জনবল সংকটের পাশাপাশি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল হয়ে আছে নামেই ডিজিটাল টেলিফোন সেবা। জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার টেলিফোন এক্সচেঞ্জ (টিএনটি) ভবন সংস্কারের উদ্যোগ নেই। ভুতুড়ে পরিবেশে ঢিলেঢালা চলছে গ্রামাঞ্চলের টেলিফোন সেবা। সংশ্লিষ্টদের দাবি, পুরো কাজই ডিজিটাল ব্যবস্থায় হচ্ছে। প্রযুক্তির পরিবর্তন হওয়ার কারণে গ্রাহকের টেলিফোনে আগ্রহ কমেছে।
জানা গেছে, দুপচাঁচিয়া উপজেলায় টেলিফোনে ২৫০টি সংযোগ ছিল। এরমধ্যে অধিকাংশ গ্রাহকের বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অন্যদিকে পৌরসভার আরসিসি ড্রেনেজ নির্মাণের সময় টেলিফোন এক্সচেঞ্জের ডিজিটাল ফাইবার লাইন একাধিক জায়গায় ক্ষত হওয়ায় পুরাতন সংযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ২৫০ গ্রাহকের মধ্যে সচল আছে ৫১টি সংযোগ। অফিসে অভিযোগ না করলে সেবা মিলছে না বলে অভিযোগ করেন গ্রাহকেরা। টেলিফোন এক্সচেঞ্জটি বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) নামে পরিচালিত।
১৯৮৮ সালে দুপচাঁচিয়ায সদরে থাকা টেলিফোন ভবনের কার্যক্রম সরিয়ে তালোড়া সদরে নেওয়া হয়। এরপর থেকেই টেলিফোন সেবার মান মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করে। ১৯৯৮ সালে নতুন করে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবন নির্মাণ করলেও গ্রাহকদের সেবার মান বাড়াতে পারেনি কতৃপক্ষ। দুপচাঁচিয়া উপজেলা অফিসের পাশে একটি নতুন ডিজিটাল টেলিফোন ভবন রয়েছে। তবুও গ্রাহকেরা সংযোগ বিমুখ। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিটি উপজেলায় টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবন নতুন আঙ্গিকে তৈরি করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির বাস্তবে প্রতিফলন ঘটেনি।
এক সময়ের জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম ছিল টেলিফোন। যুগের পরিবর্তনে মোবাইল আসার পর থেকে কমতে শুরু করেছে টেলিফোন ব্যবহার। দুপচাঁচিয়ার এক্সচেঞ্জ (টিএনটি) জনবলের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে। দিন দিন টেলিফোনের চাহিদা কমার পাশাপাশি অফিস পাড়ার লোক সমাগম আর দেখা মেলে না। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অধিকাংশ সময় বিকল অবস্থায় থাকে সংযোগ।
গ্রাহক মিজানুর রহমান বলেন, নামেই ডিজিটাল, কিন্তু বাস্তবে বিকল। কয়েক মাস ধরে তার টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। অফিসে অভিযোগ না করলে সহজে চালু হয় না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টেলিফোন কল চার্জ বিলের কাগজ কোন মাসেই সময়মত আসেনি। ফলে জরিমানাসহ বিল পরিশোধ করতে হয়। এসব কারণে গ্রাহকরা নিজ উদ্যোগেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিচ্ছেন।
টেলিফোন এক্সচেঞ্জের দুই লাইনম্যান হারেজ উদ্দিন নয়ন ও রাসেল সারোয়ার জানান, পৌরসভা এলাকার আরসিসি ড্রেনেজ নির্মাণের সময় ডিজিটাল ফাইবার লাইন অনেক জায়গায় বিচ্ছিন্ন হয়েছে। টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনের পাশ দিয়ে আরসিসি ড্রেন নির্মাণের সময় পৌর কতৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে ফাইবার লাইনের বিষয়টি অবহিত করা হয়। আরসিসি ড্রেনেজ যে সাইড দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একই জায়গায় ডিজিটাল ফাইবার ক্যাবল বসানো রয়েছে। চিঠি দেওয়ার পরও পৌরসভা কতৃপক্ষের উদাসীনতায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়। লাইনম্যানদের দাবি, সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া লাইন নতুন করে দেওয়া যাচ্ছে না। টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনে জনবল না থাকায় দুইজন লাইনম্যান বিপাকে আছেন বলে জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনের প্রধান ফটকের সাইনবোর্ড গ্রাহকদের চোখে পড়েনা। ভবনের ভিতরে ভুতুড়ে পরিবেশে অফিস কক্ষ আর আবাসিক কক্ষ বুঝে ওঠা যায় না। জরাজীর্ণ ভবনে বাথরুমের অবস্থা একেবারেই নাজুক। টেলিফোন এক্সচেঞ্জ কার্যক্রমে গতি ফেরাতে জনবল বাড়ানোসহ ভবন সংস্থারের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট শফিউর রহমান শফিক জানান, তিনি গত সপ্তাহে যোগদান করেছেন। দুপচাঁচিয়া অফিসে গিয়ে সরেজমিনে দেখে সমস্যা সমাধানের জন্য কতৃপক্ষকে অবহিত করবেন।
আপনার মতামত লিখুন :