ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

স্বাধীনতার ৫৩ বছরে পাটকেলঘাটা বাজার আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি

আব্দুল মোমিন, পাটকেলঘাটা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৪, ০৩:২০ পিএম

স্বাধীনতার ৫৩ বছরে পাটকেলঘাটা বাজার আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর ও সাতক্ষীরা জেলার  ঐতিহ্য পাটকেলঘাটা বাজার আধুনিকতার উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত। পাটকেলঘাটা বাজার থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হলেও পাটকেলঘাটা বাজারের অধিকাংশ দোকান পাট গুলো রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। পাটকেলঘাটা বাজারের অধিকাংশ জায়গা সরকারি পেরিফেরি ভুক্ত হাওয়ার ফলে অধিকাংশ দোকানদাররা দোকানের ভাঙ্গাচুড়া টিনের ছাউনি দিয়ে রাখেছে। ইচ্ছা থাকলেও ইটের দ্বিতীয় তালা দিতে পারে না। যার কারনে বাজারটি এই ডিজিটাল যুগে এসেও মানদাত্তের আমলের মতন এখনো দোকানের অবকাঠামো গুলো জরাজীর্ণ অবস্থায রয়েছে।

জানা যায়, পাটকেলঘাটা বাজারের পাশে কপোতাক্ষ নদ  প্রবাহিত হওয়ায় নৌ-পথের কারণে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ব্যবসা বাণিজ্য করার জন্য নদী পথে নৌকা, লঞ্চে ও বড় বড় কার্গো এনে এখানে ঘাটে এসে ভিড় করত। সেখান থেকে নাকি অনেকেই বলে থাকেন পাটকেলঘাটার উৎপত্তি। 

অন্যদিকে আবার কেউ কেউ বলেন, পাটকেলঘাটা বাজারের পাশে পাটকেলেশ্বরী কালিবাড়ি হওয়ায় সেখান থেকে নাকি পাটকেল ও পাশে লঞ্চ ও নৌকা ঘাটের কারনে পাটকেলঘাটা নামকরণ উৎপত্তি হয়েছে। এদিকে কপোতাক্ষ নদের কারণে নদী পথে  যেকোনো পণ্যবাহী মাল আনা নেওয়ার খরচ কম হওয়ার কারণে পাটকেলঘাটা বাজারটি ব্যবসায়িক ভাবে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করে  চারিদিকে অল্পদিনেই বাজারের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। দূর দুরান্ত থেকে নদীপথে লোকজন এসে বাজার থেকে পাইকারি ও খুচরা  মাল কেনাবেচা করতো। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হলেও পাটকেলঘাটা বাজার আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে বিভিন্ন ভাবে বঞ্চিত। কালের বিবর্তমনে পাটকেলঘাটা বাজারটি তার সুনামসহ সবকিছু  হারাতে বসেছে। 

সরজমিনে দেখা যায়, স্থলপথ ভালো হওয়ার কারণে এখন আর নদী পথে কোন ক্রেতা পাটকেলঘাটা বাজারে প্রবেশ করে না সবাই এখন আসে স্থলপথেকিন্তু পাটকেলঘাটা বাজারের ভিতরে ঢোকার রাস্তা গুলি দীর্ঘদিন সংস্কার না করার ফলে ইটের ছলিং উঠে বড় বড় গর্ত  হয়ে পানি জমে আছে।

সরজমিনে দেখা যায়, পাটকেলঘাটা পশ্চিমপাড়া মোড় থেকে গরু হাটখোলা পর্যন্ত রাস্তাটি ইটের খোয়া উঠে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে সেখানে পানি জমে আছে। এলাকাসহ বাইরে থেকে আসা লোকজনের বাজারে আসা-যাওয়ার অসুবিধা হলেও সেদিকে কারো কোন নজর নেই অপরদিকে পাটকেলঘাটা বাজারের মেনরোড গাড়ির কারণে ও মানুষের ভিড়ে গেদারিং হওয়ার ফলে পাটকেলঘাটা হারুন অর রশিদ কলেজের পিছন দিয়ে বাইগুনি গ্রামের ভেতর দিয়ে লোকজন যাতায়াত করলে ও সেখানেও পানি সরানোর কালবাটটি দীর্ঘদিন যাবত রয়েছে ভাঙ্গা যেন দেখার কেউ নাই। শুধু তাই নয় পাটকেলঘাটা বাজারে ভিতরে প্রবেশদ্বার অন্য দুটি পথ পাটকেলঘাটা বল ফিল্ড রাস্তা মজুমদার তেল পাম্পের পিছনের রাস্তা বড় বড় গর্ত হয়ে জনসাধারণের যাতায়াতের দারুন বিঘ্ন ঘটছে। অনেক সময় পণ্য বোঝাই ভ্যান  উল্টে যাচ্ছে। কোন কোন জায়গায় স্থানীয় লোকজনের সাইকেল-মোটরসাইকেল ভ্যান থেকে নেমে ঠেলে নিয়ে বাজারের ভিতরে প্রবেশ করতে হচ্ছে। বর্তমানে পাটকেলঘাটা বাজারটি হাজারো সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কপোতাক্ষ নদের জলবদ্ধতা, পানি নিষ্কাশনের জন্য বাজারের ভিতরে সবখানে নেই  ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বাজারের ভিতরে কিছু এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো দেখভাল করার অভাবে ময়লা ও মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বিভিন্ন সরকারের পালা-বদল হলেও পাটকেলঘাটা বাজারে তেমন কোন দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখা যায় নি। 

জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে এখনো পর্যন্ত পাটকেলঘাটার অবস্থিত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সরকারিকরণ করা হয়নি। জানা যায়, ১৯৬৮-৬৯ সালে পাটকেলঘাটা নদীর উপর নির্মিত হয় পাটকেলঘাটা কপোতাক্ষ সেতু। এ সেতু উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান। তাছাড়া পাটকেলঘাটায় অবস্থিত ইতিহাস ঐতিহ্য এর নিরব সাক্ষী পাটকেলঘাটা ফুটবল ময়দান এখানে বাংলাদেশের প্রায় সকল রাষ্ট্র নায়ক জনসভা করেছেন। ১৯৬২ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান এখানে জনসভা করেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই মাঠে জনসভা করেন। শুধু তাই নয় পাটকেলঘাটা কপোতাক্ষ নদের  তীরে ২০১৭ সালের ১ লা নভেম্বর নীলিমা ইকো পার্ক গড়ে ওঠে যেটি উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। পার্কটি তৈরি করার পিছনে সার্বিক সহযোগিতা করেন তালা উপজেলা সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফরিদ হোসেন ও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রূপদান করেন সাবেক সরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান। কিন্তু সেটি ও ২০২২ সালে ইউনিয়ন পরিষদের নতুন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই মাস্টার আসার পরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আজ উক্ত পার্কটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ইতিমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পার্কটির নৌকা ও লঞ্চ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। পার্কের রক্ষণাবেক্ষণের বেড়াসহ সকল কিছু নষ্ট হয়ে গেছে যেন দেখার কেউ নাই। পাটকেলঘাটায় উল্লেখযোগ্য অফিস আদালতের ভিতরে গড়ে উঠেছে পাটকেলঘাটার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে প্রশাসনিক থানা, রয়েছে জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, সোশাল ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা। আরো গড়ে উঠেছে উপজেলা ভূমি অফিস ইউনিয়ন তহসিল অফিস সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও অসংখ্য বীমা, বিভিন্ন এনজিও অফিস। আর হসপিটাল এর ভিতরে গড়ে উঠেছে পার কুমিরা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পপুলার ক্লিনিক এন্ড নার্সিং হোম, সেবা ডায়গনস্টিক সেন্টার, লোকনাথ নার্সিংহোম, মৌসুমি ক্লিনিক স্বাগতা ক্লিনিক, ডক্টরস ক্লিনিক। 

এছাড়া স্কুল কলেজের ভিতরে গড়ে উঠেছে পাটকেলঘাটা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, আমিনুরনেসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুমিরা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুমিরা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়, পাটকেলঘাটা সিদ্দিকিয়া কওমিয়া মাদ্রাসা, পাটকেলঘাটা  আল আমিন ফাজিল মাদ্রাসা, পাটকেলঘাটা হারুন অর রশিদ কলেজ, পাটকেলঘাটা মহিলা কলেজ সহ অসংখ্য প্রাইমারি ও কিন্ডার গার্ডেন স্কুল এত কিছু থাকা সত্ত্বেও পাটকেলঘাটার  প্রাণ কেন্দ্র  বাজার টি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় জর্জরিত। এদিকে একটি কুচক্রী মহল দ্বারা স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশ আমল থেকে পাটকেলঘাটা থানায় অবস্থিত ভূমি অফিসটি উপজেলার অন্য জায়গায় স্থানান্তর করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এটি যাতে পাটকেলঘাটা থেকে সরানো না হয় সে সকল উদ্যোগ নিয়ে পাটকেলঘাটা ১০১ সদস্য পাটকেলঘাটা উন্নয়ন কমিটির তত্ত্ববোধনে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে পাটকেলঘাটা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি তালা উপজেলা বিএনপি সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফার কাছে জানতে চাইলে তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমরা জন্মগ্রহণ করে দেখছি পাটকেলঘাটা বাজারে  ভূমি অফিসটির অবস্থান সেটি এখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে আমরা কোনভাবেই সেটা হতে দেব না প্রয়োজন হলে পাটকেলঘাটা বাজার ও মহাসড়ক অবরোধ করে রাখা হবে এবং কঠিন থেকে কঠিন আন্দোলন করা হবে। কিন্তু কোনভাবেই এখান থেকে ভূমি অফিসটি সরাতে দেবো না।

অপরদিকে পাটকেলঘাটা বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ সরদার এর কাছে বাজার উন্নয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী পাটকেলঘাটা বাজারটি দীর্ঘদিন অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে আমরা বিগত সরকারের এমপি মহোদয়ের নিকট রাস্তার উন্নয়ন বাজার উন্নয়নের লিখিত এবং মৌখিকভাবে বলে আসলেও তারা কেউ সেদিকে নজর না দেয়ায় পাটকেলঘাটা বাজারটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বাজারের ভিতরে প্রবেশদ্বার অধিকাংশ রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারটি আস্তে আস্তে ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ছে। আমি আশা করব বর্তমান সরকার আমাদের বাজারটি দিকে একটু নজর দেবেন তাহলে আমরা বাজারে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবো। 

পাটকেলঘাটা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাসুদ আল মুন্না বলেন, বাজারে আগে যে কেনাবেচা হতো বর্তমানে বাজারে ভিতরে ঢোকার রাস্তাঘাট ভালো না থাকায় এখন আর দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসতে চায় না এজন্য  আমাদের কেনাবেচা অনেক কমে গেছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!