দীর্ঘ দশ বছর ধরে নীলফামারীর পঞ্চপুকুর সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার এক কর্মচারী নয়-ছয় ও ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে চাকরি করছেন। অভিযোগ উঠেছে তৎকালীন মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হামিদুল ইসলাম মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নয়-ছয় ও ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে ২০১৪ সালে জামাত আলীকে নিয়োগ প্রদান করেন। ভুয়া কাগজপত্র দিয়েই অধ্যক্ষ তার ইনডেক্স তৈরিতে সহায়তা করেন এবং এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রতিমাসেই তুলছেন বেতন-ভাতা।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, তার প্রকৃত নাম জামাত আলী। চাকরি নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে জামান আলী উল্লেখ করেন। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম-নিবন্ধনে তার নাম রয়েছে জামাত আলী। এমনকি তার এলাকার স্থানীয়রাও তাকে জামাত আলী হিসেবেই চিনেন। চাকরি নেওয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম-নিবন্ধন ইডিট করে জমা দেন। কিন্তু অনলাইনে সার্চ দিয়ে দেখা যায় সেখানে তার নাম জামাত আলীই রয়েছে। চাকরিতে প্রবেশের জন্য অষ্টম শ্রেণী পাশের যে সার্টিফিকেট তিনি প্রদান করেন সেটিও ভুয়া।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, পঞ্চপুকুরের দারুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভর্তি রেজিষ্টারেও তার নাম উল্লেখ রয়েছে জামাত আলী। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া অষ্টম শ্রেণী পাশের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রে নাম উল্লেখ করা হয় জামান আলী। এছাড়াও দেখা যায় ওই বিদ্যালয়ে জামাত আলী ১৯৯৭ সালে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হলেও সপ্তম শ্রেণী না পড়েই তাকে ১৯৯৮ সালে তাকে অষ্টম শ্রেণী পাশের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র দেওয়া হয়। তার জাতীয় পরিচয় পত্রে ১৯৭২, জন্মনিবন্ধনে ১৯৮৪ এবং বিদ্যালয়ের ভর্তি রেজিষ্টারে ১৯৮৩ জন্মসাল রয়েছে।
দারুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয়ের উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন বলেন,‘আমাদের বিদ্যালয়ের ভর্তি রেজিষ্টারে তার নাম রয়েছে জামাত আলী। সে ১৯৯৭ সালে অত্র প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। আমি কিছুদিন হলো ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। সেসময় জামান আলী নাম দিয়ে ১৯৯৮ সালে অষ্টম শ্রেণী পাশের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ কিভাবে তাকে প্রদান করেন সে বিষয়ে আমি বলতে পারবো না।’
ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে চাকরি নেওয়ার বিষয়ে জামাত আলীর সঙ্গে একাধিকবার মাদ্রাসায়, তার বাড়ীতে এবং মুঠোফোনে যোগযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি। অভিযোগের বিষয়ে পঞ্চপুকুর সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামানের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি তালবাহানা করে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গভর্নিং বডির সভাপতি আশরাফুল হক বলেন,‘ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিয়েছে স্থানীয়রা। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে চাকরি করার সুযোগ নেই। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে তাকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নেওয়া সব বেতন ফেরত দিতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :