ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ধুলোর নগরী বুড়িমারী স্থলবন্দর, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কয়েক হাজার মানুষ

মিনহাজ পারভেজ, পাটগ্রাম

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৮:০৮ পিএম

ধুলোর নগরী বুড়িমারী স্থলবন্দর, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কয়েক হাজার মানুষ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দর যেন ধুলোর নগরী। চারদিক ধুলো আর ধুলো। ধুলোয় অতীষ্ঠ পথচারি, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, দেশ-বিদেশের পর্যটকসহ সর্বসাধারণ। দীর্ঘদিন ধরে ধুলোয় আচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাসকারীদের বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ স্থলবন্দরে দেশের বিভিন্ন স্থান হতে শত শত গাড়ি চলাচল করে। পাশাপাশি ভারত, ভুটান থেকে আসে পাথর, খাদ্যশস্যবাহী অসংখ্য গাড়ি। পথচারী, খেটে খাওয়া মানুষ, পর্যটক, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে এ ইউনিয়নের ২৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। চলার পথে ধুলা-বালি যেন এখানকার বসবাসরত জনসাধারনের নিত্যদিনের সঙ্গী। অপরিকল্পিত নগরায়ণ আর অবৈধ পাথর ভাঙার (ক্রাশার) মেশিনের ধুলোয় দূষিত হচ্ছে এ অঞ্চলের পরিবেশ। ধুলা-বালিতে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ সিলিকোসিস, এলার্জি ও ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে।

রাস্তা থেকে সৃষ্ট ধুলাবালিতে অতীষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। স্থলবন্দরে অবস্থিত বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষারর্থী মমিন ইসলাম বলেন, ‘স্কুল আসতে স্কুলের পোষাক (ইউনিফর্ম) ময়লা হয়। শ্বাসকষ্টসহ সর্দি-জ্বরে মাঝে মধ্যে অসুস্থ্য হয়ে পরি।’

আমানতুল্যা প্রধান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনির শিক্ষার্থী লিখন ইসলাম বলেন, ‘মাস্ক পরে হাঁটলেও ধুলা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই। ধুলাবালিতে স্কুলের পোষাক প্রতিদিন ধুয়ে দিতে হয়। ধুলার কারনে মাথাব্যাথা, চোঁখ জ্বালাপোড়া, সর্দিকাঁশি লেগেই থাকে।’

সফিয়ার রহমান রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র নুসরাত জাহান নাহিদ জানান, ‘ধুলাবালির কারনে স্কুলের রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। এজন্য আমরা পার্শ্ববর্তী রাস্তা ব্যবহার করি।’

বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল আলম খন্দকার বলেন, ‘এ বিদ্যালয়টি বুড়িমারী স্থলবন্দরের মাঝখানে হওয়ায় বিদ্যালয়ের চারদিকে পাথর ভাঙার (ক্রাশিং) মেশিনের বিকট শব্দ সাথে বালুর ব্যবসা, পাথরের ব্যবসা চলায় বিদ্যালয়ের শ্রেণি পাঠদানে বিঘ্ন ঘটে। পাথর ভাঙার যন্ত্রের (ক্রাশিং মেশিনের) শব্দে শিক্ষকরা ঠিকমতো পাঠদান দিতেও পারেন না। আর সবচেয়ে বেশি পরিবেশ দূষণ করছে ধুলাবালি। ছেলে-মেয়েরাও দিনদিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। স্কুলের ছেলে-মেয়েরাও সর্দি-কাশি, এ্যাজমা, হাপানির মতো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। ধুলাবালির কারনে বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিল সবকিছু মিলে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এই পরিবেশে স্কুল পরিচালনায় খুব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।’

বুড়িমারী স্থলবন্দরের বাসিন্দা লালমিয়া (৫৫) জানান, ‘স্থলবন্দরের বিভিন্ন সড়ক দিয়ে অটো, মাহিন্দ্রা, ট্রাক্টর ও পার্শবর্তী দেশ ভারত হয়ে আসা পাথর বোঝাই কয়েক হাজার ট্রাক চলাচল করে। সেই ধুলা-বালি দুই পাশের বিভিন্ন জায়গায় ২/৩ ফুট জমাট বেধেছে। শীতের মৌসুমে -এর মাত্রা যেন আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। সংস্কার ও দুই পাশের ধুলা অপসারণ না করার কারণে সড়কের প্রশস্ততা সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা’।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে বুড়িমারী স্থলবন্দরের সোনালী ব্যাংক সংলগ্ন (বাঁশকল) মোড়ে দাঁড়িয়ে ঢাকাগামী বাসের অপেক্ষা করছেন হোসেন আলী (৬৫)। একটি করে বাস-ট্রাক যাচ্ছে আর সড়কের আশপাশে থাকা যাত্রীসহ পথচারীরা চোখ-মুখ বন্ধ করে নাক চেপে থাকছেন। এছাড়াও স্থলবন্দরের জিরোপয়েন্ট, স্টেশন পাড়া, তেলপাম্প, উঁচু ব্রীজ, ঘুন্টি (আনন্দ বাজার) এলাকায় মিলল অনেকে মানুষের নাক মুখ চেপে ধরে চলাচলের দৃশ্য।

পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, ‘বালু-পাথর পরিবহনে যেসব যানবাহনে ধুলাবালির সৃষ্টি হয় ইতিমধ্যে পরিবেশ দূষণ যেন না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়াও বুড়িমারী স্থলবন্দরে অবৈধ যানবাহন বন্ধে খুব দ্রুত উপজেলা প্রশাসন হতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. জহির উদ্দিন বাবর জানান, ‘ধুলা-বালি হতে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পাথর ভাঙার শ্রমিকসহ সকলকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। সৃষ্ট ধুলাবালির কারনে শ্বাসকষ্টসহ এ্যাজমা জনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ 

আরবি/জেডআর

Link copied!