ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারত সীমান্তবর্তী কসবা উপজেলায় পাহাড় কেটে মাটি সাবাড় করার ঘটনা নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালীরা দাপুটে ব্যক্তিদের ছত্র ছায়ায় পরিবেশ ও প্রকৃতিকে হুমকীর মুখে ফেলে পাহাড় কেটে মাটি লুটে নিয়েছেন নির্বিচারে। দিনে-দুপুরে তো রয়েছে গভীর রাঁতের আঁধারেও চলত ভেকু মেশিন দিয়ে পাহাড় কাটার কাজ। তবে এসবের নেপথ্যে কারা কলকাঠি নেড়েছেন তা এতদিন জেনেও ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাননি স্থানীয় গ্রামবাসী। তবে চলমান পরিস্থিতিতে মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সীমান্তবর্তী গোপীনাথপুর ও বায়েক ইউনিয়নে গত এক বছরে ১৫টির বেশি ছোট-বড় পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। এসব ঘটনায় অন্তত ১০টি মামলা হয়েছে। তবে কোনো মামলায় পাহাড় কাটার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তির নাম আসেনি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্থানীয় লোকজন বলেছেন, এসব পাহাড় কাটার নেপথ্যে ছিলেন সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের ব্যক্তিগত সহকারী আলাউদ্দিন বাবুর ভগ্নিপতি স্কুলশিক্ষক আমজাদ হোসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা এসব পাহাড়ের মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন। তখন তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস ছিল না কারও।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোপীনাথপুর ইউনিয়নের পাথারিয়াদ্বার, কাজীয়াঠুলি (কাইজ্জামুড়ি), মাণিক্যমুড়ি ও মধুপুর এলাকার বড় বড় পাহাড় সবচেয়ে বেশি কাটা হয়েছে। রাতে খননযন্ত্র (ভেকু) দিয়ে এসব পাহাড় কাটা হতো। পরে ট্রাকে করে মাটি বিক্রি করা হতো ইটভাটায়। আবার অনেকে পুকুর, গর্ত বা বাড়ি করার জন্যও এসব মাটি কিনতেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, কসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আমজাদ হোসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এসব পাহাড় কাটার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। সরকার পতনের পর থেকে তাঁরা পলাতক।
স্থানীয় রাসেল মিয়া ও হৃদয় মিয়া বলেন, আমজাদ হোসেন কসবার পাহাড়ের মাটি বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পাহাড় কাটার ঘটনায় যেসব মামলা হয়েছে, তার কোনোটিতে আমজাদ হোসেনের নাম নেই। ফলে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে তিনি।
‘তরী বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক শামিম আহমেদ জানান, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড় জরুরি। অথচ চোখের সামনে কসবায় একের পর এক পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে; যা খুবই দুঃখজনক। এ ধরণের কর্মকান্ড প্রতিরোধে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চন্ডিদার সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড় কাটা বন্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেছি। একাধিক মামলাও হয়েছে। এসব ঘটনার নেপথ্যে আমজাদ মাষ্টারের নাম বার বার সামনে আসলেও তাকে কখনো ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। তাই তাকে আসামি করা যায়নি।’ আমরা তৎপর রয়েছি। পাহাড় কাটা রোধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নয়ন মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি তা ধরেননি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল্লাহ্ আল মামুন জানান, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু দুর্গম এলাকা হওয়ায় সেখানে মূল অপরাধীকে পাওয়া যায় না। যাদের পাওয়া গেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
এলাকায় না থাকলেও ফোন করা হলে আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমি শিক্ষকতা করি। এসব পাহাড় কাটার সঙ্গে আমি কোনোভাবেই জড়িত না।’
শিক্ষক আমজাদের স্কুলে অনুপস্থিতির ব্যাপারে কসবা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তুহিন কান্তি দাস বলেন, আমজাদ হোসেন কসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। এখন পর্যন্ত দুবার মেডিকেল লিভ দেখিয়ে ছুটিতে আছেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :