইক চালক, কিশোর-তরুণ, বেকার যুবকসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষ ধরা পড়ে। এর বাইরে বিভিন্ন সময় মাদকসেবীদের আটক করা হয়। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মামলা দিলে সেটি তদন্ত করে পুলিশ। তবে মাদক পাচারের মূল হোতাদের খুঁজে বের করতে পারে না তারা।

মেহেরপুর পুলিশ সুপার মাকসুদা আকতার খানম দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে জানান, মাদক নির্মূলে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। পাচারকারীদের আটকের পাশাপাশি যারা মাদকের সাথে জড়িত তাদেরকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ ও যৌথবাহিনী মাদকের কওেয়কটি চালান উদ্ধার ও মাদক পাচারকারীদেরকে আটক করেছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে ৪৭ কুষ্টিয়া বিজিবি সেক্টর কমান্ডারের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!