বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম

সন্তানদের আর্তনাদে জেল থেকে ছাড়া পেলেন দিনমজুর জামাল মিয়া

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম

সন্তানদের আর্তনাদে জেল থেকে ছাড়া পেলেন দিনমজুর জামাল মিয়া

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

অসহায় চার সন্তানের আহাজারিতে দাগ কেটেছে সকলের মনে। নড়েচড়ে বসে রাষ্ট্র ও বিচার বিভাগ। সন্তানদের আর্তনাদে জেল থেকে ছাড়া পায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার দিনমজুর জামাল মিয়া। সাতদিন পর বাবাকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরে হাসছে ৬ বছরের মেয়ে ফারিয়া। পাশে বসে থাকা ১৩ বছরের আরেক ছেলে সাজ্জাদের চোখে মুখেও আনন্দের ছাপ। একমাস সাতদিন বয়সী জমজ দুই কন্যা সন্তানকে সামনে শুইয়ে রেখে আনন্দে কেঁদে উঠছেন জামাল মিয়া।

চার শিশু সন্তানের জনক জামাল মিয়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের চিত্রাপাড়া গ্রামের হারিজ মিয়ার ছেলে।

আজ সকালে সরেজমিনে জামাল মিয়ার বাড়িয়ে গিয়ে দেখা যায় এই চিত্র। জামালকে দেখতে বাড়ির উঠানে ভিড় করছে প্রতিবেশীরা। প্লেটে ভাত মেখে দুই শিশু সন্তানকে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন জামাল মিয়া। মাতৃহীন একমাস সাতদিন বয়সী জমজ দুই শিশুকে ফিডারে করে দুধ খাওয়াচ্ছেন।

একমাস সাতদিন আগে জামাল মিয়ার স্ত্রী সাথী বেগম একসঙ্গে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এর ছয় দিন পর সাথী বেগম মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সদ্য জন্ম নেওয়া দুগ্ধপোষ্য দুই কন্যাসন্তানসহ চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। ঘরে অসুস্থ মা ও চার শিশু সন্তানের লালনপালন করে দিন কাটে দিনমজুর জামাল মিয়ার। এ অবস্থায় পুলিশ জামাল মিয়াকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার করেন। এতে চরম বিপাকে পড়ে জামাল মিয়ার একমাস বয়সী জমজ দুই সন্তানসহ ৪ শিশুসন্তান।

বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে। এমন সংবাদ গণমাধ্যমে  প্রকাশিত হওয়ার পর তা আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। এমন সংবাদ নজরে আনায় স্বপ্রণোদিত হয়ে সেই শিশুদের দেখভাল করার জন্য গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ সমাজসেবা কার্যলয়কে নির্দেশ দেন বিপরপতি ফারহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গোপালগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজ মামুন দিনমজুর জামাল মিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন।

জামাল মিয়ার পক্ষে জেলা লিগ্যাল এইড আইনী সহায়তা দেওয়া প্রস্তুতি নেয়। তবে জেলা লিগ্যাল এইডের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শারমিন জাহান বলেন, জেলা লিগ্যাল এইডের পক্ষ থেকে জামাল মিয়ার জামিনের আবেদন করি। বিচারক আমাদের কথা বলার আগেই নথি হাতে পেয়ে জামিন মঞ্জুর করেন। হয়তো বিচারক আগে থেকেই জামাল মিয়ার চার বাচ্চার সংবাদটির বিষয়ে অবগত ছিলেন। মানবিক বিবেচনায় তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। এতে করে ওই বাচ্চা ফিরে পেল তাদের বাবাকে।

দিনমজুর জামাল মিয়া বলেন, সন্তানদের কাছ ফিরে আসাতে পারায় আমার সকল কষ্ট দূর হয়ে গেছে। সন্তানদের আর্তনাদ আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে। ওদের মা নেই। এই চার সন্তানকে নিয়েই আমার বেঁচে থাকা। আমার স্বপ্ন এখন একটাই এই সন্তানদের যেন ভালোভাবে মানুষ করতে পারি। আমি জেলে যাওয়ার পর আমার সন্তানদের এই দুর্দশার কথা তুলে ধরায় আমি দেশের সকল সাংবাদিক ভাইদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সেই সাথে আমি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ জানাই আমাকে সন্তানের কাছে ফিরে আসার জন্য দ্রæত জামিনের ব্যবস্থা করায়।

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া জামাল মিয়ার বড় ছেলে সাজ্জাদ বলেন, আমি এই কয়দিন যেন অন্ধকারে ছিলাম। কিভাবে বাঁচবো আমরা তা বুঝ আইতাছিল না। মিথ্যা মামলায় আমার বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে জেলে পাঠিয়েছিল। আপনারা (সাংবাদিকরা) ছিলেন বইলাই আমি আমার বাবাকে পাইছি। এখন আবার লেখাপড়া করতে পারবো। আমি বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই।

জামাল মিয়ার বড় মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া ফারিয়া বলেন, আইজ সকালে বাবা আমারে ভাত খাওইয়া দেছে। এইকয়দিন আমি ভাত খাইতে পারি নাই। আমার বাবাকে আর কেউ নিয়ে যাবেন না।

জামাল মিয়ার বড় ভাইয়ের স্ত্রী পুতুল বেগম বলেন, জামালের স্ত্রী সাতদিনের জমক (জমজ) মাইয়া রাইখা মারা গেছে। ওদের নিয়ে আমরা খুব বেদনায় ছিলাম। জামালরে খালি খালি পুলিশে ধইরা নেওয়ায় আমাদের সকলের ঘুম হারাম হইয়া গেছিল। আইজ সে জামিনে আসায় সস্তি ফিরগা পাইছি।

এর আগে গণমাধ্যমে দিনমজুর জামাল মিয়ার চার শিশু সন্তানের করুণচিত্র প্রকাশ পেলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বৃহস্পতিবার সকালে জামাল মিয়ার বাড়িতে আসেন কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুর আক্তার। এসময় তিনি নগদ টাকা, শিশু খাদ্য, গরম কাপড়, শিক্ষা উপকরণ, খেলনা সামগ্রী জামাল মিয়ার মা গোলেজান বেগমের হাতে তুলে দেয়।

এছাড়াও গনমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে অনেক মানবিক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। অনেক ব্যক্তি নিজ উদ্যোগেও জামাল মিয়ার বাড়িতে এসে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুর আক্তার বলেন, সাজ্জাদ ও তার পরিবারের বিষয়টি অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী। জেলা প্রশাসক কামরুজ্জামান স্যার বিষয়টি অবগত আছেন। আমাদের মাধ্যমে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। প্রাথমিকভাবে সাজ্জাদ ও তার পরিবারের জন্য সমাজসেবা কার্যলয়ের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা এবং শিশুখাদ্যসহ এসব সামগ্রী দিয়ে যাচ্ছি। আজ থেকে সাজ্জাদ শুধু একা নয় সাজ্জাদের পাশে উপজেলা প্রশাসন কোটালীপাড়া সবসময় রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস এম জিলানী তার বাবা মায়ের কবর জিয়ারতের জন্য টুঙ্গিপাড়ায় আসার পথে ঘোনাপাড়া নামক স্থানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতা কর্মীদের হামলার শিকার হয়। হামলায় তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা গুরুতর আহত এবং  স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা শওকত আলী দিদার নিহত হয়। এ ঘটনায় ১৭সেপ্টেম্বর নিহত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শওকত আলী দিদারের স্ত্রী রাবেয়া রহমান বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় ১১৭জনের নাম উল্লেখ ও ১হাজার ৫শত জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) দিবাগত রাতে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ জামাল মিয়াকে বাড়ি থেকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাকে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ পরদিন শনিবার (৯ নভেম্বর) জামাল মিয়াকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

আরবি/জেডআর

Link copied!