বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. শাহজাহান মিয়া, মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৪, ০৮:১২ পিএম

মৌলভীবাজারের সীমান্তে মাদক ও মানব পাচারে সক্রিয় কয়েকটি চক্র

মো. শাহজাহান মিয়া, মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৪, ০৮:১২ পিএম

মৌলভীবাজারের সীমান্তে মাদক ও মানব পাচারে সক্রিয় কয়েকটি চক্র

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মৌলভীবাজার জেলার কয়েকটি ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক ও মানব পাচারের শক্তিশালী কয়েকটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে। শরীফপুর, পৃত্থিমপাশা, কর্মধা, লাঠিটিলা সীমান্ত, ফুলতলা, সিন্দুর খান এই ছয় ইউনিয়নের মধ্যে চিহ্নিত স্পট লালারচক, দত্তগ্রাম, ইটারঘাট, আলীনগর, গণকিয়া মুরইছড়াসহ ৮-১০টি স্পট দিয়ে মূলত মাদক আদান ও মানব পাচার হয়ে থাকে। এসব স্পট দিয়ে ভারত থেকে অবাধে আসছে মাদকদ্রব্য। এ ছাড়া টাকার বিনিময়ে হচ্ছে মানব পাচার। ৬টি বিজিবি ক্যাম্প ও ১টি চেকপোস্ট থাকলেও এসব রোধে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন তৎপরতা নেই। ফলে মাদকদ্রব্য এখন হাত বাড়ালেই মিলছে জেলার কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল ও জুড়ির সীমান্তবর্তী বিভিন্ন হাট-বাজারে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই এসব স্পটে কারবারি ও মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। তাদের মাধ্যমেই দেশের বিভিন্ন
অঞ্চলে মাদকদ্রব্য ছড়িয়ে পড়ে।

জানা যায়, সীমান্ত এলাকাভিত্তিক ২০-২৫ জনের একটি শক্তিশালী চক্র রয়েছে যারা নেতৃস্থানীয় ও প্রশাসন ম্যানেজ করে এইসব করে যাচ্ছে। দেশের পট পরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে মানব পাচার কার্যক্রম চক্রটি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয় দালালরা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে উভয় দেশের পাসপোর্ট বিহীন মানুষকে কাঁটাতারের উপর দিয়ে পারাপার করছে। বিশেষ করে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের ও আওয়ামী লীগের অনেক দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীরা এ সীমান্ত গুলো দিয়ে রাতের আঁধারে পালিয়েছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশহর, মাগুরলী, লাটিউরা, রাঙ্গাউটি ও টিলাবাজার দিয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সহজেই পৌঁছা সম্ভব। শরীফপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্ত দিয়ে কিশোরী স্বর্ণা দাস বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় কয়েকদিন চক্রগুলো নিষক্রিয় থাকলেও এখন পুরোদমে সক্রিয়। তারা শরীফপুর, পৃত্থিমপাশা, কর্মধা, হাজীপুরের বিভিন্ন বাজার ও কুলাউড়ার দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ বাজার রবির বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছে মাদকের বিশাল সিন্ডিকেট। পাচারকারীরা নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে এইসব এলাকার একাধিক হাট-বাজারকে। তাছাড়া দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে গত ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতের ভিসা প্রাপ্তি অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যাওয়ায় সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশও বেড়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী কর্মধা, পৃত্থিমপাশা, শরীফপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তের ১৮৪২ থেকে ১৮৫১ নং আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাদক, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালান হয়। বর্তমানে ভিসা জটিলতায় ভারতে অবস্থানরত অনেক বাংলাদেশির নিকটাত্মীয়ও পূজায় ভারতে যেতে পারেনি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারিরা টাকার বিনিময়ে অনেককেই অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করাতে বেশ সক্রিয় ছিল। বর্তমান
পরিস্থিতিতে চোরাকারবারিরা মাদক ও অবৈধ অনুপ্রবেশ করাতে সীমান্তে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে রেখেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি
দিয়ে চোরাকারবারিরা এতটা বেপরোয়া যে কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে পারেন না। চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্যে সীমান্তবর্তী এলাকার নিরীহ অনেক পরিবার রয়েছেন আতঙ্কে। এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম দিয়ে বিদেশি মদ, ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, নাসির বিড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন পার্টস, পোশাক, মোটরযানের টায়ার-টিউব ইত্যাদি অবাধে আসছে। বর্তমানে দু’দেশের চোরাকারবারিরা ২০-২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। কর্মধা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ও পৃত্থিমপাশা ও শরীফপুর ইউনিয়নের মনু নদীর অবস্থানগত কারণে এসব এলাকায় যোগাযোগের করুণ অবস্থা ও ভৌগোলিক কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কর্তৃক ঠিকমতো এসব এলাকায় গিয়ে অভিযান চালাতে না পারার কারণে পাচারকারীরা মাদকদ্রব্য
নিয়ে অতি সহজে যাতায়াত করে থাকে। চোরাকারবারিরা এসব মাদকদ্রব্য সীমান্ত পার করে জেলার বিভিন্ন উপজেলার আশপাশের এলাকা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চালান পাচার করে থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীমান্ত এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, শরীফপুর ইউনিয়নের আলাল মিয়া, হাসিব মিয়া, হামজা, জিয়াউল হক, বাবুল, ফখর মিয়া, দুই সহোদর ওয়াছকুরুনি ও ফাজকুরুনি, রুমেল মিয়া, লাবিব, আবু তালিব, জিয়াউল, মোহাম্মদ আলী, সামছু, আলাউদ্দিন, তাজুল, সালাম, তমজিদ এরা সীমান্তে মানব পাচারসহ বিভিন্ন চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত। অনুসন্ধানে একাধিক সূত্র প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আর এদের নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ দু-একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এ ছাড়াও কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া নতুন বস্তির শাহীন মিয়া, ছায়েদ মিয়া, টাট্টিউলি গ্রামের আহাদ আলী, আসুক মিয়া ও পৃত্থিমপাশা ইউনিয়নের ধামুলী গ্রামের ছোবহান মিয়া, গণকিয়া এলাকার দুদু মিয়া দীর্ঘদিন থেকে সীমান্তে মাদকদ্রব্য, মানব পাচারসহ বিভিন্ন চোরাকারবারি পেশায় জড়িত রয়েছেন তাদের সাথে নতুনরা সংযোজন হচ্ছে।

মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন (পিপিএম) জানান, সীমান্তে মানব পাচার ও চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিশ জিরো টলারেন্স দেখাবে।
বিশেষ করে সীমান্তে কাঁটাতারের উপর দিয়ে অবৈধভাবে কোনো দুর্নীতিবাজ লোকজন ও সাধারণ জনগণ যাতে ওপারে যেতে না পারে সেজন্য বিজিবি’র পাশাপাশি
সীমান্তে পুলিশ পুরোদমে তৎপর।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল ৪৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সিকদার বলেন, সীমান্তে অনুপ্রবেশ, মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। তিনি স্থানীয়দের সহযোগিতা ও সচেতনতা কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং চিহ্নিত চোরাকারবারিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান।

আরবি/জেডআর

Link copied!