গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ বাতিলের পরপরই চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজে ও গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে প্রায় একমাস যাবত বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলা ও কর্মসূচির কারণে গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজে অনির্দিষ্ট কালের জন্য শিক্ষা কর্যিক্রম বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
অপরদিকে গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজে এডহক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এক পক্ষ কলেজের মূল ফটক ও শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ফলে বছরের শেষ প্রান্তে এসে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অনিশ্চয়তার মুখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সেনা বাহিনী কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়ার সহধর্মিণী ডা. আনোয়ারা হককে গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজে এডহক কমিটির সভাপতি গোপনে মনোনীত করা, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের গৌরি রানী সাহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে রোববার (১৭ নভেম্বর) সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বিএনপির একটি অংশ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
এসময় বিক্ষুব্ধদের হাতে কলেজ শিক্ষক লাঞ্ছিত ও কলেজের সিসিটিভি ক্যামেরার যন্ত্রাংশ, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বের করে দিয়ে তার কক্ষে তালা মেরে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকালে কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কলেজ গেটে তালা বন্ধ করে আন্দোলন করে। একই সময়ে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটি অংশ শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এসময় তাদের মধ্যে কয়েক দফায় হাতাহাতি হয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতি কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ এবং পরবর্তীতে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজের পাঠদান অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রেখেছে।
অপরদিকে, গত ৬ নভেম্বর স্থানীয় বিএনপি নেতা মাহবুব মোরশেদ কচিকে সভাপতি ও কলেজ অধ্যক্ষ হরিপদ দাসকে সদস্য সচীব করে তিন সদস্য বিশিষ্ট গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজে এডহক কমিটি ঘোষণা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বিএনপির অপর একটি গ্রুপের নেতা ডাক্তর আবুল কালাম আজাদও তার অনুসারিরা।
গত ১৭ নভেম্বর রবিবার এডহক কমিটির সভাপতি মাহবুব মোরশেদ কচি সভা করার ঘোষণা দিলে আজাদের লোকজন কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এই নিয়ে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে উপজেলা প্রশাসন কচিকে ইউএনও অফিসে আসতে বলে। কচি উপজেলা পরিষদে প্রবেশকালে আজাদের লোকজন সেখানে তাকে প্রবেশ করতে না দিয়ে তাকে তুলে নিতে চায়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে মাহবুব মোরশেদ কচি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে এসে ডাক্তার আজাদ গ্রুপ তাকে অপহরণের চেষ্টা করেছে দাবী করে সংবাদ সম্মেলন করেন।
এদিকে বিএনপি নেতা এমএ হান্নান ও সাবেক এমপি লায়ন হারুনুর রশিদ গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কঠোর অবস্থান এবং তাদের মারমুখি পরিস্থিতিতে কলেজের শিক্ষকরা তাদের ও শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা চিন্তা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়। উপজেলায় স্বনামধন্য দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ হওয়ার খবরে অভিভাবক ও সচেতন মহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পাঠদান না করতে পারলে শিক্ষার্থীদের বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাবে বলে অনেকেই বিষয়টি দ্রুত শান্তিপূর্ণ সমাধানের দাবি জানান।
শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে কথা হয় গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হারুনুর রশিদ ও গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) গৌরি রানী সাহার সাথে। তারা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা আপাতত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন এই বিষয়ে জানান, আমি বিষয়টি জেনেছি। এটি খবুই দুঃখজনক। এই ধরণের কলেজগুলোর কমিটি যেহেতু জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় দেখেন। আমি তাদের বলছি আপনার কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমে বেঘাত সৃষ্টি না করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করেন। কোন অভিযোগ থাকলে আইনি সহযোগিতা নিতে পারেন। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা অবশ্যই কঠোর অবস্থানে আছি।
আপনার মতামত লিখুন :