কুমিল্লা ইপিজেডের সার্বিক অগ্রগতি ও কেন্দ্রীয় তরল বর্জ্য শোধানাগারের কার্যক্রম নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় ইপিজেডের বেপজা জোন অফিসের মিলনায়তনে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, কুমিল্লা ইপিজেড এর নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব। তিনি জানান, কুমিল্লা ইপিজেড ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে উৎপাদনরত শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৬টি। উৎপাদনের অপেক্ষারত শিল্প প্রতিষ্ঠান আরো ছয়টি। এখানে বিদেশী বিনিয়োগকৃত দেশের সংখ্যা ১৪টি। আর প্রতিষ্ঠার পর মোট বিনিয়োগ হয়েছে ৫৯৩ মিলিয়ন ডলার। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আয় এসেছে ৭১১ মিলিয়ন ডলার আর প্রতিষ্ঠার পর পুঞ্জিভূত রপ্তানি আয় ৬৩৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি আরও জানান, কুমিল্লা ইপিজেডে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ৫০ হাজার মানুষের, যার ৬৬ শতাংশ নারী। এতে করে নারীর দক্ষতা ও ক্ষমতায়নে কুমিল্লা ইপিজেড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া কুমিল্লা ইপিজেডে ২৭০জন বিদেশী নাগরিক চাকরি করছেন বলেও জানান তিনি।
আবদুল্লাহ আল মাহবুব আরো বলেন, ৫০ হাজার শ্রমিকের বাইরে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার জন লোক নির্মাণ শ্রমিক, লোডিং আনলোডিং লেবার, ওয়েস্টেজ বা গার্ভেজ লেবার, পরিবহন শ্রমিক হিসেবে দৈনিক চুক্তিভিত্তিক কাজ করে যাচ্ছে। প্রতি মাসে শ্রমিক-কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা বাবদ ইপিজেডের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করেন। ইপিজেড কেন্দ্রিক প্রদান করা এসব অর্থ কুমিল্লা স্থানীয় অর্থনীতিসহ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মদ রাজিব, মেসার্স সিগমা ইকো টেক লিমিটেডের পরিচালক অপারেশন ব্রি. জে. (অব.) মির্জা মো: মনজুর কাদির, বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এএসএম আনোয়ার পারভেজ, কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী এনামুল হক ফারুক, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান, সাবেক সভাপতি মো: লুৎফুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সায়্যিদ মোহাম্মদ পারভেজ, দৈনিক আমাদের এর কুমিল্লার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শাহজাদা এমরান প্রমূখ।
পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মদ রাজিব জানান, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ২৪ ঘন্টা প্যারামিটার দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া বছরে চারবার বর্জ্যের নমুনা পরীক্ষা করা হয় এবং মাঝে মাঝে ঝটিকা পরিদর্শনও করা হয়। এছাড়া আইপি ক্যামেরা দ্বারা সিইপিটির অপারেশনাল কার্যক্রম, প্যারামিটার ও সেন্সরসহ ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে বলেও জানান তিনি।
মেসার্স সিগমা ইকো টেক লিমিটেডের পরিচালক অপারেশন ব্রি. জে. (অব.) মির্জা মো: মনজুর কাদির বলেন, ইপিজেডের সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের অপরিশোধিত তরল বর্জ্য সিইপিটির নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। এই চ্যানেলের বাইরে ইপিজেডের বর্জ্য বাহিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য মিশ্রিত পানি দুটি ড্রেনের মাধ্যমে আমাদের বর্জ্যের সাথে আউটলাইনে এসে মিশে যায়। তাছাড়া, যেসব ড্রেন বা খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়, সেগুলো খনন করা হচ্ছেনা বলেই পানি আটকে দুর্গন্ধ তৈরি হচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, ইপিজেড এর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী মো: ফারুক হাসান খান, অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক মো: জিয়াউল হাসানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ।
সভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধানাগার (সিইপিটি) এর অপারেশনাল কার্যক্রম ঘুরিয়ে দেখানো হয়। সেখানে কিভাবে বিভিন্ন কারখানার কেমিক্যাল যুক্ত কালো পানি ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে দূষণমুক্ত পানিতে রূপান্তর করা হয় সেটা তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে জীব বৈচিত্র ও পরিবেশ রক্ষায় ইপিজেডের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরা হয়। তাছাড়া পরিশোধিত পানি দ্বারা ইপিজেড এর ভেতর উৎপাদিত বিভিন্ন শাক সবজির বাগান ও ফসল প্রদর্শন করা হয়। শুধু তাই নয়, যেসব খাল দিয়ে ইপিজেড এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকার বর্জ্য অপসারিত হয় সেগুলো খননেরও দাবি জানানো হয় এই সভায়।
প্রসঙ্গত, ইপিজেডের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর তরল বর্জ্য এর পাশাপাশি সুয়ারেজ বর্জ্য পরিশোধন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং পরিদর্শনের জন্য ইপিজেড কর্তৃপক্ষ সার্ভিস ওরিয়েন্টেড কোম্পানি মেসার্স সিগমা ইকো-টেক লিমিটেডের সাথে ২০১১ সালে চুক্তি সম্পাদন করে। তারপর থেকে ইপিজেড এর সকল তরল বর্জ্য এবং সুয়ারেজ বর্জ্য নেটওয়ার্ট পদ্ধতিতে সংগ্রহ করে সিইপিটির মাধ্যমে পরিশোধন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
আপনার মতামত লিখুন :