ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
দখল ও দুষণ থেমে নেই

অস্তিত্ব সঙ্কটে কক্সবাজারের ঈদগাঁও নদী

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন,  কক্সবাজার

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৪, ১১:১১ পিএম

অস্তিত্ব সঙ্কটে কক্সবাজারের ঈদগাঁও নদী

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ঈদগাঁও নদী দিন দিন অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ছে। নদীটি একদিকে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে, অন্যদিকে নদীর জমি ভূমিদুস্যদের দখলে চলে যাচ্ছে। দখল ও দূষণে পড়ায় নদীটি দিনদিন সংকীর্ণ হচ্ছে। স্থানে স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে চলেছে বালুখেকো চক্র। 

দেশের পুর্বদক্ষিণ সীমান্তবর্তী অঞ্চল বান্দরবানের মৈভার (মৈন পাহাড়) পর্বতশৃঙ্গ থেকে সৃষ্ট ঈদগাঁও নদী প্রায় ৪২ কি.মি পাহাড়ি ও সমভূমি পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।

বান্দরবান পার্বত্য জেলার  নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী, কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া-ঈদগড়, ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ, পোকখালী ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমে মহেশখালী চ্যানেলে গিয়ে মিশেছে।

এসব অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ঈদগাঁও নদীর দু‍‍`পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা, সভ্যতার ক্রমবিকাশ ও সমৃদ্ধি সর্বাংশে এই নদীর উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠে। এই দীর্ঘ পথে নদীর দুপারে তৈরী হয়েছে বিস্তীর্ণ পলি ও পলি দো-আশঁ মাটির উর্বর প্লাবণ সমভূমি। যা এই অঞ্চলের ৫ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর কৃষিপ্রধান গ্রামীণ অর্থনীতিতে এনেছে স্বনির্ভর সচ্ছলতা আর সমৃদ্ধি। এই এলাকার কৃষকরা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় রাখছে অনন্য ভূমিকা।

কালক্রমে ঈদগাঁও জনপদে এই নদী নিজেই মরাখালে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃহত্তম বাণিজ্যিক উপশহর ঈদগাঁও বাজার, ঈদগাঁও বাস-স্টেশন ও আশপাশ এলাকার পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এই নদীতে। ফলে দুষিত হচ্ছে নদীর পানি, হারিয়ে যাচ্ছে নদীর প্রাণবৈচিত্র্যতা। 

নদীতীর ভরাট ও দখলের ফলে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে নদীর প্রশস্ততা। এতে নদীর পানিধারণ ক্ষমতা আশঙ্কা জনক ভাবে কমে যাচ্ছে। যা প্রতি বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও নদীভাঙনের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয় নদীর তীরবর্তী গ্রাম ও ফসলী জমি।

ঈদগাঁও নদীর উত্তর পারের (কবি মুহম্মদ নূরুল সড়ক), ঈদগাহ জাহানারা বালিকা বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী পয়েন্টে নদীর উত্তর পারে বর্জ্যের স্তুপ। যার মধ্যে অধিকাংশই অপচনশীল পলিথিন ও মেডিক্যাল বর্জ্য।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতিদিন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রাতের আধাঁরে ওই নদীর বাশঁঘাটা সেতু ও বাসস্টেশন সেতু পয়েন্ট দিয়ে ফেলছে মুরগী খামারের বর্জ্য, ফল ও তরকারী বর্জ্য, মাছ ও মুরগী কাটা উচ্ছিষ্ট বর্জ্য, হোটেল রেস্তোরাঁর বর্জ্যসহ গৃহাস্তালি বর্জ্য।

নদীতীরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা অধিকাংশ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের মানব বর্জ্যে পাইপলাইনের মাধ্যমে ফেলা হচ্ছে নদীতে। এতে নদীর পানি দূষিত হয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ওমর ফারুক, নাসির উদ্দীন পিন্টুসহ অনেকে জানান, চলতি শুষ্ক মৌসুমে ২০/৩০টি স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অনিয়ন্ত্রিত ও নিয়মবিরুদ্ধ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে করে নদীর বাস্তসংস্থান ধ্বংস হচ্ছে। নদীর অভ্যন্তরে তৈরী হচ্ছে গভীরখাদ, চোরাবালি। এতে ঈদগাঁও নদী প্রতিবেশ সংকটের মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি ঐতিহ্য হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে। মানুষের জীবন ও জীবিকা, কৃষি, যোগাযোগ ও অর্থনীতির সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত নদীটি অস্তিত্ব আজ বিলীন হওয়ার পথে বলে জানান তারা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি কলিম উল্লাহ বলেন, ঈদগাঁও নদী জেলার বৈচিত্র্যময় একটি নদী। এভাবে একটি নদীকে অস্তিত্ব সঙ্কটে ঠেলে দেয়া দেশের পরিবেশ আইন, নদী রক্ষা আইনের সরাসরি বরখেলাপ এবং জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃত নদীকে হত্যা করার সামিল।

নদী দখলে জড়িত ও তালিকাভুক্ত ঈদগাঁওর ১৭জন ব্যক্তি। তবে, বাস্তবে প্রকৃত দখলদারের সংখ্যা বাস্তবে আরও বেশি। এই সব অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসন এ পর্যন্ত কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় দখলদারের সংখ্যাও বাড়ছে দিনদিন।

আরবি/জেডআর

Link copied!